You are currently viewing জারা একজন মাজলুম বোনের গল্প।

জারা একজন মাজলুম বোনের গল্প।

ক্লান্ত শ্রান্ত ভঙ্গীতে হেটে চলছে রাস্তার পাশ দিয়ে । বুকে হতাশা। হতাশার ছাপটা বোধহয় চেহারায়ও কিছুটা ফুটে উঠেছে। জারা যখন ভুল পথে ছিল, জানতো না জীবনের মানে। তখন চারপাশের চেনা-অচেনা সবাই তার পাশে ছিল। সবাই অনেক উৎসাহ দিত। গুনাহের কাজে বাধা দেয়ার কেউ ছিল না তখন।
.
কিন্তু আজ আছে অনেকেই। কারণ আজ সে দ্বীনের পথে চলতে শুরু করেছে। দ্বীনে ফিরেছে। বুঝতে শিখেছে জীবনের আসল উদ্দ্যেশ্য। চিনতে শিখেছে সৃষ্টিকর্তাকে। তার হুকুম পালন করতে অগ্রসর হয়েছে। তাই আজ গোটা দুনিয়া তার পেছনে লেগে গেছে। এমনকি নিজের মা-ও। এই তো সেদিন মা বললো,
.
-‘তুমি এসব কি শুরু করেছো জারা? এই বয়সে কিসের এত নামাজ, পর্দা। তুমি তো আগে এমন ছিলে না। নিশ্চই তোমার ঐ ফ্রেন্ড তোমাকে ভুলভাল বুঝিয়েছে । এটা স্বাধীনতার যুগ। আর এই যুগে কি না তোমার মত একটা মেয়ে বোরখা পরে ভুত হয়ে বাইতে বের হচ্ছে। দেখো, আমি ভালোমতো বলছি তুমি ঠিক হয়ে যাও।
.
কিন্তু “মাহিরা” “জারার” পাশে আছে। সবসময় তাকে এপ্রিশিয়েট করার জন্য মাহিরা তাকে সঙ্গ দিয়ে চলছে। সেদিন মাহিরা তাকে খুব করে বুঝিয়ে দ্বীনের পথে চলতে কত বাধা বিপত্তি আসে। ইসলাম নারীদের কর সম্মান। দিয়েছে।
আমাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে মাহিরা প্রায়ই আলোচনা করে। জারা! সেগুলো মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো। সে শুনতে পেল মাহিরা বলছে,
.

  • দেখো জারা, আমরা যখন কোনো হারাম রিলেশন করি তখন আমাদের বাধা দিতে সমাজ পরিবার কেউ এগোয় না। সবাই ব্যাপারটাকে খুব সফ্টলি নেয়। আর যখন কেউ হালাল সম্পর্ক গড়তে চায় তখন হাজার বাধা এসে দাঁড়ায় সামনে। আমাদের সমাজে দ্বীনের পথে চলা খুব কঠিন। এই সমাজে যিনা সহজ কিন্তু বিয়ে কঠিন।
    .
    আমরা স্বাধীনতা খুঁজতে গিয়ে সম্মান হারাই। অধিকার খাটাতে গিয়ে নারীত্বের মর্যাদা হারিয়ে ফেলি। আল্লাহ নারী জাতিকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। অনেক অধিকার দিয়েছে। দিয়েছেন অনেক স্বাধীনতা। একটা পুরুষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নিজের স্ত্রী কে ভরণপোষণ দেয়ার। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন –
    .
    “সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব।”
    (সুরা : বাকারা/আয়াত : ২৩৩)

“তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।”
(সুরা : তালাক/আয়াত : ৬)

রাসুল (সঃ) বলেছেন –
তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।
(আবু দাউদ : হাদিস ২১৪২)
.
কিন্তু আজ আমাদের সমাজে মেয়েরা নারী অধিকার খুঁজতে গিয়ে পুরুষের লালসার খোঁড়াক হচ্ছে। চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাভিচার। কারণ আমরা ইসলামের পথ থেকে ছিটকে পড়েছি। ইসলামেই রয়েছে সফলতা। যখন আমরা পথ থেকে দূরে সরে যাবো তখন আমাদের উপর আল্লাহর আযাব আসবে। আজ মুসলিমরা কাফেরদের হাতে বন্দি। অথচ একদিন অর্ধ পৃথিবী মুসলিমদের অধীনে ছিলো। আজ আমরা পরাজিত।
.
আমরা খুব নারী অধিকার নিয়ে চেঁচাতে পারি। আমরা মনে করি, অথবা আমাদের সমাজ মনে করে, নারী খোলা চুলে, গলায় উড়না ঝুলিয়ে বাইরে বের হওয়াই বুঝি স্বাধীনতা। অথচ আমরা বেখবর!
আল্লাহ নারীর সম্মানের জন্যই পর্দার হুকুম দিয়েছেন। যেন তার সৌন্দর্য মুক্তোর দানার মত লুকায়িত থাকে। যেন তার লাবন্য পাথরের মত মানুষের পায়ের নিচে পিষ্ট না হয়। নারী হলো সূর্য! যার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা দায়। বেপর্দা নারী ঠিক সেই পাথরের মত- যা মূলহীন অবস্থায় পথেঘাটে মানুষের পায়ের চাপায় পিষ্ট হয়। আর পর্দাশীল নারী ঝিনুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা মুক্তার মত। যার মূল্য পাথরের চাইতে অনেক গুণ বেশি।
.
দেখো, পাথর কেমন ভাবে পথেঘাটে অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকে। কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায় না। যে কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারে, চাইলে পিষ্ট করতে পারে। কিন্তু ঝিনুকের ভেতরে থাকা মুক্তার দেখা পেতে সবাই উৎসুক। সেই মুক্তা পাওয়ার জন্য সবাই উতলা হয়ে থাকে। কারণ তার মূল্য অনেক বেশি।
.
ঠিক তেমনি বের্পদা নারী সবার স্পর্শে, তার শরীর উত্যক্ত। যে কেউ যেমনভাবে তাকে ব্যবহার করতে পারে। তার মূল্য পথিকের পায়ের নিচে পিষ্ট হওয়া পাথরের মতোই।
.
আরবমুক্তাকে যেমন যে কেউ যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যবহার করতে পারে না। পর্দাশীল নারীকে ঠিক তেমনিভাবে যে কেউ যেমন ভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারে না। তাকে তার উপযুক্ত মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দিয়ে তার হক আদায় করতে হয়।
.
আমরা কত বোকা। নিজেদের হক আমরা নিজেরাই বিসর্জন দিচ্ছি। আজকে আমরা উপার্জন করতে নেমে গেছি। অথচ এই দায়িত্ব শুধুমাত্র পুরুষের। আমরা কুরআনের বিধান অনুযায়ী কোনো কিছুর ফায়সালা করি না। আমরা দেখি সমাজ। আল্লাহকে ভয় করার জায়গায় আমরা সমাজকে ভয় করি। এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা সমাজের ভয়ে আল্লাহর বিধান পালনে গুটিয়ে আছে। অথচ,
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন –
“হুকুম বা বিধান একমাত্র আল্লাহরই”।
[সূরা ইউসুফ/আয়াত: ৪০]

তিনি আরও বলেন,
“তারা কি তবে জাহেলিয়াতের বিধান চায়? দৃঢ়-বিশ্বাসীগণের জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা আর কে হতে পারে?”
[সূরা আল-মায়েদাহ/আয়াত: ৫০]
.
আমরা আল্লাহর বান্দা। এবং একমাত্র তারই হুকুম পালন করা আমাদের কর্তব্য। আমরা তার দাস।
.
ধরো, তুমি কোনো একটা গোলাম কিনলে। এখন তার একমাত্র উদ্দেশ্য তোমার সেবা করা, তোমার কথা মেনে চলা। যদি সে তোমার আদেশ পালন না করে – তোমার অন্য গোলামের আদেশ পালন করে, তাহলে অবশ্য তুমি তাকে শাস্তি দিবে। কারন তার মালিক একমাত্র তুমি। তুমি যা আদেশ করবে সে তা পালনে বাধ্য। কিন্তু সে তা না করে তোমারই কেনা অন্য গোলামের দাসত্ব করছে। তুমি তাকে কঠোর শাস্তি দিবে এটাই স্বাভাবিক।
.
তাহলে দেখো, আমরা তো আল্লাহর গোলাম। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছে তার দাসত্ব করার জন্য। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন –
.
“আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে।।”
(সুরা যারিয়াত/আয়াত ৫৬)
.
আমরা আর জিন জাতি সৃষ্টি হয়েছি ইবাতদের জন্য। আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য। এখন যদি আমরা আল্লাহর হুকুম পালন না করে তারই সৃষ্টি গোলামের হুকুম পালন করি। তার আদেশ অমান্য করে, তার বান্দার আদেশ পালন করি, তাকে ভয় না করে তার সৃষ্টি আমাদের মতোই মাটির তৈরী অন্য আরেক গোলামের দাসত্ব করি তখন আমাদের উপর কঠিন আযাব আসবেই। আল্লাহ আমাদের উপর রাগান্বিত হবেন।
.
আমরা লোক লজ্জার ভয়ে অথবা ক্ষমাতার দাপটে আল্লাহর বিধান পালনে অগ্রসর হতে পারছি না। বিশেষ করে পর্দা নিয়ে একদল স্বাধীনচেতনাত্মক নারী তর্ক-বিতর্ক জুড়ে দিবে। কিন্তু হিসেবের দিন কিন্তু সমাজ অথবা নারী স্বাধীনতা নিয়ে যুদ্ধ করা মানুষেরা তোমার হিসেব দিবে না। তোমার হিসেব তোমাকেই দিতে হিবে। তোমার শাস্তি তোমাকেই ভোগ করতে হবে। তখন কেউ এসে তোমার পাশে দাঁড়াবে না। তাই সৃষ্টির আনুগত্য না করে স্রষ্টার আনুগত্য করো। দেখবে একদিন ঠিক সৃষ্টকর্তা তোমার সম্মান- মর্যাদা বৃদ্ধি কর দিবেন।
.
দ্বীনের পথে চলতে আমাদের অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে। আমাদের বিশ্বনবীও কিন্তু কম বাধা অতিক্রম করেননি। তিনি শ্রেষ্ঠ মানব হয়েও অনেক অপমান, অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন। নিজের প্রিয় জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। কিন্তু ধৈর্য হারাননি। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তিনি সব কিছু সহ্য করে গেছেন।
.
দেখো, যেই ভূমি থেকে তিনি বিতাড়িত হয়েছেন, একদিন ঠিক সেই ভূমিই তার প্রতিনিধিত্বে চলে এসেছিল। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তিনি আল্লাহর হুকুম মেনে গেছেন। এক সময় আল্লাহই তাকে সাহায্য করেছেন। সম্মানিত করেছেন।
.
“জারা” মুগ্ধ হয়ে শুনেছিল সেদিন মাহিরার কথাগুলো। আর মনে মনে পণ করেছিল, যত বাধা-বিপত্তিই আসুক – দ্বীনের পথ থেকে পিছ পা হবে না। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে সব মেনে নেবে। একমনে আল্লাহকে ডেকে চলছে জারা। এই পথেই তো রয়েছে সফলতা, এই পথেও তো রয়েছে অনাবিল প্রাশান্তি। এই পথেই তো রয়ে নারীর আসল সম্মান, আসল স্বাধীনতা।

|| গল্প:- দ্বীনের পথে ~
|| লেখা:- নাজিফা খান ||

This Post Has 0 Comments

  1. ফারহানা

    জাজাকাল্লাহ

Leave a Reply