You are currently viewing দাজ্জালি মুদ্রা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কথা।

দাজ্জালি মুদ্রা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কথা।

মনে করুন, সুইস ব্যাংকে আপনি দশ মিলিয়ন ডলার জমা করে রেখেছেন। কিংবা আপনার হাতে আছে একটি ক্রেডিট কার্ড, যা দিয়ে যেকোনো সুপার শপ থেকে যেকোনো সময় আপনি ইচ্ছেমতো পণ্য ক্রয় করতে পারেন। আপনি নিজেকে অনেক ধনী ভাবছেন। ভবিষ্যৎ-সংকটে এটাকে শক্তিশালী রিজার্ভ মনে করছেন। ক্রেডিট কার্ড নিয়ে অনেক ফুরফুরে মেজাজে আছেন। নিশ্চিন্তে রঙিন জীবনের প্ল্যান সাজিয়ে চলছেন। কিন্তু হায়, যদি জানতেন যে, আপনি কত বড় ভুলের মধ্যে আছেন! শুধু ভুলই নয়; এ যে এক মহাভুল! দুঃসময়ে যে মহাভুলের মাশুল গোনারও সুযোগটুকু পাবেন না। আপনার এ দশ মিলিয়ন ডলার যেকোনো মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যেতে পারে। হয়ে যেতে পারে সব হঠাৎ করেই মূল্যহীন কিছু কাগজ। কোনো এক সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনবেন, আপনার জীবনের সঞ্চিত সব ডলার আজ থেকে কেবলই কাগজের কিছু টুকরো। জি হ্যাঁ, কেবলই কাগজের টুকরো; বরং তার চাইতেও মূল্যহীন। আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই তো! পাগল ভাবছেন? জি না, আমি ভুল বলছি না, পাগলামিও করছি না। আপনাকে শোনাচ্ছি আমি আশু বিপর্যয়ের এমন কিছু তিক্ত সত্য, যে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই উদাসীন।

পৃথিবীতে মজুত সমুদয় স্বর্ণের বিরাট একটি অংশই আজ আমেরিকার হাতে। পৃথিবীতে সর্বাধিক স্বর্ণের মালিক আমেরিকার হাতে রয়েছে ৮১৩৪ টন স্বর্ণ। দ্বিতীয় সর্বাধিক স্বর্ণের দেশ জার্মানির হাতে রয়েছে ৩৩৬৭ টন স্বর্ণ। এরপর ইতালির কাছে রয়েছে ২৪৫২ টন, এরপর ফ্রান্সের কাছে ২৪৩৬ টন, এরপর রাশিয়ার কাছে ২২১৯ টন, এরপর চীনের কাছে ১৯৩৭ টন, এরপর সুইজারল্যান্ডের কাছে ১০৪০ টন, এরপর জাপানের কাছে ৭৬৫ টন, এরপর ভারতের কাছে ৬১৮ টন, এরপর নেদারল্যান্ডের কাছে ৬১৩ টন। দেখা যাচ্ছে, স্বর্ণ মজুতের তালিকায় বিশ্বের প্রথম দশটি রাষ্ট্রের মধ্যে কেবল আমেরিকার হাতেই রয়েছে এক তৃতীয়াংশের বেশি স্বর্ণ। এত স্বর্ণ সে পেল কোথায়? নিজেরা স্বর্ণ তৈরি করেছে? নিজ দেশের খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলন করেছে? জি না; বরং সে লুট করেছে। বলা যায়, এক প্রকারের ডাকাতি করেছে। বিশ্বকে ডলার নামে কিছু কাগজের টুকরো দিয়ে বিনিময়ে তারা স্বর্ণ গ্রহণ করে নিজ দেশে গড়ে তুলেছে স্বর্ণের বৃহৎ মজুত। কিন্তু কীভাবে সে বিশ্বকে বোকা বানিয়ে এটা চালু করল? সে এক ভিন্ন ইতিহাস । আমি সেদিকে যাচ্ছি না ।

আপনি কি জানেন, ডলারের পিছনে বিশ্বের রথী-মহারথীদের সুদূরপ্রসারী কী ভয়ংকর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে? আজকের পোস্টে শুধু সতর্ক করা উদ্দেশ্য, দীর্ঘ আলোচনার অবকাশ নেই। সংক্ষেপে এতটুকু জেনে নেওয়াই যথেষ্ট যে, নানা দেশে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ করা সত্ত্বেও আমেরিকা আজ পর্যন্ত যতটুকু টিকে আছে, তা শুধু এ ধোঁকাপূর্ণ ডলারব্যবস্থার কারণেই। যদিও ইদানিং তাদের অর্থব্যবস্থায় বড় ধরনের ধস নামতে যাচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত বিশ্বকে বোকা বানানোর যতগুলো কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে, তন্মধ্যে ডলারভিত্তিক এ মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলনটা ছিল সবচেয়ে ভয়ানক, সূক্ষ্ম ও ক্ষতিকর। আজ যদিও বিশ্বের অনেক দেশ ধোঁকাপূর্ণ এ ব্যবস্থার বিষয়টি বুঝতে পারছে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। রাশিয়া, চীন, ইন্ডিয়াসহ এ মুহূর্তে সবাই গোল্ড জমা করার চেষ্টায় নেমেছে। আর জনগণ যেন এ ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ হওয়ার অবকাশ না পায়, তারা যেন গোল্ডের পিছনে না ছোটে, সেজন্য দাজ্জালি মিডিয়াগুলো বিভিন্নভাবে গোল্ড কিনতে অনুৎসাহিত করছে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও এর ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।

আমেরিকা আজ ডলারকে বাতিল ঘোষণা করে গোল্ড সিস্টেম মুদ্রা চালু করলে আমি আপনি সবাই হয়ে পড়ব কর্পদহীন পথের ফকির। আপনার দশ মিলিয়ন ডলার দিয়ে শুধু ঘরের দেয়ালটাই সাজাতে পারবেন, আর কিছু নয়। এ আশঙ্কা এতদিন হালকাভাবে দেখা হলেও বর্তমান বিশ্বের নানা প্রেক্ষাপটে এটা এখন ভয়ংকর এক বাস্তবতা হয়ে দেখা দিচ্ছে। বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন সাদ্দাম হোসেনের সরকার পতনের পর নতুন দিনার ইস্যু করা হলো, তখন পুরাতন সব দিনার হয়ে গেল একেবারে মূল্যহীন। মানুষ তাদের দিনারের নোটগুলো রাস্তায় ফেলে দিল। এক টুকরো সাদা কাগজের মূল্যও ছিল না সেগুলোর! কারণ, ওই দিনারগুলো দিয়ে আর কোনো লেনদেন করার সুযোগ ছিল না। অনুরূপ করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক বিপর্যয় ও অর্থনৈতিক নানা সমস্যার কারনে এদেশের অর্থব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসতে পারে। আর সেটা হলে আপনিও কিন্তু বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আপনার টাকাগুলো যেকোনো মুহূর্তে মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে; যেমনটি ভারতে একবার ঘটেছিল। আর ব্যাংক যদি দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়, তাহলে আপনার সারাজীবনের কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের কী অবস্থা হবে, তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অনুসারে শীঘ্রই হয়তো কাগজের মুদ্রাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এটার সূচনা হতে পারে আন্তর্জাতিকভাবে ডলারভিত্তিক লেনদেন বাতিল হওয়ার মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন ঘটনাবলী ও নিদর্শন থেকে অনুমেয় হচ্ছে, অচিরেই হয়তো বৃহৎ শক্তিগুলোর মাঝে যুদ্ধ শুরু হবে। হাদিসে বর্ণিত মালহামা বা রক্তক্ষয়ী মহাযুদ্ধের কালও সন্নিকটে মনে হচ্ছে। করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এ ব্যাপারে কারও সন্দেহের অবকাশ নেই। এছাড়াও বিভিন্ন দুর্যোগ, ভূমিকম্প, সিস্টেম ক্রাশ বা বিদ্যুৎ ও নেটব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেলে ব্যাংকে রাখা টাকাগুলো যে সব জলে যাবে, সেটাও সুনিশ্চিত। এগুলো শুধু সম্ভাবনার কথাই বলছি না; বাস্তবেই ঘটতে পারে বলে এ ব্যাপারে অনেক বিশেষজ্ঞ ও গবেষক কঠিনভাবে সতর্ক করেছেন। সবগুলো বিষয় সামনে রাখলে বিবেকবান মাত্রই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে, ব্যাংকে কাগুজে টাকা রাখা ও এর ওপর নির্ভর করে বসে থাকাটা কত বড় বোকামি! বুঝতেই পারছেন, ফালতু এই কাগুজে মুদ্রাব্যবস্থার কারণে আমরা কতটা রিস্কের মধ্যে আছি!? এটা ঠিক যে, জঘন্য এ ডলারব্যবস্থা বা কাগুজে মুদ্রা আমরা এখন ইচ্ছে করলেও পরিবর্তন করতে পারব না। তবে আমরা সবাই সচেতন হয়ে কমপক্ষে নিজে বা নিজের ঘনিষ্ঠদের তো সর্তক করতে পারি।

শীঘ্রই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে। সে পৃথিবীর সব সম্পদ নিজ হাতে নিয়ে নেবে। তখন মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে হবে খাদ্য ও পানির সংকট। প্রস্তুতিহীন দুর্বল ইমানদাররা ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির হয়ে দাজ্জালকে নিজেদের ইলাহ ও রব হিসেবে মেনে নেবে। অথচ তারা যদি আগ থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন থাকত, হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখত, তাহলে সে কঠিন মুহূর্তে তাকে ইমান হারাতে হতো না। তাই এখনই সঠিকভাবে আর্থিক পরিকল্পনা করে রাখুন। মনে রাখবেন, দেশের সরকার বহাল থাকুক বা না থাকুক, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসুক বা না আসুক, মুদ্রাব্যবস্থা ভেঙে পড়ুক বা না পড়ুক, সর্বাবস্থায় আপনার স্বর্ণ, রূপা ও ভোগ্য পণ্যসমূহের মূল্য কখনোই পরিবর্তন হবে না। কারণ, এগুলোর নিজস্ব মূল্য (সেলফ ভ্যালু) ও উপযোগ আছে। কেউ চাইলেও তা বাতিল করতে পারবে না।

মুদ্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এটার নিজস্ব মূল্য বা তার উপযোগ থাকতে হবে এবং তা কখনো মূল্যহীন বস্তু (যেমন, কাগজ) হতে পারবে না। স্বর্ণ-রূপা এমন দুটি পদার্থ, যা মানবসভ্যতার শুরু থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত মূল্যবান হিসেবে পরিগণিত। এ দুটি জিনিস কখনো ভ্যালু হারিয়ে মূল্যহীন হবে না। অনুরূপ চাল-ডাল, গম, চিনি, আটা, লবণ ইত্যাদি প্রতিটি ভোগ্য পণ্যের নিজস্ব উপযোগ আছে এবং তা হলো আমাদের ক্ষুধা মেটানোর ক্ষমতা। এমন নয় যে, সরকারের অধ্যাদেশে এসব ভোগ্য পণ্যের উপযোগ কখনো বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই পৃথিবীর যেখানেই যান না কেন, প্রতিটি ভোগ্য পণ্যের উপযোগ প্রায় একই থাকে, অর্থাৎ তাদের নিজস্ব একটি মূল্য সব সময়ই থাকে। একইভাবে গবাদি পশু-পাখির কথাও বলা যায়। এগুলোর উপযোগেও তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না।

আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চৌদ্দশ বছর পূর্বেই উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে গেছেন। তিনি ইরশাদ করেন :

‘মানুষের সামনে নিশ্চিতই এমন এক সময় আসবে, যখন দিনার (গোল্ড) ও দিরহাম (সিলভার) ছাড়া কোনো কিছুই কাজে আসবে না।’ (মুসনাদু আহমাদ : ১৭২০১)

মুজামে কাবিরের বর্ণনায় এসেছে :

‘মানুষের সামনে এমন একটি সময় আসছে, যখন যার কাছে হলুদ (গোল্ড) ও সাদা (সিলভার) বস্তু থাকবে না, সে স্বাচ্ছন্দ্যে নিদ্রাও যেতে পারবে না।’ (আল-মুজামুল কাবির : ২০/২৭৮)

আরেকটি সনদে এভাবে বর্ণিত হয়েছে :

‘যখন শেষ জমানা আসবে তখন লোকদের দিনার (গোল্ড) ও দিরহাম (সিলভার) ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। (মুমিন) লোক তখন এগুলোর দ্বারা তার দ্বীন ও দুনিয়ার সকল বিষয় পরিচালনা করবে।’ (আল-মুজামুল কাবির : ২০/২৭৯)

সনদগত দিক থেকে হাদিসগুলো যদিওবা একটু দুর্বল, তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও বর্তমান বাস্তবতা আমাদের সামনে হাদিসের সত্যতা দিন দিন স্পষ্ট করে তুলছে। স্পষ্টভাবেই আমরা বুঝতে পারছি, কাগুজে মুদ্রা ও ডলারের অন্ধকার ভবিষ্যৎ। আমাদের সামনে কী যে মহাসংকট ও দুর্যোগ অপেক্ষা করছে, তা কল্পনা করতে গেলেও শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে! তাই এখন কে কত দ্রুত সবকিছু সামলে নেবে, সেটাই দেখার বিষয়। এক যুগ আগে একসময় আমারও বুঝে আসত না যে, মানুষ কেন গণহারে দাজ্জালকে রব বলে মেনে নেবে। পরে আস্তে আস্তে বিষয়টি ক্লিয়ার হতে থাকে। আর এখন তো আলহামদুলিল্লাহ, এটা সূর্যের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে। বস্তুত দাজ্জালের ফিতনার বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে অনেকদিন আগেই। এখন কেবল পূর্ণতায় পৌঁছতে বাকি। আর পূর্ণতায় পৌঁছতেও বেশি সময় নেই বলে মনে হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা-ই ভালো জানেন।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সব ধরনের ফিতনা থেকে হিফাজত করুন এবং এসব ব্যাপারে সজাগ থেকে অগ্রীম প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফিক দান করুন। (আমীন)
আমার সিক্রেট এনালাইসিস।

সাইদুল ইসলাম সজীব

This Post Has 0 Comments

  1. Farhana

    sotti bolcen

  2. yeasin

    sothik bolcen

Leave a Reply