You are currently viewing আমার বন্ধু আদিপ। পর্বঃ০১ (সালাম)

আমার বন্ধু আদিপ। পর্বঃ০১ (সালাম)

কিছুদিন আগের কথা, কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময়। দুইজন মাদ্রাসা স্টুডেন্টের সাথে দেখা হয়েছিল। তাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় ফিরছি।এরমধ্যে আমাদের পাশ দিয়ে বয়োবৃদ্ধ একজন পাঞ্জাবি পরা লোক সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন।আমাকে দেখে আসসালামুআলাইকুম আদিপ,কেমন আছো বাবা বলে ডাক দিলেন। আমি ঠিক সাথে সাথে উনাকে চিনতে পারিনি। ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।

কিন্তু মাথার ভিতর শুধু উনার কথা ঘুরঘুর করছিল। কে উনি? আমাকে সালাম দিলো, নাম দরে ডাকলো। কিন্তু আমি ওনাকে চিনি কিনা মনে করতে পারতেছিনা।পরক্ষণে মনে পড়ল উনি বাবার বন্ধু,বাবার সহপাঠী ছিলেন। বছর দুয়েক আগে একটা অনুষ্ঠানের উনার সাথে পরিচয় হয়েছিল। আফসোস এবং পরিতাপ মুহূর্তে সারা মন ছুয়ে গেল। মন ফিরে গেলে সেই অতীতের দুই বছর আগের কথা।বাবা উনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য আমাকে ডাকলেন।আশ্চর্য ব্যাপার ছিল সেদিন ও উনি আমাকে আগে সালাম দিয়েছেন,আমি দিতে পারিনি। পরক্ষণে লজ্জা অনুভব করেছি।এবং বাবার কাছে তিরস্কার এবং এবং বৎস্বানার শিকার হয়েছি।

আকস্মিক ঘটনা সত্যিই আমাকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়।নিজকে বারবার ধিক্কার দিচ্ছি, হায় আদিপ একজন বয়োবৃদ্ধ তোর বাবার বন্ধুর সাথে তোর দুইবার দেখা হল।অথচ একবারও তুই তাকে সালাম দিতে পারলি না।বরাবরই উনি আগে তোকে সালাম দিলো!!কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই আমি বিভোর হয়ে আছি।ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটায় আমার পাশের ওই দুই জন ছাত্র।

একজন বলে উঠল, কি পাগল উনি তাইনা!! আপনার বড়ো হয়ে উনি আপনাকে সালাম দিছে।কথাটা শুনার পর আকস্মিক মেজাজটা বিগড়ে যায়।ওদের আর দোষ কি!! ওদের বাচ্চা বয়সের সরল মস্তিষ্কটা হয়তো এভাবেই সেট করা আছে।বড়রাও যে ছোটদের সালাম দিতে পারে! হয়তো তারা এ শিক্ষা পায়নি অথবা বড়দের মধ্যে কাওকে এবাবে সালাম দিতে দেখেনি।দেখলে নিশ্চয়ই এমন কথা বলত না।

আমি ভ্রু কুচকে ওদের জিজ্ঞেস করলাম কেন বড়রা কি ছোটদের সালাম দিতে পারে না?ওরা বলল আমরা তো সব সময় দেখি ছোটরা বড়দের সালাম দেয়।বড়দের কখনো এভাবে সালাম দিতে দেখি নি।আবার জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা তোমরা উনাকে সালাম দাওনি কেন?উনি তো তোমাদের বড় তাহলে কেন তোমরা উনাকে সালাম দাওনি।ওদের উত্তর শুনে তো আমি আরও হতবাক উল্টা বিপদে পড়লাম।

আরে আমারা কেন সালাম দিবো!! আমরা কি উনাকে চিনি? এর আগে আমরা উনাকে কখনো দেখিনি।একজন বলে উঠল আচ্ছা আপনি কি উনাকে চিনেন?আমি উত্তর দিলাম হ্যাঁ। ব্যস তাতেই আমি দফারফা।ওদের কথার তীর সাজোরে আমাকে আঘাত করল।ওরা বললো আপনার পরিচিত তারপরও আপনি সালাম দেননি,উল্টো আমাদের জিজ্ঞেস করতেছেন আমরা কেন সালাম দেইনি।

তাদের পাল্টা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মতো এই মুহূর্তে আমার কাছে কোন অপশন ছিলনা। তাই পরাজিত সৈনিকের মতো চুপ করে রইলাম। ভাবতে লাগলাম শেষমেষ এই বাচ্চা ছেলেদের কাছে ও আমাকে নাস্তানুবাদ হতে হলো।

আসলে কিভাবেই বা আমি তাদের উত্তর দিব।উত্তর দেয়ার মত কোনো অধিকার কি আমরা রেখেছি?সব সময় ছোটদের থেকে সালাম আশা করে বসে থাকি।এক শ্রেণীর আলেম সমাজ তো আমাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে।তাদের সালাম না দিলে উনাদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হয়।মিম্বারে হুংকার ছাড়ে,দিন দিন আমাদের ছোটরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গুরুজনদের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা উঠে যাচ্ছে,মুরুব্বিদের কে দেখলে সালাম দেয় না। পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকে, এই সেই ব্লা,ব্লা, ব্লা,।আরে ভাই আমি আপনি কয়দিন ছোটদেরকে সালাম দিছি নিজেকে প্রশ্ন করুন।আজকের সিদ্ধান্ত নেন, আমি-আপনি মিলে তাদেরকে কয়েকদিন সালাম দেই,পরক্ষণে দেখবেন এমনিই তারা আপনি দেয়ার আগে তারা আপনাকে সালাম দিবে। কিন্তু এ কাজটি আমরা কয়জনে করেছি?

হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সর্বাধিক কাছাকাছি মানুষ ওই ব্যক্তি; যে সর্বপ্রথম সালাম দেয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহামদ)

আমাদের একজন রাসুল ছিলেন, উনি সালামের জন্য বসে থাকতেন না।বরং উনি সবাইকে সালাম দিতেন। সাহাবিরা প্রতিযোগিতা করতেন উনাকে সালাম দেয়ার জন্য। জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবী হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসুলকে সালাম দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন।কিন্তু রাহমাতাল্লিল আলামিন বলে কথা ঠিক রাসুল সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে সালাম দিয়ে দিতেন!! উনি তো আমাদের আদর্শ আমাদের শিক্ষক।সালামের জন্য বসে থাকা কখনোই উনার আদর্শ ছিল না!!কিন্তু আজ সমাজের অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত!!এই অধঃপতন এর দায় কি আমি, আমরা, এক শ্রেণীর আলেম সমাজের এবং আমাদের মূর্খতার নয়?

প্রিয় পাঠক আপনারা কি ভাবলেন!!এতক্ষণ যে ঘটনাটি আপনারা পড়লেন, আমি সেই আদিপ।না আমি আদিপ না আমি রিসাদ ।আদিফ আমি এক সাথেই ইউনিভার্সিটি তে পড়াশোনা করি।এতক্ষণ আদিপের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়তেছিলাম। তার কথা গুলো আমাকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।নিজের সাথে মিলিয়ে দেখলাম শেষ কবে নাগাদ আমি কোন অপরিচিত ব্যক্তিকে সালাম দিয়েছি ঠিক মনে নেই। ঠিক কবে কোন জুনিয়র কে সালাম দিয়েছি মনে নেই।হায় আফসোস কখনো চিন্তাও করে দেখিনি, আমাদের সামনে একটা সুন্নাহ হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের কঠিন হৃদয় কখনো অনুভব করেনি।মনে পড়ে গেল প্রিয় নবীজির সে ভবিষ্যৎবাণীর কথা। রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেনঃ

কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম আলামত হচ্ছে মুসলমানেরা কেবল পরিচিত লোকদেরকেই সালাম দিবে।[1] এ বিষয়টি বর্তমান যামানায় সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেক লোকই পরিচিত ব্যতীত অন্য কাউকে সালাম দেয়না। এটি সুন্নাত বিরোধী কাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলিমকেই সালাম দিতে বলেছেন। কেননা সালাম বিনিময় করা মুসলমানদের ভিতরে ভালবাসা সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম। তিনি বলেনঃ

‘‘তোমরা ঈমানদার না হয়ে জান্নাতে যেতে পারবেনা। আর একে অপরকে ভাল না বাসলে ঈমানদার হতে পারবেনা। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের সন্ধান দেবনা যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে পারবে? তোমরা বেশী করে সালামের প্রচলন করো’’।[2]
[1] – মুসনাদে আহমাদ। আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন। [2] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান

শিক্ষাঃ

১.সালামের উত্তর নেয়ার ছেয়ে সালাম দেয়া উত্তম এবং ফজিলতপূর্ণ।
২.ছোটদের কে সালাম দেওয়া সুন্নত।
৩.অপরিচিত লোককে ও সালাম দেওয়া সুন্নত।
৪.নিজেদের যে বিষয়ে আমল করবো না তা অন্যকে বলা যাবে না।

চলবে,,,,

Leave a Reply