You are currently viewing আমার বন্ধু আদিপ।পর্বঃ০২ স্মার্টফোনের মাধ্যমে শয়তানের  দোকা,আদিফের প্রেসক্রিপশন।

আমার বন্ধু আদিপ।পর্বঃ০২ স্মার্টফোনের মাধ্যমে শয়তানের দোকা,আদিফের প্রেসক্রিপশন।

বাহিরে ঝিরিঝিরি হাওয়া।কালো মেঘে ছেয়ে গেছে শহরের আকাশ।একটু আগেও প্রচন্ড রোদে হাঁসফাঁস করছিল শহরের মানুষ।রোদের তীব্রতা মাটি ফেটে যাওয়ার উপক্রম,তাইতো মাটির বন্ধু আকাশ, তার বন্ধুর কষ্ট সহ্য না করতে পেরে গাল ফুলিয়ে অভিমান করে অপেক্ষায় আছে। কখন মিকাইল আলাইহি সালাম হুকুম দিবেন, কখন মাটির বুকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামাবে।

জানালার গ্রিল দিয়ে বাহিরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, এরই মধ্যেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নেমেছে শহরে বুকে।মনের অবস্থা এমনিতে গত কয়েকদিন খুব খারাপ যাচ্ছে।বাহিরের বৃষ্টির ঝনঝনানি শব্দ হাহাকারটা যেন আরো বাড়িয়ে দিছে। বুকের ভেতর কেমন যেন এক শূন্যতার হাহাকার। এই মুহূর্তে কারো সাথে কথা বললে হহয়ত ভালো লাগতো। কিন্তু তার উপায় কি!!

পুরো বাসা খালি, সুনসান নীরবতা। ।এই মুহূর্তে ভাষাটাকে আমার কাছে কেমন যেন সাহারা মরুভূমির মতো লাগতেছে।বাইরের ওয়েদার এবং বাসার নিরবতা অন্যরকম এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাসার দক্ষিণ কর্নারে ৩ রুমের একটা ফ্ল্যাট নিয়ে আমি আর আদিপ থাকি। আপনাদেরকে আদিপের কথা আগেই বলেছি।আদিফ আমার বন্ধু, আজ ৮ বছর আমাদের বন্ধুত্ব। ইউনিভার্সিটি তে উঠার পর থেকেই তার সাথে একসাথে আছি।প্রচন্ড জিদি এবং স্বপ্নবাজ একটা ছেলে। মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে খুব টেনশন হয়।এ জাহেলী সমাজকে সংস্কারের জন্য ও যে স্বপ্ন দেখে।কখন জানি সমাজ ধর্মের অনুসারীরা তার পিছনে লেগে যায়।

বাহিরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আজ প্রকৃতিটা আসলে খুব সুন্দর।কিন্তু এত সুন্দর প্রকৃতির মাঝেও কেন আমার মন ভালো নেই?সেটি হয়তো অনেকেই জানেন!!অথবা জানেন না!প্রাপ্তবয়স্ক একজন অবিবাহিতা ছেলের কিসের শূন্যতা থাকে তা সবারই জানার কথা। কিন্তু কি করার আছে!! সমাজ ধর্মের মানুষগুলোর কাছে মাঝে মাঝে নিজেকে বড্ড অসামাজিক মনে হয়। সমাজ ধর্ম আর ইসলাম মিলানো অসম্ভব। ইসলামের সামাজিক আইন গুলোকে হত্যা করার জন্যই নতুন এই ধর্মের আবির্ভাব হয়েছে।চারদিকে শুধু সমাজ ধর্মের জয় গান! সমাজ কি বলবে, সমাজ কি বলবো, উফফ সমাজ কি বলবো।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই, মস্তিষ্কে ছন্দের সারিং বেজে উঠলো।

অশান্ত এই মন
কি করি কি করি এখন!!
টেবিলে মেঝেতে,
নেই মন পড়াতে।

টিভিতে পেপারে?
উফ সেই যুগ গেল রে।
খুঁজো তবে সেল ফোন
ফেসবুক -এ ঢোকো রে।

আর দেরি করিনি। সাথে সাথেই মস্তিষ্ককে প্রশ্রয় দিয়ে ফেসবুকে নিউজফিডস স্কল করতে লাগলাম।সত্যি বলতে এই মুহূর্তে আর কোনো ভালো উপায় মাথায় আসেনি।নিউজফিডস স্কল করতে করতে খেয়াল করলাম।একটা গ্রুপে কেউ একজন শেয়ার করেছে।ব্রেকিং নিউজ, নায়িকা, অমুকের সাড়ে তিন মিনিটের অডিও রেকর্ড ফাঁস না শুনলে মিস করবেন। কিছু চিন্তা না করেই নিজের অজান্তেই ক্লিক করে ফেললাম। পুরো অডিও শোনার পর আমার মস্তিষ্কের ডোপামিন গুলো আমাকে মাতাল করে দিয়েছে।এ যেন অন্যরকম এক মাদকতা।আমি কে? কি আমার পরিচয় সব ভুলে গিয়ে, আমি ব্যস্ত হয়ে গেলাম,বিচ্যুতি ঘটা মস্তিষ্কের খোরাক যোগাতে।আমি যে আর আমার মাজে নেই।এই মুহূর্তে উন্মাদনা আমাকে ঘিরে ধরেছে।সার্চ দিতে লাগলাম আরো ইনফরমেশনের। গভীর থেকে আরো গভীরে। হঠাৎ করে ঝপাস শব্দ অনুভব করলাম,আচমকা আওয়াজ আমার গা শিউরে ওঠে হাত থেকে সেলফোন পড়ে যায়।তাকিয়ে দেখি আদিফ আমার দিকে বেজা শরীর নিয়ে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে।প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে আদিবের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছিল ও যেন আমার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছে।

ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আদিপ আমাকে জিজ্ঞেস করল কিরে কি করছিস!আমি আমতা-আমতা করে উত্তর দিলাম কই, কি, কি,কিছু না। একা একা আর কি করবো ফেসবুকে একটা লিখা পড়তেছি।

আদিপঃ হুম আমি তো দেখে ফেলছি।

এমন কিছুই আদিফ বলবে সেটা আগে থেকে আন্দাজ করতে পেরেছি।প্রচন্ড ভয় আতঙ্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি দেখেছিস।

আদিফঃএইযে ফেসবুকে আমার লেখা পড়েছিস, কিন্তু লাইক,কমেন্ট কিছুই দিলি না। আচ্ছা তোরা এমন কেন?লাইক কমেন্ট করতে কি টাকা খরচ হয়।একটু লাইক কমেন্ট করলে আমাদের মত উদীয়মান লেখকরা এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়।কিন্তু সেটা তোরা করবি না।যতসব হিংসুটের দল।

আদিপের কথা শুনে অন্তরে স্বস্তি আসলো ভুবন জুড়ানো হাসি দিয়ে ওকে বললাম তুই পারিসও বটে। আমি তো ভাবলাম,,

আদিপঃ কেন তুই কি ভেবেছিস?আচ্ছা বাদ দে আমি প্রেস হয়ে আসি তারপর কথা বলব। ঠান্ডায় আমার জমে যাওয়ার মত অবস্থা।

আদিফ প্রেস হওয়ার জন্য গেলো।আর এ দিকে আমার অবস্থা মনে হচ্ছে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিতে লাগলাম এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য। ধরা খেয়ে গেলে কেমন একটা লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াতো! যদিও এখনও আমার ভিতর মাদকের মতো কাজ করা রিএকশন টা পুরোপুরি কাটেনি। আদিফের উপর এখনো একটা বিরক্তির ছাপ রয়েছে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে, আদিফ তার টেবিলে এসে বসলো।এবং আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

আদিফঃশুন কাজের কথা বলি। আজকে একটা অবাঞ্চিত ঘটনার সাক্ষী হলাম।ইউনিভার্সিটির যাওয়ার পথে দেখলাম কিছু স্কুল পড়ুয়া ছাত্র কি যেন দেখতেছে।তাদের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলাম চোখের খেয়ানতে ব্যস্ত তারা। বিষয়টা আমার অন্তরকে নাড়িয়ে দিয়েছে। জানিস আজকে পুরোটা দিন এ নিয়ে ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো। আমারা এবং আমাদের পরে নৈতিকভাবে একটা অসুস্থ প্রজন্ম গড়ে উঠেতেছে।এ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। না আছে পরিবারের না আছে রাষ্ট্র চালিকাশক্তির।অথচ কল্পনাহীন একটা অসুস্থ,নৈতিক হীন অসুস্থ জেনারেশন তৈরি হচ্ছে যারা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে সমাজ এবং রাষ্ট্রের।একদিন এদের ধারাই সংঘটিত হবে যুগের সর্বনিকৃষ্ট কাজগুলো।যা অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। ভাইয়ের মাধ্যমে বোন ধর্ষিত, বাবার মাধ্যমে কন্যা ধর্ষিত।মা সন্তানের সম্পর্ক আজ ভূলুণ্ঠিত।গা শিউরে ওঠার মতো খবর হচ্ছে। প্রতিদিন গুগোলে এক মিলনের বেশি সার্চ করা হয় মায়ের সাথে সন্তানের নেংরা ভিডিও দেখার জন্য। আর এগুলো করে বেড়াচ্ছে আমার আপনার মতো আমাদের ছোটরা।আর এর দায় বার শুধুই কি ওদের? নাকি দায়িত্ব-কর্তব্য হীন পরিবার এবং রাষ্ট্রের। হায় মনে পড়ে গেলো রাসুলের সে বালক সাহাবী সা’লাবার কথা।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সাহাবা, নাম সা’লাবা। মাত্র ষোল বছর বয়স। রাসূল (সা) এর জন্য বার্তাবাহক হিসেবে এখানে সেখানে ছুটোছুটি করে বেড়াতেন তিনি।

একদিন উনি মদীনার পথ ধরে চলছেন, এমন সময় একটা বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁর চোখ পড়ল দরজা খুলে থাকা এক ঘরের মধ্যে। ভিতরে গোসলখানায় একজন মহিলা গোসলরত ছিলেন, এবং বাতাসে সেখানের পর্দা উড়ছিল, তাই সা’লাবার চোখ ঐ মহিলার উপর যেয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে উনি দৃষ্টি নামিয়ে নিলেন।

কিন্তু সা’লাবার মন এক গভীর অপরাধবোধে ভরে গেল। প্রচন্ড দুঃখ তাকে আচ্ছাদন করল। তার নিজেকে মুনাফিক্বের মত লাগছিল। তিনি ভাবলেন, ‘কিভাবে আমি রাসূল (সা) এর সাহাবা হয়ে এতোটা অপ্রীতিকর কাজ করতে পারি?!

মানুষের গোপনীয়তাকে নষ্ট করতে পারি? যেই আমি কিনা রাসূল (সা) এর বার্তা বাহক হিসেবে কাজ করি, কেমন করে এই ভীষণ আপত্তিজনক আচরণ তার পক্ষে সম্ভব?’ তাঁর মন আল্লাহর ভয়ে কাতর হয়ে গেল।

তিনি ভাবলেন, ‘না জানি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমার এমন আচরণের কথা রাসূল সা এর কাছে প্রকাশ করে দেয়!’ ভয়ে, রাসূল (সা) এর মুখোমুখি হওয়ার লজ্জায়, তিনি তৎক্ষণাৎ ঐ স্থান থেকে পালিয়ে গেলেন।

এভাবে অনেকদিন চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সাহাবাদের কে সালাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই থাকতেন। কিন্তু সবাই জানাল কেউ-ই সা’লাবা কে দেখেনি। এদিকে রাসূল সা এর দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছিল।
তিনি উমর (রা), সালমান ফারিসি সহ আরো কিছু সাহাবাদের পাঠালেন সা’লাবার খোঁজ আনার জন্য। মদীনা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সা’লাবার দেখা মিলল না। পরে মদীনার একেবারে সীমানাবর্তী একটা স্থানে, মক্কা ও মদীনার মধ্যখানে অবস্থিত পর্বতময় একটা জায়গায় পৌঁছে কিছু বেদুঈনের সাথে দেখা হল তাদের।

দেখানে এসে তারা সা’লাবার সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করলেন। ‘তোমরা কি লম্বা, তরুণ, কম বয়সী একটা ছেলেকে এদিকে আসতে দেখেছ?’তারা জবাব দিল, সে খবর তারা জানেনা, তবে তারা জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কি ক্রন্দনরত বালকের সন্ধানে এসেছ?’ একথা শুনে সাহাবীরা আগ্রহী হয়ে উঠলেন এবং তার বর্ণনা জানতে চাইলেন।

উত্তরে ওরা বলল, ‘আমরা প্রতিদিন দেখি মাগরিবের সময় এখানে একটা ছেলে আসে, সে দেখতে এতো লম্বা, কিন্তু খুব দুর্বল, সে শুধুই কাঁদতে থাকে। আমরা তাকে খাওয়ার জন্য এক বাটি দুধ দেই, সে দুধের বাটিতে চুমুক দেয়ার সময় তার চোখের পানি টপটপ করে পড়ে মিশে যায় দুধের সাথে, কিন্তু সেদিকে তার হুঁশ থাকেনা!’ তারা জানালো চল্লিশ দিন যাবৎ ছেলেটা এখানে আছে।

একটা পর্বতের গুহার মধ্যে সে থাকে, দিনে একবারই সে নেমে আসে, কাঁদতে কাঁদতে; আবার কাঁদতে কাঁদতে, উপরে চলে যায়।সাহাবারা বর্ণনা শুনেই বুঝলেন, উনি সা’লাবা ছাড়া অন্য কেউ না। তবে তাঁরা উপরে যেয়ে সা’লাবাকে ভড়কে দিতে চাচ্ছিলেন না, এজন্য নিচেই অপেক্ষা করতে লাগলেন। যথাসময়ে প্রতিদিনের মত আজও সা’লাবা ক্রন্দনরত অবস্থায় নেমে আসলেন, তাঁর কোনদিকে খেয়াল নাই।

কী দুর্বল শরীর হয়ে গেছে তাঁর! বেদুঈনদের কথামত তাঁরা দেখতে পেলেন, সা’লাবা দুধের বাটি হাতে নিয়ে কাঁদছে, আর তাঁর অশ্রু মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তাঁর চেহারায় গভীর বিষাদের চিহ্ন স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। সাহাবারা তাকে বললেন, ‘আমাদের সাথে ফিরে চল’; কিন্তু সা’লাবা যেতে রাজি হচ্ছিলেন না।তিনি বারবার সাহাবাদেরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ‘আল্লাহ কি আমার মুনাফেক্বী বিষয়ক কোন সূরা নাযিল করেছে?’ সাহাবারা উত্তরে বললেন, ‘না আমাদের জানামতে এমন কোন আয়াত নাযিল হয় নাই।’

উমর (রা) বললেন, রাসূল (সা) আমাদেরকে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তুমি যদি এখন যেতে রাজি না হও, তাহলে তোমাকে আমরা জোর করে ধরে নিয়ে যাব। রাসূল (সা) এর কথা অমান্য করবেন এমন কোন সাহাবা ছিল নাহ। কিন্তু সা’লাবা এতোটাই লজ্জিত ছিলেন যে ফিরে যেতে চাচ্ছিলেন নাহ। এরপর সাহাবারা তাকে রাসূল (সা) এর কাছে মদীনায় নিয়ে আসেন।

মহানবী (সা) এর কাছে এসে সা’লাবা আবারও একই প্রশ্ন করে, ‘আল্লাহ কি আমাকে মুনাফিক্বদের মধ্যে অন্তর্গত করেছেন অথবা এমন কোন আয়াত নাযিল করেছেন যেখানে বলা আছে আমি মুনাফিক্ব?’ রাসূল (সা) তাকে নিশ্চিত করলেন যে এমন কিছুই নাযিল হয়নি।তিনি সা’লাবার দুর্বল পরিশ্রান্ত মাথাটা নিজের কোলের উপর রাখলেন। সা’লাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, এমন গুনাহগার ব্যক্তির মাথা আপনার কোল থেকে সরিয়ে দিন।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকলেন। আল্লাহর রহমত আর দয়ার উপর ভরসা করতে বললেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন। এমন সময় ছা’লাবা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল আমার এমন মনে হচ্ছে যেন আমার হাড় আর মাংসের মাঝখানে পিঁপড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে।’রাসূল (সা) বললেন, ‘ওটা হল মৃত্যুর ফেরেশতা। তোমার সময় এসেছে ছা’লাবা! শাহাদাহ পড়’। ছা’লাবা কালিমা শাহাদাহ বলতে থাকলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ উনি শাহাদাহ বলতে থাকলেন… বলতেই থাকলেন… এমনভাবে তাঁর রুহ শরীর থেকে বের হয়ে গেল।

মহানবী (সা) ছা’লাবাকে গোসল করিয়ে জানাজার পর কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আরো অনেক সাহাবা সা’লাবাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মহানবী (সা) পা টিপে টিপে অনেক সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

উমর রাদিয়ালাহু আনহু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি এভাবে কেন হাঁটছেন যেন ভিড়ের মাঝে হেঁটে চলেছেন.. কতো রাস্তা ফাঁকা পরে আছে, আপনি আরাম করে কেন চলছেন না ?’ উত্তরে রাসূল (সা) বললেন, ‘হে উমর, সমস্ত রাস্তা ফেরেশতাদের দ্বারা ভরে গেছে ।সা’লাবার জন্য এতো ফেরেশতা এসেছে যে আমি ঠিকমত হাঁটার জায়গা পাচ্ছি না।

হায় আর আমাদের অবস্থা, রাসুলুল্লাহর একজন সাহাবী যার বয়স মাত্র ১৬ বছর ছিল।অনিচ্ছাকৃতভাবে একজন মহিলার গোসলের দৃশ্য দেখে ফেলার কারণে আল্লাহর ভয় তাকে পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিল। আহ কতো উত্তম তাকওয়ার অধিকারী ছিলেন এই সোনার মানুষ গুলি।জাস্ট কল্পনা করা যায় না। একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল করার জন্য এতো প্রায়শ্চিত্য করেছেন।খাওয়া-দাওয়া সব ভুলে গিয়ে মৃত্যুর দুয়ারে পর্যন্ত পৌছে গেছেন।গুনাহ-র কাজ করা তো দূরের কথা, গুনাহ না করেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে চেয়ে ব্যাকুল হয়েছেন।কত উঁচু ছিলেন তিনি আল্লাহর চোখে যে তাকে নেয়ার জন্য ফেরেশতাদের আগমনে রাস্তা ভরে গিয়েছিল! এই সব ফেরেশতারা নেমে এসেছে শুধু সা’লাবার জন্য, তাঁর জন্য দুআ করার জন্য, তাকে নিয়ে যাবার জন্য।

আর এ দিকে আমাদের অবস্থা দেখ।ফ্রি মিক্সিং,পর্নোগ্রাফি,সহজলভ্য যৌনতা,পার্কে, এখানে সেখানে সর্বত্রই চোখের জিনার সয়লাব।আর এর মধ্যে সবচেয়ে সহজলভ্য হচ্ছে স্মার্টফোনের মাধ্যমে চোখের খেয়ানত করা।যেটা আমরা প্রতিনিয়ত ইচ্ছা করেই করতেছি।হায় কতো হতভাগা আমরা, রাসুলের সাহাবী অনিচ্ছাকৃতভাবে চোখের খেয়ানতের ভয়ে দিনরাত এক করে চোখের পানি ঝরিয়েছে।আর আমরা রীতিমতো চোখের জিনাটা রুটিন মাফিক প্রকাশ্যে করে বেড়াচ্ছি। গুনা করার পর তওবা করা তো দূরে থাক অনুশোচনাটা ও কাজ করে না।কিন্তু কেন?সেটা কি পরকালের প্রতি জবাবদিহিতার অভাব। নাকি গুনাহ করতে করতে আমাদের অন্তর পাথর হয়ে গেছে।যে অন্তর জাহান্নামের কঠিন আগুন কেও পরোয়া করে না।

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন
‘মু’মিন বান্দার কাছে তার গুনাহগুলো এমন যেন এখনই পাহাড় ভেঙ্গে তার মাথার উপর পড়বে; আর একজন দুর্বৃত্তকারীর কাছে গুনাহ এরকম যে মাছি এসে তার নাকের উপর উড়াউড়ি করছে, আর সে হাত নাড়িয়ে সেটা সরিয়ে দিল’।
[বুখারি, বইঃ৭৫, হাদীস নং ৩২০]

এতক্ষণ তোকে হতাশার গল্প বললাম!এখন বলবো কিছু সম্ভাবনার উপাখ্যান।আমার কথাগুলো শোনার পর হয়তো তোর মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ফিতনার এই মহাবিপর্যয়ের অবস্থার মধ্যে চোখের খেয়ানত থেকেও বা বাঁচার উপায় কি?তার মানে আমরা কি সবাই জাহান্নামে চলে যাব? প্রশ্ন তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক, চারদিকে এত এত ফিতনা ফ্রি মিক্সিং,ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা, পর্নোগ্রাফির মতো বিধ্বংসী ধারালো অস্ত্র। এত এত সমস্যা গুলো কখনোই ব্যক্তিপর্যায়ে এড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা। অনেকেই আছেন এ সসমস্যাগুলো থেকে মুক্তির জন্য প্রচেষ্টায় আছে অথচ ঘুরে ফিরে অবাঞ্ছিত ভাবে সমস্যাগুলো বারবার তাদের সামনে হাজির হচ্ছে।এজন্য হয়তো সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হবে স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে।কিন্তু এ জন্য এ দুটি মাধ্যমকে পুরো দায় বার চাপিয়ে দিয়ে দায় এড়ানো সম্ভব না। তাহলে দায় বার কার? এবার আসা যাক মূল আলোচনায়।

প্রথমত এ সমস্যাগুলো সমাধানের প্রধান উপায় হচ্ছে ১.রাষ্ট্রীয় সংস্কার
২.আধ্যাত্মিক সংস্কার

প্রথমে আসা যাক রাষ্ট্রীয় সংস্থারে। দু একজন লোককে দিয়ে কখনো রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্ভব না। সেক্ষেত্রে আমরা একটা ম্যান্ডেট নিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি।কবুল করার মালিক আল্লাহ।রাষ্ট্রীয় সংস্কার হয়েছে কিনা সেটা বড় কথা নয়।বড় কথা হচ্ছে আমি-আপনি সে রাষ্ট্রীয় সংস্কারে অংশগ্রহণ করেছে কিনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের অন্তরের খবর ভালো জানেন।

তাই আমাদের কাজ হচ্ছে, পর্নোগ্রাফি, ফ্রি মিক্সিং,অবাদ ছেলে মেয়ের মেলামেশা,এসব বিষয়ে বেশি বেশি সচেতনতা সৃষ্টি করা।এবং ধর্মীয় বিষয়গুলো সামনে এনে জনসাধারণকে আল্লাহর ভয় দেখিয়ে এবং এ বিষয়গুলোর কুফল নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি।

যেমনঃলিফলেট,সোশ্যাল মিডিয়া লেখালেখির মাধ্যমে,সিম্পোজিয়াম,সেমিনার,আলোচনা সভা, সর্বোপরি দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে, এ সমস্যা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।বিচ্ছিন্নভাবে না করে দলগতভাবে প্রচেষ্টা করা,অথবা রাষ্ট্রে যে সংগঠন বা দল এ সমস্যাগুলো সমাধানের সবচেয়ে ভালো ভুমিকা রাখছে, প্রচেষ্টা করতেছে তাদের আন্দোলনে শরিক হয়ে জাওয়া। এবং সর্বোচ্চ দাওয়াতি কাজের মাধ্যম নবীর আদর্শের জনবল তৈরি করা। পূর্বে বলেছি আমাদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা কবুল করার মালিক আল্লাহ। মাখলুক হিসেবে আমাদের কাজ হচ্ছে চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা।এতেই মিলবে পরকালে মুক্তি।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আধ্যাত্মিক সংস্কারঃ

এক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেকে সংস্কারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এমন যেন না হয়! রাষ্ট্রীয় সংস্কারে অংশগ্রহণ করে ব্যক্তি নিজ সংস্কারের বিষয়ে গাফেল থাকবেন।আপনি রাষ্ট্রীয় সংস্কার আন্দোলন থেকে ফিরে নিজেই ফিতনায় নিমজ্জিত হয়ে গেলেন। মনের উপর লাগাম দেয়ার কোন প্রকার চেষ্টা-প্রচেষ্টা আপনার ভিতরে কাজ করেনি। আমি বলছি না আপনি একদিনে সব ছেড়ে দিতে পারবেন। কিন্তু মনের উপর লাগাম টানার জন্য আপনাকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।মনে রাখতে হবে আপনি ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সংস্কার অংশ নিয়েছেন অথচ নিজকে সংস্কারের কোন প্রচেষ্টা আপনার ভেতর নেই তাহলে এমন রাষ্ট্রীয় সংস্কার আন্দোলন আল্লাহ পছন্দ করেন না।আল কুরআনের সূরা সফের ২ ও ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

‘হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বলো, যা নিজেরা করো না? আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না।

আবার আপনি ব্যক্তি সংস্কারের সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংস্কারে আপনার কোনো ভূমিকা নেই। সেক্ষেত্রেও আপনার প্রচেষ্টার কবুলের বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়!

আল্লাহ তায়ালা বলেন।
‘‘তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে- আর যা আমি ওহী করেছি আপনাকেএবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে দলাদলি-বিচ্ছিন্নতা করো না।’’[10]

সূরা শুরা: আয়াত ১৩।

এজন্য আপনাকে উভয় ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে সমান ভাবে কাজ করতে হবে।মনে রাখতে হবে দুটি বিষয় একে অপরের পরিপূরক।

ব্যক্তির সংস্কার আমাদের যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা দরকার।

*বেশি বেশি কুরআন হাদিস অধ্যায়ন করা।
*সার্বক্ষণিক দোয়া ও জিকির।
*অসৎ অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা।
*দ্বীনি ভাইদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা।
*একা বাসায় অবস্থান না করা।
*সব সময় অন্তরে জিকির করা আল্লাহ আমাকে দেখছেন।
*সর্বোপরি তওবা ও গুনাহমুক্ত জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

‘যে তওবা করে এবং ঈমান আনে ও পুণ্য-পবিত্র ক্রিয়াকর্ম করে। সুতরাং তারাই, — আল্লাহ্ তাদের মন্দকাজকে সৎকাজ দিয়ে বদলে দেবেন। আর আল্লাহ্ সতত পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা’
[সূরাহ ফুরক্বানঃ ৭০]

এবার আসি মুল কথায়। আমরা প্রত্যেকে নিজেকে প্রশ্ন করি। আমি এতক্ষণ যে বিষয়গুলো বললাম এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি, তুই, কিংবা আমরা কাজ করেছি কখনো।

*প্রথমত ব্যক্তি নিজেকে সংস্কারের চেষ্টা করেছে কিনা।
*দ্বিতীয়ত মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছি কিনা।কয়জন মানুষকে এর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেছি।
*সর্বপরি এ সমস্যাগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধের জন্য কোন প্রকার শ্রম-ঘাম দিয়েছে কিনা, এবং এর সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সংগ্রামে অংশ নিয়েছে কিনা।

যদি কাজগুলো আমরা করে থাকি আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি না করে থাকি তাহলে প্রতিনিয়ত বাসায় বসে গোপনে ও প্রকাশ্যে চোখের খেয়ানত করা।ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার তো দূরের কথা।বরং যারা কোরআনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মাধ্যমে এর সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করেছে তাদের বাড়ি ছাড়া করেছি,মামলা দিয়েছি,ঝুলুম করেছি,তাহলে আপনার আমার জন্য দুঃখ ও আল্লাহর কাছে হেদায়েত কামনা করছি।যেখানে ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা ব্যক্তিকে নিয়ে গ্যারান্টি দেয়া যায় না সেখানে আমি আর তুই?

শেষ কথা বলি বন্ধু

মহান আল্লাহ্ বলেন:
.
(জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাদের জন্য) যারা কোনও অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা নিজেদের প্রতি যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ্ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? (সূরা আলে-ইমরান ৩:১৩৫)

ইতিমধ্যে আসরের আজান কানে আসে,আহ কি এক শান্তির আহ্বান,মুয়াজ্জিন কত ভালবেসে পরম মমতায় মানুষকে জান্নাতের দিকে আহবান করতেছে । এ দিকে আদিব ও নামাজের প্রস্তুতির জন্য জন্য চলে যায়।কিন্তু চুরমার করে দিয়ে গেছে আমার অন্তরকে। তার প্রতিটি কথা গুনাহের ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যাওয়া আমার অন্তরকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে।সূচনা হয়েছে আমার হেদায়েতের পথ এবং হেদায়েতের সূচনা হোক প্রতিটি অন্তরে।

বারবার কে যেন কানে এসে আওয়াজ তুলছে। এখন যদি আমি মরে যাই, কি নিয়ে দাঁড়াবে রবের কাছে।হে রব্ব ক্ষমা করুন আমাদের।

শিক্ষাঃ
১.বাসায় একা একা বেশিক্ষণ অবস্থান করা যাবে না।
২. গুনাহ করার পর কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
৩.দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নেয়া ফরজ।

Leave a Reply