You are currently viewing রামাদানের ২৪ ঘন্টা কিভাবে কাটাবেন?

রামাদানের ২৪ ঘন্টা কিভাবে কাটাবেন?

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার সম্মুখে আমার প্রসংগ উত্থাপিত হল অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করল না। অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার জন্য রমযান মাস এলো এবং তার জন্য মাগফিরাতের ফয়সালা না হতেই তা চলেও গেলো। অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার পিতামাতা উভয়কে অথবা যে কোন একজনকে তাদের বার্ধ্যকের অবস্থায় পেলো অথচ সে তাদের খিদমত ও সন্তুষ্টির মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করতে পারলো না

 

প্রিয় ভাই ও বোন! তাকওয়া আর আত্ম সংযমের মাস মাহে রামাদান।এ মাসে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করেন, দোয়া গুলো কবুল করে নেন। এবং আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি  অযোর ধারায়  রহমত বর্ষণ করেন। রামাদানের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর রহমত এবং ক্ষমায় পরিবেষ্টিত থাকে। এ মাসে প্রতিটি সময় গুরুত্বপূর্ণ।

 

প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোযার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ রোযার বিষয়ে আছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এক অনন্য ঘোষণা।

 

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

 

মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৪); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৬৩৮

 

অন্য আরেক বর্ণনায় আছে-

 

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে, রোযা আমার জন্যই, আমি নিজেই তার পুরস্কার দিব আর (অন্যান্য) নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে তার দশগুণ।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৯৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৯৯৯; মুয়াত্তা মালেক ১/৩১০

 

প্রিয় ভাই ও বোন আমরা আমাদের আজকের আলচনায়, আমি আপনাদের রমজানের প্রতিদিনের  আমল নিয়ে  সংক্ষেপে কয়েকটি নির্দেশনা,ও পরামর্শ দিয়ে আজকের আলোচনা শেষ করবো ইনশাআল্লাহ।আল্লাহ  আমাদের  পুরো আলোচনা শোনার  তাওফিক দান করুক।

 

প্রিয় ভাই বোন রমজানে আমরা গুরুত্বের সাথে কয়েকটি বিষয় বেশি বেশি আমল করার চেষ্টা করবো।

তার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে।

 

• ভাইয়েরা ৫ ওয়াক্ত  সালাত জামায়াতের সাথে গুরুত্ব সহকারে পড়বেন । বোনেরা আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করবেন।

 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘…নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! ৩টি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ -(তিরমিজি ১/২০৬)

 

•ফরজ  ইবাদতের পাশাপাশি নফল  ও সুন্নত নামাজের  বিষয়ে বেশি বেশি গুরুত্ব দেয়া।

 

কোনো অবস্থায় তারাবির সালাত পরিত্যাগ না করা।

রাতের কিছু অংশ  তাহাজ্জুদ আদায় করা।তাহাজ্জুতের জন্য প্রয়োজনে এলার্ম দিয়ে রাখা, সেহরির কিছু সময় আগে উঠে দুই অথবা চার রাকাত তাহাজ্জুতের  নামাজ আদায় করা, নামাজ শেষে দিল খুলে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করা, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, প্রিয় মানুষগুলোর জন্য, সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণের  দোয়া করা । মনে রাখবেন তাহাজ্জুদ আপনাকে সম্মানিত করবে,তাহাজ্জুদ এবং রমজান একই সাথে দোয়া কবুল হয়।

 

• কুরআন তেলাওয়াতে মনোযোগী হওয়া,সম্ভব হলে  পুরো কুরআন খতম করা। যাঁরা তেলাওয়াত করতে পারেন না, তারা আশেপাশে কোন মুয়াল্লিম  এর কাছে গিয়ে এ সুযোগে কোরআন শিখে নেয়া।

 

• বেশি বেশি সাদাকাহ করা।প্রতিদিন সামান্যতম হলেও সাদাকা করার চেষ্টা করা।

 

গোপন সদকা আল্লাহর ক্রোধকে প্রশমিত করে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় গোপন সদকা রবের ক্রোধকে প্রশমিত করে’ (তাবারানি: ১০১৮; তারগিব: ৮৮৮)

 

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক-পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন। (সুরা তওবা : ১০৩)।

 

•  প্রিয় ভাই ও বোন রামাদানে বেশি বেশি, জিকির, ইস্তেগফার, ও দুরুদ পাঠ করার চেষ্টা করুন ।

 

সব ইবাদতের রুহ হচ্ছে আল্লাহর জিকির। জিকিরকারীকে ফেরেশতারা খুঁজতে থাকেন। যেখানে আল্লাহর জিকির করা হয় সেখানে ফেরেশতাদের আগমন ঘটে। জিকিরকারী বান্দার সঙ্গে বসে তারাও আল্লাহর জিকির করেন।

 

হজরত জাবির (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের থেকে বের হলেন এবং বললেন, হে লোক সকল! আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন। তারা কোনো জিকিরের মজলিস পেলে সেখানে অবস্থান করেন। অতঃপর তোমরা জান্নাতের বাগানের ফল খাও। আমরা বললাম, জান্নাতের বাগান কোথায়? হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, জিকিরের মজলিসগুলো জান্নাতের বাগান। (আল-মাজরুহাইন : ২/৫২, আবি ইয়ালা : ২১৩৮)।

 

জিকিরের মধ্যে সর্বোত্তম জিকির হল ইস্তেগফার। হাদিসে বর্ণিত আছে।

 

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করে আল্লাহ তায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করে দেন, তার সব পেরেশানী দূর করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস, ১৫১৮)

 

প্রিয় ভাই ও বোন রমজানে দিনেও রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার চেষ্টা করুন।

 

নিয়মিত দরুদ পাঠকারী ব্যক্তির জন্য এর চেয়ে আনন্দের বিষয় কি হতে পারে? তাকে প্রিয় নবীজি রাসুলে কারিম  সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম  চিনেন, তার বিষয়ে ফেরেশতারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কাছে  নিয়মিত সংবাদ পৌঁছে দেয়। দুরুদ পড়লে  দোয়া কবুল হয়।

 

 রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন!যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশবার রহমত বষর্ন করবেন

(মুসলিম-৮৯৮)

 

• বেশি বেশি দোয়া ও মুনাজাত করা।

রমজানের বিশেষ কয়েকটি মুহূর্ত দোয়া কবুল হয়। এই মুহূর্তগুলো সর্বোত্তম  ভাবে তালাশ করা উচিৎ। ইফতারের আগ মুহূর্ত, তাহাজ্জুতের সময়,বিশেষ করে বেজড় রাত্রি গুলো।

 

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া। ’ (বায়হাকি, হাদিস : ৩/৩৪৫; সিলসিলাতুস সহিহা, আলবানি : ১৭৯৭ )

 

• রমজানের দিন গুলোতে উত্তমভাবে  মেসওয়াক করা।

 

• সামর্থ্য থাকলে রমজানের শেষ দশকে এতেকাফে বসার চেষ্টা করা।

 

এতেকাফে বসার অন্যতম সুবিধা হল এর  মাধ্যমে শবে কদরের রাত পাওয়ার ও সুযোগ হয়ে যায়।এ রাত হাজার মাসের ইবাদাতের ছেয়ে ও শ্রেষ্ঠ রাত।

 

এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বান্দাদের ডেকে ডেকে বলেন, ‘কে আছ অসুস্থ, আমার কাছে চাও আমি আরোগ্য দান করব, কে আছ অভাবগ্রস্ত, আমার কাছে চাও আমি প্রাচুর্য দান করব, কে আছ বিপদগ্রস্ত আমার কাছে চাও, আমি বিপদমুক্ত করে দেব।’ এভাবে বান্দার সব প্রয়োজনের কথা বলতে থাকেন। (মুসনাদে আহমাদ)

 

• প্রিয় ভাই ও বোন,রমজানের সবার সাথে হাসিমুখে সালাম প্রদান করবেন।প্রতিবেশী,  আত্মীয়স্বজন ও গরিবকে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।

 

রমজানে কিছু বিষয় যথাসাধ্য  কম করার চেষ্টা করবেন।

 

• অতিরিক্ত ঘুম

 

• অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ইফতারের সময় ১ ভাগ খাবার ২ ভাগ পানি খাবেন।

সেহেরিতে ৩ এর ২  অংশ খাবেন। পেট ভরে খাবার খাবেন না। সেহরি শেষ সময়ে খাওয়া সুন্নত।

 

• হরেক রকম খাবারের মেনু তৈরি করা থেকে বিরত থাকুন।এতে ইবাদতের উপর নৈতিবাচক  প্রভাব পড়ে।মনে রাখবেন রমজান মাস আত্ম সংযমের মাস। পুরো বছর জুড়ে খাবারে সুযোগ পাবেন।

•অহেতুক গল্পগুজব ও শপিং নিয়ে ব্যস্ততা পরিহার করুন! যত সাধ্য গীবত থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন।

 

 যে কাজগুলো একদমই করবেন না :

 

•  চোখের গুনাহ থেকে বিরত থাকুন

•  গীবত, গালাগালি, অশ্লীল কথা সমূহ থেকে নিজকে সর্বোত্তমভাবে হেফাজত করুন।

•  গান শোনা থেকে নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যদের বিরত রাখুন।

•  হারাম অর্থ, হারাম খাবার থেকে নিজেকে হেফাজত করুন।

 

পরিশেষে বলবো, রমজানে সবাইকে ক্ষমা করে দিন।জীবনে যাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না চিন্তা করেছেন তাদেরকে ও ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবচেয়ে ক্ষমাশীল। এর বিনিময়ে আল্লাহ আপনাকে দান করুন।

 

প্রিয় ভাই ও বোন এবারের রামাদান হোক, আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ রমাদান আল্লাহ আমাদের কথাগুলো আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন

 

সাইদুল ইসলাম সজীব

 

Leave a Reply