You are currently viewing আদিপের মিশন —–একটি ইসলামিক উপন্যাস। সাইদুল ইসলাম সজীব। পর্বঃ০১

আদিপের মিশন —–একটি ইসলামিক উপন্যাস। সাইদুল ইসলাম সজীব। পর্বঃ০১


ফাতেমার বিয়ে হলো কিছুদিন হইছে এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সাথে। কতো সুন্দর ছিলো তাদের দাম্পত্য জীবন।সব জায়গায় ছিলো প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে
সব জায়গায়।কিন্তু তাদের এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার হাজবেন্ড মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারতেছে না ফাতেমা।সামির মৃত্যুর পর ফাতেমা আর শশুর বাড়ি যায়নি। সে এখন তার বাবার বাড়িতেই থাকে।কেমন জানি নিজকে একাকী করে রাখছে।

মুখে চিন্তার রেখা নিয়ে অফিসে চেয়ারে হেলান দিয়ে কথাগুলো ভাবতেছে আদিপ।তার মনে অস্থিরতা বিরাজমান। মন চাচ্ছে ফাতেমার জন্য কিছু করতে। কিন্তু কি করবে? সে বেবে পাচ্ছে না!আর এ দিকে তার কলিগ ডাঃমাহমুদ তাকে ডেকে অস্থির, হসপিটালের একটা মিটিং যাওয়ার জন্য।সেখানে ডাঃ আদিব ও অংশ নেয়ার কথা।কিন্তু আদিব যেনো গবীর কুমায় আছে। চিন্তার ইতি কাটলো ডাঃ মাহমুদ আদিপের কাঁদে হাত দেয়ায়।চমকে উঠে দাড়িয়ে ওহ হ্যাঁ চল চল মিটিং এর দেরি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুরো মিটিং একটু ও মনোযোগ দিতে পারছেনা ডাঃ আদিপ।

সকল ভাবনার অবসান কাটিয়ে আদিব ফাতেমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আদিপের কথা শুনে তো তার পিতামাতা ও ফাতেমার অাব্বু আম্মু রেগে আগুন। কারন ফাতেমার আম্মু আদিপের খালাতো বোন,)সবাই আদিপের উপর ক্ষেপে যায় এই ছেলে বলেটা কি???

অনেক কষ্টের পর একটা সময় কুরআন হাদিসের রেফারেন্সে দেখিয়ে আদিপ তার পিতামাতাকে রাজি করায়।কিন্তু বিপত্তি ফাতেমার পরিবার নিয়ে তারা কিছুতেই রাজি না!!! এবং উল্টো আদিপকে ফাতেমার আব্বু ধমক দেয়। তার পরেও আদিফ একটু ও বিচলিত না। সে চেষ্টা করতে থাকে তাদেরকে বুঝানোর।

আদিপ : ফাতেমার আব্বুকে লক্ষ্য করে!! দেখেন আপনি তো ফাতেমাকে একজন দিনদার ছেলের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছেন তাই না?তাহলে আমার কাছে আপত্তি কিসে!!

ফাতেমার আব্বু : আপত্তি কিসে তুমি জানোনা?মানলাম তুমি ধার্মিক । কিন্তু তুমিতো ফাতেমার সম্পর্কে মামা হবে।মামা ভাগ্নিকে কিভাবে বিয়ে করে বলতো?

আদিপ : ওহ এই কথা!!

আচ্ছা দরুন আমি যদি ফাতেমার চাচাতো বা খালাতো ভাই হতাম তাহলে আপনি কি আমাদের বিয়েতে বাধা দিতেন?

ফাতেমার আব্বু: হ্যাঁ হয়তো দিতাম না!তো?

আদিপ:আসতাগফিরুল্লাহ বোনকে ভাইয়ের কাছে কিভাবে বিয়ে দিবেন? কী বলছেন এসব?

ফাতেমার আব্বু: এই আদিপ তোমার কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে নাকি?
কি বলছো এসব হ্যাঁ?খালাতো বোন, চাচাতো বোনকে বিয়ে করা যায় এটা তুমি জানোনা?তুমি নাকি আবার ইসলামি আন্দোলন করো?

আদিপ:জ্বি এবার আসছেন মুল কথায়!
আমি, আপনি বা আমরা জানি আপন ভাই বোনকে বিয়ে করা ইসলাম ধর্ম অনুসারে হারাম।কিন্তু চাচাতো ভাই, বোনকে, বিয়ে করা বৈধ কারন তারা আপন না!

ঠিক একই নিয়মে মাতৃদুগ্ধ বোনের মেয়ে, অর্থাৎ ভাগ্নীকে ও বিয়ে করা ইসলামে হারাম হিসেবে সাব্যস্ত করা আছে । কিন্তু চাচাতো, খালাতো, বোনের মেয়েকে বিয়ে করা যায়। কারন তারা মাতৃদুগ্ধ বোনের মেয়ে না।তারা নন মাহরাম।ইসলামের আইন হচ্ছে তাদের সাথে পর্দা করতে হবে। ফাতেমা আমার ভাগ্নি কিন্তু আপন না!তাকে বিয়ে করা শরিয়ত অনুযায়ী হালাল ।

বুঝার জন্য বলতেছি আরব রাষ্ট গুলোতে এমন ভাই, ভাগ্নি বলে কিছুই নেই।যদি চাচাতো ভাইদের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে পারেন,তাহলে আমার বেলায় কেন বাধা দিচ্ছেন বলুন?

ফাতেমার আব্বু : তুই বুঝস না কেন বাধা দিচ্ছি…? সমাজ বলে একটা কথা আছে। ফাতেমা যে বিধবা, আবার তার চেয়ে বড় কথা,,,,,,,,সমাজে এসব প্রচলিত নেই। সমাজ কি বলবে?

আদিপ : আপনি আমাকে কোন সমাজের কথা বলছেন।…..যে সমাজ একটি বিধবা মেয়েকে তাচ্ছিল্য করে আপনি সে সমাজের কথা বলছেন..?… নবীজি (সঃ) যখন খাদিজা রঃ কে বিয়ে করেন তখন খাদিজা (রাঃ) বিধবা ও নবীজী থেকে বড় ছিলেন। রাসুল নিজ কন্যা ফাতেমাকে উনার আপন চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন।আপনারা কি জানেন না? কিন্তু আজকের সমাজ এসব বৈধ বিষয়কে অবৈধ বানিয়ে ফেলছে।

ইসলামের আইন হচ্ছে যে কাছে রাসুল করেছেন এমন কাজ যদি কেউ অন্তরে নুন্যতম হীনমন্যতা বা অপছন্দ করে তার ঈমান থাকবেনা। মাজের এই কুসংস্কার/অপসাংস্কৃতি কে তো আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।

তাছাড়া ও বিধবা হয়েছে ঠিকই কিন্তু ওর গুন রুপ কিচ্ছুই কমেনি।তাহলে ফাতেমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে কেন মেনে নিবেন না? আদিপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাতেমার বাড়ি ত্যাগ করে । বাসায় এসে তার মাকে জিজ্ঞেস করে মা আপনার কি সিদ্ধান্ত?

আদিপের মা : দেখ বাবা… তোর ভালো তোর কাছে। তোর যা ভালো মনে হয় কর, আমার আপত্তি নাই।

আদিপ : আলহামদুলিল্লাহ মা আপনি শুধু দোয়া করবেন…

আদিব একজন বড় আলেম কে দিয়ে(মাওলানা আবদুল মাজেদ) ফাতেমাদের পরিবারের প্রস্তাব পাঠায়। ওই আলেম অনেক বুঝানোর পরে প্রথমে রাজী না হলেও নানাবিধ আলোচনা চিন্তাভাবনার পর ফাতেমার আব্বু রাজি হয়।

কিন্তু বিপত্তি বাধালো ফাতেমা। সে এখন বিয়ে করবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। ফাতেমার এ জবাব আদিপকে খুব কষ্ট দেয়। এত কষ্ট করে মুরুব্বিদের রাজি করিয়েছে,আর এখন মেয়ের বিয়েতে অমত।

আদিপ ফাতেমার ফ্যামিলি তে খবর পাঠায়,সে ফাতেমার সাথে কথা বলবে। আদিপ ফাতেমাদের বাসায় যায়।ফাতেমা আসলো খুব সান্ত ভাবে।

ফাতেমার আব্বু :তোমরা কথা বলো আমি আসতেছি!

আদিপঃনা আপনিও থাকেন. এভাবে একা কথা বলা শরীয়ত পরিপন্থী কাজ,আপনি বসুন।

আদিপঃ আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই।আপনি আমাকে ১ম বিয়ের আগে পছন্দ করতেন।তখন যেহালতের কারণে বুঝিনি। ভাবছি আপনি আমার ভাগ্নি কিন্তু এখন তো বুঝেছি আমি রাজি এবং সবাই রাজি। তাহলে আপনার আপত্তি কিসের?

ফাতেমাঃ আপনি জানেন না আপত্তি কিসে??? আমি বিধবা, আর সমাজ বলে একটা কথা আছে তাই না?

আদিপ: সমাজ…..? বিয়ে তো আপনি আমায় করবেন সমাজ কে না!সমাজ ধর্মের খারাপ লোকেরা কে কি বলল সেটা বড় কথা নয়!আমি আপনাকে স্ত্রী হিসেবে কতটুকু সম্মান করবো তা হলো বড় কথা।তাছাড়া নবীজী সঃ যখন খাদিজা রঃ কে বিয়ে করেন, তখন খাদিজা রাঃ উনার থেকে বয়সে বড় ছিলেন আর বিধবা ছিলেন!

ফাতেমাঃ হয়ছে.. আর বলতে হবে না, অনেক বেশি বুঝে গেছেন, যদি বিয়ে করতে চান এ সপ্তাহ করতে হবে রাজি?

আদিপঃআলহামদুলিল্লাহ আমি রাজি…শুকরিয়া জানাচ্ছি আপনাকে!

আদিপ জেনারেল শিক্ষত ছেলে,কিন্তু তার ভিতরে ধর্মের প্রতি মহব্বত আছে। এলাকার সবাই তাকে ভালো ছেলে হিসেবে জানে। তাই ফাতেমার পরিবার না করেও করতে পারেনি। তাছাড়া নবীজী সঃ এর উদাহরণ দেওয়াতে না রাজি হয়ে পারে নাই।ফাতেমার ও ধর্মের প্রতি টান আছে আলহামদুলিল্লাহ। এখন প্রয়োজন একজন প্রাক্টিসিং ইসলাম পালন করা জীবন সঙ্গি।

ইশার পর মসজিদে আদিপ, ফাতেমার বিয়ে।খুব অল্প মোহরানায় তাদের বিয়ে হয়। যে বিয়েতে খরচ কম সেই বিয়ে বরকত ময়””বিয়ের পর আদিপ ফাতেমাদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার পর ফাতেমার আব্বু আম্মু ও ছোট ভাইদের থেকে বিদায় নিয়ে তাদের বাড়ি চলে আসে।


আদিপের মা ফাতেমা কে আদিপের রুমে নিয়ে যায়।

আদিপের মাঃ এটা আদিপের রুম। এটা এতদিন শুধু আদিপের ছিল এখন থেকে এটা তোমার ও রুম।বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আদিপের সা ফাতেমাকে রেখে চলে আসে!

কিছুক্ষণ পর আদিপ রুমের সামনে আসলো.. সালাম দিলো… ঘরে ডুকলো..তারপর দরজা লক করলো.
আদিপঃ কেমন আছেন?
কোন রিপ্লাই নাই… কি ব্যপার কথা বলছেন না কেন..? নাকি আমার উপর এখনো রেগে আছেন।

ফাতেমাঃকি বলতাম আপনি কেন বিয়ে করেছেন আমায় হ্যা, আমার থেকে আপনি কি পাবেন?

আদিপঃভালাবাসা.. পারবেন ভালোবাসা দিতে? যেভাবে নবীজি সঃ কে খাদিজা রঃ ভালোবেসে ছিলেন নবীজির বিপদের সময় খাদিজা রাঃ যেভাবে নবীজী কে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রেখেছেন,সাহস জুগিয়েছেন. পারবেন আমায় সেবাবে ভালোবাসতে! সমাজের সবাই আমার বিপক্ষে চলে গেলেও পারবেন আমায় ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতে,??পারবেন সাহস দিতে আমার লক্ষে পৌছতে..???

ফাতেমাঃআপনার কিসের লক্ষ্য.??

আদিপ:জানেন এই বুকে অনেক সপ্ন নিয়ে চলি.এই সমাজ থেকে একদিন ফেতনা ফ্যাসাদ, কুসংস্কার অপসাংস্কৃতি ইত্যাদি ধুলিস্যাত হবে।মানুষের ভিতর পরনিন্দা ইত্যাদি চলে যাবে…. আমার লক্ষ্য চারদিকে শুধু নবীজী সঃ এর আদর্শ বাস্তবায়ন হবে… থাকবেনা কোন ধনী গরীবের মাঝে ভেদাভেদ.
একথা গুলো শুনতে শুনতেই চোখে পানি চলে আসে.ফাতেমার। নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে আদিপের হাত ধরে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে এবং কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বলে। পারবো ইনশাআল্লাহ আপনার লক্ষে পৌছাতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো…

আদিপঃআরে.. আমি তো এখনো আপনার মোহরানা পরিশোধ করিনি ,এখন আপনাকে স্পর্শ করা উচিৎ হবে না…

শিক্ষাঃ

১ঃনবীজির সঃ এর বেশি সংখ্যক স্ত্রী ছিলেন বিধবা তাই বিধবা বিয়া করা ও সুন্নত।আমাদের সমাজে বিধবা বিয়ে করাকে হেও চোখে দেখে তা মোটেও উচিৎ না

২ঃমসজিদে বিয়ে করা সুন্নত

০৩ঃবিয়ের পর খেজুর ছিটাননো সুন্নত। হযরত
আশরাফ আলী থানভী রঃ বর্তমানে খেজুর ছিটানো নয় বরং বন্টন করাই ভালো বলে মত প্রকাশ করেছেন।

০৪ঃরাসূলুল্লাহ উনার মেয়েকে আপন চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিয়ে দিয়েছেন, যেটি সচরাচর দেখা যায় না এখন। এটি ও একটি সুন্নাহ।

চলবে,,,, ইনশাআল্লাহ,,,

Leave a Reply