You are currently viewing বর্তমান সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে কিতাবুল ফিতানের কয়েকটি আশ্চর্য হাদিস!

বর্তমান সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে কিতাবুল ফিতানের কয়েকটি আশ্চর্য হাদিস!


সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে আমাদের জানার আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ মনে করছে, এটা বাকি যুদ্ধের মতই তেলের খনি ও ক্ষমতা দখলের একটি যুদ্ধ! ২০১১ সালের আরব বসন্তের পর থেকেই এই যুদ্ধে শুরু হয়েছে, কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না? রক্ত পিপাসুদের হাতে প্রতিদিন শত শত মানুষের রক্ত ঝড়ছে, এই পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ মানুষ। গৃহহীন হয়েছে ১ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ। আসুন সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে হাদীসের ভবিষ্যৎবাণীর আলোকে মূল্যায়ন করে দেখি, কিভাবে শুরু হল সিরিয়া যুদ্ধ, আর কি হবে সিরিয়া যুদ্ধের ভবিষ্যৎ!


সিরিয়ার গুরুত্ব ও যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বের অবস্থাঃ

** ইবনে কুররা তার পিতা কুররা ইবনে হায়দা (রাঃ) থেকে বর্নিত,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, শামবাসী (সিরিয়া) ধ্বংস হলে আমার উম্মতের জন্য তেমন কোনো কল্যান বয়ে আনবে না (সিরিয়া বাসীর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি)।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৫৭ ]

** হযরত সুলাইমান ইবনে হাতেব হিময়ারী (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, জনৈক লোক প্রায় চল্লিশ বৎসর হতে হযরত কা’ব (রাঃ) থেকে শুনে আসছে যে, তিনি বলেন যখন ফিলিস্তিন দেশে ফিৎনা ব্যাপক আকার ধারন করবে, তখন কূপ বা কলসিতে পানি গড়িয়ে পড়ার ন্যায় শামের (সিরিয়ার) দিকে বিভিন্ন ধরনের ফিৎনা ধেয়ে আসবে। অতঃপর তাদের সামনে সবকিছু উম্মোচন হয়ে যায়, অথচ তখন তোমরা খুবই লজ্জিত ও নগন্য জাতি হবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৭৫ ]

** হযরত কা’ব (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, পৃথিবীর মূল বা, মাথা হচ্ছে শাম দেশে (সিরিয়া) , তার উভয় ডানা হচ্ছে, মিশর এবং ইরাকে এবং লেজ হচ্ছে, হেজাজ (সৌদি আরব, কাতার বাহরাইন, আরব আমিরাত) ভুমিতে। আর সেই লেজের উপর বাজ পাখিরা মলত্যাগ করবে (সিরিয়ার কারনে সর্বশেষ সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত আক্রান্ত হবে)।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৬৭ ]

** হযরত কা’ব (রহঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর্যন্ত মানুষ মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হতে থাকবে। যখনই এভাবে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হবে অর্থাৎ, শাম (সিরিয়া) দেশ আক্রান্ত হবে তখনই মানুষ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনীত হতে থাকবে।কা’ব (রহঃ) কে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়া সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, শাম (সিরিয়া) দেশ বিরান (ধ্বংস) হয়ে যাওয়া।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৬৮ ]

** হযরত আবু আব্দুর রব তাবী (রহঃ) থেকে বর্ননা করেন, তিনি এরশাদ করেন, যখন তুমি শামে (সিরিয়াতে) আকাশচুম্বি ভবন নির্মান হতে দেখবে এবং সেখানে এমন ধরনের গাছ লাগানো হবে, যা হযরত নূহ (আঃ) এর যুগেও লাগানো হয়নি, তাহলে বুঝতে হবে তোমাদের প্রতি ফিৎনা ধেয়ে আসছে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৬৬ ]

আমরা দেখেছি, অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র ঈসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মুসলিম জাতির মুসলমানদের দুর্দিন শুরু হয়। এর পর একে একে ১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭, ১৯৭৩ সালেও যুদ্ধ করে ইহুদীদের পরাজিত করা সম্ভব হয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্যের এই বিষফোঁড়াটি এখন পুরো পৃথিবীর জন্যই বিষফোঁড়ায় রুপান্তরিত হয়েছে। তারপর ২০১১ সাল থেকেই মুসলিম উম্মাহর জন্য আরো কঠিন দুর্দিন শুরু হয়। যার শেষ কোথায়, আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না।

সিরিয়ার ফিতনা হবে খুবই ভয়াবহঃ

** হযরত আবুল আলিয়া (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বললেন, হে লোক সকল! যতক্ষন পর্যন্ত শাম (সিরিয়া) দেশের দিক থেকে কোনো ফিৎনা আসবেনা, ততক্ষন তোমরা সেটাকে কোনো ফিৎনাই মনে করোনা। যখনই শামের (সিরিয়া) দিক থেকে ফিৎনা আসবে, সেটাই হবে, অন্ধ ফিৎনা।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৬১ ]

** হযরত কা’ব (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, প্রতিটি ফিৎনা প্রাথমিক অবস্থায় থাকবে, যতক্ষন পর্যন্ত সেটা শাম (সিরিয়ায়) দেশে প্রকাশ হবেনা। যখনই শাম (সিরিয়ায়) দেশে উক্ত ফিৎনা দেখা দিবে তখন বুঝতে হবে, সেটা চুড়ান্ত রুপ নিয়েছে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৬০ ]

** বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, প্রত্যেক ফিতনা বড়ই কঠিন। এবং সেই ফিতনাই একদিন প্রকাশ পাবে, শাম (সিরিয়া) নামক দেশটিতে। আর যখন উক্ত শামদেশে ফিতনার উদ্ভব হবে তখনই চতুর্দিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৫৯ ]

** কা’ব রহঃ থেকে বর্নিত, শাম দেশে মোট তিন ধরনের ফিৎনা দেখা দিবে। একটি ফিৎনা হচ্ছে, অবাধ রক্তপাতের ফিৎনা, দ্বিতীয় ফিৎনা হচ্ছে, আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন ও সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার ফিৎনা। উক্ত ফিৎনার সাথে সম্পৃক্ত হবে মারিবের ফিৎনা, যা মূলতঃ অন্ধ ফিৎনা হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৫৬ ]

২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে পঞ্চম ফিতনা শুরু হয়েছে। আর এর মাধ্যমেই গোটা পৃথিবীতে একটা ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হয়েছে, গোটা মুসলিম উম্মাহ এর পর থেকে লাঞ্ছিত, অপমানিত হওয়া শুরু হয়েছে, সেটা সিরিয়া, লিবিয়া, মালি, আলজেরিয়া, ইয়েমেন, আরাকান, ফিলিপাইনে আমরা দেখতে পেয়েছি, শরণার্থীদের মিছিল কেবল দীর্ঘই হচ্ছে, তুরস্কে প্রায় ৫০ লক্ষ, জার্মানিতে ১০ লক্ষ, বাংলাদেশে ১০ লক্ষ, জর্ডানে ৬ লক্ষ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। নাস্তিক্যবাদ ও ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব নতুন মাত্রা পেয়েছে, এমনকি অমুসলিম দেশের পাশাপাশি মুসলিম দেশ গুলোতেও এটি প্রকাশ্য ভাবেই শুরু হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্রামের লোকজন শহরে আশ্রয় নেয়াঃ

** হযরত আবু জাহিরিয়্যাহ (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, তোমাদের অবস্থা কেমন হবে, যখন তোমাদের গ্রামবাসীদের লোকজন তোমাদের ভিতরে প্রবেশ করে তোমদের ধন সম্পদের মধ্যে শরীক হয়ে যাবে এবং তোমাদের কেউ তাদেরকে বাধা দিতে পারবেন। যার কারনে কেউ বলে থাকে “যত বেশি সময় তোমরা সম্পদশালী ছিলে, আমরা তত বেশি সময় পর্যন্ত দুর্ভাগ্যতে ছিলাম।”

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৮১ ]

** হযরত ইয়াহইয়া ইবনে জাবের (রহঃ) বলেন, তোমাদের গ্রামবাসীরা তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তোমাদের মাঝে কল্যান বাকি থাকবে। তাছাড়া কল্যান তোমাদের সাথে থাকবে, যতক্ষন পর্যন্ত বহন করার মত পিঠ তোমাদের সাথে থাকবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৮২ ]

** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, কল্যান তোমাদের সাথে থাকবে, যতক্ষন পর্যন্ত তোমাদের গ্রাম বাসিরা শহরবাসীদের থেকে অমুখাপেক্ষি থাকবে। যদি তারা তোমাদের কাছে আসে তাহলে তোমরা তাদেরকে নিষেধ করোনা। যেহেতু তোমাদের কাছে সম্পদের ছড়াছড়ি থাকবে। তারা বলবে, দীর্ঘদিন থেকে আমরা ক্ষুধার্ত, অথচ তোমরা তৃপ্ত সহকারে খেয়ে যাচ্ছ এবং দীর্ঘদিন হতে আমরা কষ্ট শিকার করে যাচ্ছি অথচ তোমরা সাচ্ছন্দ বোধ করে যাচ্ছ। অতঃপর আজকে আমরা তোমাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছি।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৮৫ ]

২০০৭ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রচন্ড গরম ও খরার কারনে সিরিয়াতে বিভিন্ন এলাকার গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ বড় বড় শহর গুলোতে আশ্রয় নেয়। ঐই তিন বছর তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বৃদ্ধি পায় এবং বৃষ্টিপাত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।গ্রামের কৃষকেরা পানির অভাবে কৃষি কাজ বন্ধ করে দেয়। তিউনেসিয়াতে যে যুবক আত্মহত্যার কারণে, আরব বসন্ত শুরু সেও চাকরির অভাবে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। অর্থাৎ পুরো আরব বিশ্বে এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরে। ২০১১ শুরু হওয়া আরব বসন্তের সময় গ্রাম থেকে উঠে আসা লোকজন বিশেষ করে, সিরিয়াতে তারা সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ও ফ্রি সিরিয়ান আর্মিতে যোগদান করে।

বস্তুত আল্লাহ তায়ালা তার সুনিপুণ কৌশলে তার জমিনে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে দিচ্ছেন। যা আমাদের কল্পনার বাইরে। নিউজ লিংকঃ

ছোট বাচ্চাদের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হবেঃ

** হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন একটা যুদ্ধ হবে। যার শুরুতে থাকবে ছোটদের খেলাধুলা। (ছোটদের খেলা থেকেই যুদ্ধ শুরু হবে)। যুদ্ধটি এমন হবে যে, এক দিক দিয়ে থামলে আরেক দিক দিয়ে (যুদ্ধের আগুণ) প্রজ্জলিত হয়ে উঠবে। যুদ্ধ শেষ হবে না, এমতবস্থায় আকাশ থেকে এক সম্বোধনকারী (জিব্রাইল আঃ) সম্বোধন করে বলবে- অমুক ব্যক্তি (ইমাম মাহদী) নেতা। আর ইবনুল মুসাইয়িব তার দুই হাত গুটাবেন ফলে তার হাত দুটো সংকুচিত হয়ে যাবে। অতপর তিনি এই কথাটি তিন বার বললেন, সেই আমীর ( ইমাম মাহদী) বা নেতাই সত্য।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৭৩ ]

** হযরত ইবনুল মুসাইয়িব (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন সিরিয়ায় একটি যুদ্ধ হবে। যার শুরুটা হবে শিশুদের খেলাধূলা (দিয়ে)। অতপর তাদের এযুদ্ধ কোন ভাবেই থামবে না। আর তাদের কোন দলও থাকবে না। এমনকি আকাশ থেকে এক সম্বোধনকারী ( হযরত জীব্রাইল আঃ) সম্মোধন করে বলবে, তোমাদের উপর অমুক ব্যক্তি ( ইমাম মাহদী) তোমাদের আমীর সুসংবাদ দাতার হাত উথিত হবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৭৭ ]

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪ বছর বয়সী ৭ম শ্রেণীর ছাত্র মুয়াইয়া সিয়াসনেহ টেলিভিশনে তিউনেশিয়া ও মিশরের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী খবর দেখে দক্ষিণ সিরিয়ার দারা শহরে নিজের স্কুলের দেয়ালে সরকার বিরোধী স্লোগান লেখে। ব্যাস, রাতের বেলা পুলিশ এসে তাকে সহ আরো ৩ বন্ধুকে আটক করে মারাত্মক নির্যাতন করে। যার কারণে দারা শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে, এবং পরবর্তীতে যা পুরো সিরিয়াতে ছড়িয়ে পরে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে বাশার আল আসাদ সেনাবাহিনী মোতায়েন করে এবং তাদের কে নির্দেশ দেয় বিক্ষোভকারীদের সরাসরি গুলি করতে। কিন্তু সেনাবাহিনীর কেউ কেউ গুলি করতে অস্বীকার করে।

তারপর সেনাবাহিনীর সেই বিদ্রোহী অংশটি নিয়ে ঘটিত হয় FSA। তারপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার আরব দেশের মিত্ররা বিদ্রোহীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। ২০১২ সালে আল কায়দা আফগানিস্তান থেকে কিছু প্রশিক্ষিত যোদ্ধা সিরিয়াতে পাঠায় এবং ইরাকের ইসলামিক ইস্টেট কে সিরিয়াতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সাম্প্রতিক কালে, HTS এর কমান্ডার আবু মুহাম্মদ জুলানী বলেন, মাত্র ৫ টি AK47 রাইফেল দিয়ে তারা সিরিয়া যুদ্ধের যাত্রা শুরু করে। পরের ইতিহাস কম বেশি সবারই জানা।

শেয়ার করুন, অন্যকে জানাতে সাহায্য করুন।


This Post Has 0 Comments

  1. Hm mahmud

    Jajakallah

Leave a Reply