You are currently viewing তাহাজ্জুদের সাথে হোক নিবিড় সম্পর্ক। তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত

তাহাজ্জুদের সাথে হোক নিবিড় সম্পর্ক। তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত

আমার দ্বীনদার ভাই ও বোন দেখতে দেখতে ১০ টি সিয়াম শেষের পথে, এ রমজান তাহাজ্জুতের সাথে সম্পর্ক রাখছেন তো? মনে রাখবেন তাহাজ্জুতেই মিলে সন্মান, তাহাজ্জুতেই আছে প্রাচুর্য,তাহাজ্জুদ রবের সাথে করে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

আমাদের অনেক ভাই বোন আছেন তাহাজ্জুদ পড়তে চাচ্ছেন কিন্তু নানান কারণে হয়ে উঠছে না, তারা এ রমজানকে কাজে লাগিয়ে তাহাজ্জুদের অভ্যাস করে নিতে পারেন। আর এ জন্য প্রথমে আপনাকে আন্তরিকতা নিয়ে, খালেস নিয়তে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। নিয়তে ত্রুটি থাকলে আপনি তাহাজ্জুদ পড়তে পারবেন না।

কিয়ামুল লাইল আর তাহাজ্জুদের মধ্যে পার্থক্য আছে। রাতে জেগে থেকে ইবাদত করলে কিযামুল লাইলের ফজিলত পাওয়া যায়।আর তাহাজ্জুদ রাতে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর, জাগ্রত হয়ে সালাতে দন্ডায়মান হওয়াকে বুঝায়।

শেইখ ইবন বায (রহ:)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়ে ছিল: তারাবী, কিয়াম এবং তাহাজ্জুদের মধ্যে পার্থক্য কি? অনুগ্রহ করে আমাদের উপদেশ দিন, আল্লাহ্‌ যেন আপনাকে উত্তম প্রতিদান দেন।তিনি বলেছিলেন: রাতের নামাযকে তাহাজ্জুদ অথবা কিয়াম আল-লাইল বলে, যেহেতু আল্লাহ্‌ বলেছেন:রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন নামাযে। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত (তাহাজ্জুদ নামায, নফল), হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন…[সূরা আল-ইসরা, আয়াত-৭৯]

তাহাজ্জুতের রয়েছে অনন্য ফজিলত ও গুরুত্ব।

তাহাজ্জুদে মেসোয়াক করা জরুরি। হযরত আলী রা. বলেন-কেউ যখন রাতে তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য ওঠে এবং মিসওয়াক করে ওযু করে, অতঃপর নামাযে দণ্ডায়মান হয় তখন ফিরিশতা তিলাওয়াত শোনার জন্য পিছনে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর ফিরিশতা তার নিকটবর্তী হতে থাকে; একপর্যায়ে খুব নিকটে চলে আসে এবং ব্যক্তির মুখে মুখ রেখে দেয়। তখন সে যা তিলাওয়াত করে ফিরিশতার উদরে চলে যায়। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৮১০; ফাযলু কিয়ামিল লাইল, আজুররী, হাদীস ৩৫

 

প্রিয় ভাই ও বোন আমার, গভীর রাত,সবাই এখন আরামের নিদ্রায়। আপনি আরামের নিদ্রা ত্যাগ করেছেন কেবল আপন রবের সান্নিধ্য লাভের জন্য। হাঁ, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- এসময় স্বয়ং আল্লাহ বান্দার নিকটবর্তী হয়ে যান। এমন সময় যদি আমিও আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করি তাহলে খুব সহজেই লাভ হবে রবের সান্নিধ্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ.

রাতের শেষভাগে রব তাঁর বান্দার খুব নিকটবর্তী হন। যদি পার, ওই সময় আল্লাহর যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও! -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১২৭৭

ওহ আমার প্রিয় বন্ধু রাতের শেষ প্রহরে : রব তোমাকে ডাকছেন! তোমার দোয়া কবুল হওয়া দরকার? তোমার রব তোমাকে ডাকছেন!তোমার রিজিক দরকার? তোমার রবব তোমাকে ডাকছেন!তোমার সম্মান দরকার? তোমার রবব তোমাকে ডাকছেন!,রবব তোমার কথা শুনার জন্য, তোমাকে ডাকছেন,তোমার কি প্রয়োজন তা তোমার রব শোনার অপেক্ষায় আছেন। আর কতোইনা মোহান আমাদের রবব।মানুষের কাছে বললে মানুষ বিরক্ত হয়। কিন্তু আমাদের রব কখনো ক্লান্ত হন না বান্দার চাওয়া পাওয়ায়।

রাতের শেষ প্রহরে দোয়া কবুল হয়, আল্লাহর হাবিব বলেন, আমাদের রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছো, দুআ করবে আমি তার দুআ কবুল করব। কে আছো, আমার কাছে (তার প্রয়োজন) চাইবে আমি তাকে দান করব। কে আছো, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮

দোয়া কবুলের সবচেয়ে বড়ো মাধ্যম তাহাজ্জুদ। তাই আসুন, তাহাজ্জুদের প্রতি যত্নবান হই। নিজে অভ্যস্ত হই। অন্যকেও উৎসাহিত করি এবং সহযোগিতা করি।

সুযোগ থাকলে পরিবার নিয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করুন।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

সে ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ রহম করুন, যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে, তারপর স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয় এবং সেও সালাত আদায় করে। স্ত্রী যদি উঠতে না চায় তখন তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে হলেও উঠানোর চেষ্টা করে। তদ্রƒপ ওই নারীর প্রতি আল্লাহ রহম করুন, যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে তারপর স্বামীকে জাগিয়ে দেয় এবং স্বামী উঠে সালাত আদায় করে। স্বামী উঠতে না চাইলে চেহারায় পানি ছিটিয়ে হলেও তাকে উঠানোর চেষ্টা করে। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৩০২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৩৬

আরেক হাদীসে এসেছে, স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরকে জাগিয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করে তাহলে আল্লাহ তাদেরকে যাকিরীনের মধ্যে গণ্য করেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য রাতে ওঠে এবং স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়; অতঃপর দুজনে একসাথে দুই রাকাত নামায আদায় করে তাদেরকে যাকিরীনের মধ্যে গণ্য করা হয়, যারা বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৩০৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৩৫

প্রিয় ভাই তাহাজ্জুদ মুমিনের মর্যাদার সোপান।
জিবরীল আলাইহিস সালাম একদিন নবীজীকে একটি অসাধারণ দর্শন জানালেন-হে মুহাম্মাদ! মুমিনের মর্যাদা কিয়ামুল লাইল- রাতে দাঁড়িয়ে নামায আদায় ও বিভিন্ন বন্দেগীর মধ্যে, আর তাঁর সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৯২১; আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৪২৭৮

কিয়ামুল লাইল হোক জীবনের অংশ!

রমযান মাস মুমিনের জন্য আমলের বসন্ত। রমযান সঞ্চার করেছিল আমাদের হৃদয়ে আমলের প্রেরণা ও স্পৃহা। রমযানে সাহরিকে কেন্দ্র করে অনেকেই কমবেশি তাহাজ্জুদের আমল করতে পেরেছি, আলহামদু লিল্লাহ! বিদায় রমযান, কিন্তু তার অনেক আমলই অব্যাহত রাখা যায় বারো মাস।আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

সাইদুল ইসলাম সজীব
২১/৩/২০২৪

Leave a Reply