You are currently viewing এক মাজলুম ভাইয়ের গল্প!!

এক মাজলুম ভাইয়ের গল্প!!

স্মৃতিময় আগস্ট 🌷🌷

ছাত্র সংগঠনে তখন পুরোদমে মাঠে কাজ করতেছি। সত্যি বলতে মিছিল মিটিংয়ে আমি তেমন অ্যাক্টিভ ছিলাম না।আমি যেতে চাইলে ও দায়িত্বশীলরা যেতে দিতো না। আমি দাওয়াতি কাজে সময় দিতাম।আর আমার এলাকায় সার্বিক বিবেচনায় করে প্রিয় দায়িত্বশীলরা আমাকে বিপদে ফেলতে চায়নি।

আপনাদের বলতেছি সংগঠনে সাথি শপথ নেয়ার দুই বছর পরের ঘটনা!! তখন পত্র পত্রিকা খুললেই দেখতাম, শিবিরের ভাইরা! বিস্ফোরক ও বোমা নিয়ে গ্রেপ্তার। এ ঘটনা গুলো প্রায় পত্রিকাতে আসতো।আমার চারপাশে সংগঠন বিরোধী লোক বেশি থাকায় ওরা প্রায় সময় বলতো কিরে এটা কেমন কথা!!এটার নাম ইসলাম? আমার কিশোর মনে উত্তর দিতো এটা ষড়যন্ত্র। কিন্তু আমার স্বল্প জ্ঞানে তাদেরকে বুঝাতে পারতাম না!! তারা তাদের কথায় অবিচল থাকতো।মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগতো হয়তো সত্যি আমাদের ভাইদের কাছে বোমা/বিস্ফোরক আছে। কিন্তু টেলিভিশন পত্রিকাতে যা দেখতাম তা যখন নিজের সাথে ঘটেছে।নিজের চোখকে ও বিশ্বাস করতে পারিনি।

সাল (২০১৫) বোনের প্রসব বেদনা দেখা দেওয়ায়,সিএনজির জন্য এলাকার সিএনজি স্টেশন গিয়েছিলাম।সেখানে কিছু আল্লাহর বান্দা আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে ছিলো। মনে হয় এ-ই বুঝি মানুষ নামক বোমা গুলো বিস্ফোরিত হলো। সিএনজি কন্টাক্ট করে আমি বাড়িতে চলে আসলাম। মা আপু বাবা-মা হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আমি বাড়িতে থেকে যা-ই। রাত আনুমানিক তখন ১১.০০ চুঁইচুঁই হটাৎ দুম করে একটা আওয়াজ হয়।ভাবলাম কেউ হয়তো ককলেট ফুটাইছে। সরল ভাবনায় আমি ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল ছিলো,আমাকে পাসানোর জন্য কিছু আল্লাহর বান্দা চালিয়ে ছিলো তাদের নারকীয় পরিকল্পনা। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন🌷🌷

রাত ১২.৩০ মিনিট ৩০/৪০ জন আল্লাহর বান্দা আমার বাড়ি উপস্থিত। কিন্তু কেন?আমি নাকি বোমা মারছি!! কয়েকজন আমাকে দরে সে যায়গায় নিয়ে গেলো যেখানে আমি সিএনজির জন্য গিয়েছি। যাওয়ার পর দেখলাম তারা এক নিরীহ সহজ সরল ছেলেকে অমানুষিক নির্যাতন করতেছে। জিজ্ঞেস করলাম তাকে কেন মারা হচ্ছে। উত্তর শুনে আমি আরও ভেঙ্গে পড়লাম। আমি নাকি তাকে বোমা দিয়েছি মারার জন্য। একের পরে জুলুমবাজ এসে তাকে মারতে শুরু করে।তাকে বলার জন্য পুলিশের কাছে আমি তাকে বোমা দিয়েছি মারার জন্য।

মারতে মারতে ছেলেটার মাথা এবং শরিরের কয়েক জায়গায় রক্তাক্ত করে ফেলে জালেমরা। তাকে এমন ও অপার দেয়া হয়েছিলো সজীবের নাম বলে দে। তোকে চেড়ে দিবো।কিন্তু কি অবাক করা বিষয় পাগল ছেলেটা আমার নাম একবারের জন্য ও বলে নাই। আমি সেদিন সরাসরি আল্লাহর সাহায্য দেখেছি। মনে হচ্ছিল কেউ যেনো তার ঠোঁট দুটি চেপে ধরে রেখেছিল। যেন আমার নাম মুখে না আনে।মজার বিষয় ছেলেটা ইসলামি আন্দোলন কোন দায়িত্বশীল তো দুরে থাক সমর্থক ও না।একদম মূর্খ সহজ-সরল।

একের পরে এক নাম সে বলতেছিলো, অমুক দিয়েছে তমুক দিয়েছে।একটা পর্যায় ছেলেটাকে মারতে মারতে জালেমরা ক্লান্ত হয়ে যায়। এবং সমাপ্তি করে তাদের নাটকীয় পরিকল্পনা এবং ভেস্তে যায় তাদের আশা। কারণ আমি নিরপরাধ,এবং নিরপরাধ ছিলো সে পাগল ছেলেটি। যাকে করা হয়েছিল নির্মম নির্যাতন। আমার আল্লাহ আমাকে গায়বী মদদে সেভ করে নেয়। যদি সে দিন একবার ছেলেটি আমার নাম মুখে আনতো, তবে নিশ্চিত হয়তো আমি সজীব হারিয়ে যেতাম দূর অজানায়।

আজ ০৮/০৮/২০২১ আজ থেকে ০৬ বছর আগে ২০১৫ সালের এই দিনে আমি সর্বপ্রথম নবী ইউসুফ আঃ এর পাঠশালায় প্রবেশ করি।কোন প্রকার অপরাধ প্রমাণ না করতে পেরে ও অজানা কারণে হাতে লাগাতে হয়ে ছিলো কারাগারের শিকল!! সৌভাগ্য হয় প্রিয় নবিজির সুন্নাহ আদায়ের। সাক্ষী হলাম জীবনের সেরা সময়টুকুর!! এবং এ জুলুম বদলে দেয় আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।আল্লাহর নামের শপথ করে বলছি ওয়াল্লাহি, এ জুলুম আমি একটু ও ক্ষতিগ্রস্ত হইনি।আমার রব আমাকে সন্মানিত করেছেন হাজার গুণ ।

শেষ কথা তোমাদের জুলুমে মুমিন মাজলুম হয়,তোমরা জালেম হও।উভয়ের জন্য রয়েছে পুরুষ্কার!!মাজলুমের জান্নাত🌷 জালেমের জাহান্নাম। তোমার কোনটা পচ্ছন্দ?

মাজলুমি জীবন না–জালেমের জিন্দেগী?

সবার নিকট দোয়া চাচ্ছি আল্লাহ যেন আমাকে আজীবন ইকামতে দ্বীনের কাজে অটল রাখে!!আমিন!

Leave a Reply