আজ আমার মন ভালো নেই!ভালো লাগার কোন কারণ ও নেই।আমি একটা ঘোরের মধ্যে আছি।এমন ঘোর যা আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে!পাওয়া না পাওয়ার ব্যথা সত্যিই আমাকে অস্থির করে তুলছে!
আমি প্রেমে পড়েছি এটা পজিটিভ বিষয় ছিলো,কিন্তু এখন এটা আর পজিটিভের মধ্যে নেই।কাউকে পছন্দ হলে বিয়ের প্রস্তাব দেয়াটা ছিলো সুন্নাহ।এখন কাউকে পছন্দ হলে তা প্রকাশ করা রীতিমতো অন্যায় মনে করে সমাজে!তাইতো এখন হারাম রিলেশনের এতো চড়াচড়ি।আমার পক্ষে হারাম রিলেশনে যাওয়া কখনোই সম্ভব না।আবার তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়াটাও সম্ভব হচ্ছে না!কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছিলো!আমি যে মানুষটিকে পছন্দ করি সে ও আমাকে পছন্দ করে!কিন্তু ও হারাম পন্থা বেছে নিবে না এটা মোটামুটি শিওর। আর এ জন্যই আমি তাকে পছন্দ করেছি।
তবে এসব ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি ধৈর্যশীল। এতে কোন সন্দেহ নেই।উদাহরণ আমি নিজেই,শেষ কবে যে শান্তিতে ঘুমাইছি জানা নেই!চোখ বন্ধ করলেই তার চশমার গ্লাস বেদ করা মায়া ভরা চোখ দুটি বেশি উঠে। জানিনা তার কি অবস্থা,তবে আমার মতো দুরবস্থায় নেই এটা মোটামুটি শিওর,আর এ জন্য সে অবশ্যই দায়ী না।
আদিপের কথা গুলো খুব মনে পড়তেছে। একদিন সে বলেছিলো প্রেমে পড়া মানুষ, কোনাে-না-কোনােভাবে তার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে ফেলে। কোনাে-না-কোনাে ছুতােয় সে নিজের মনের অনুভূতিগুলাে প্রকাশ করে দেয়। এ বাঁধভাঙা আবেগের কারণেই মানুষ কবিতা লেখে। যারা জীবনে কবিতা লেখেনি, এমনকি পড়েওনি তারাও নাম লেখায় ব্যর্থ কবির লম্বা লিস্টে। তুমি যখন এমন পরিস্থিতিতে পড়বে, তখন তোমার কাছে এর ২টি দিক থাকবে !আর তা তুমি হালাল ভাবে প্রয়োগ করবে না হারাম ভাবে প্রয়োগ করবে সেটা তোমার উপর নির্ভর করবে।
আমি হারাম পন্থা অবলম্বন করতে চাইনা।কিন্তু সত্যিকার অর্থেই আমার অনুভূতি ও গোপন করতে পারিনি।কবিতা লিখে ফেললাম!
কৃষ্ণ নয়ন তোমার
সুন্দর তুমি জোড়া দুটি চশমায়।
হরিণীর মতো দৃষ্টি তোমার
চশমাতে তুমি মায়াবী তুমি ধনুকের তীর।
আর নিচে তার নাম লিখে ইমুতে দিলাম!রেজাল্ট পেতে ও বেশি সময় লাগেনি!কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্লক।আর এতেই আমার অবস্থা দফা রফা।নিজেকে ধিক্কার দিতে মন চাইছে,লজ্জায় হতাশায় আমার অবস্থা চরমে পৌঁছে গেছে।অস্থির এ মনে কতো প্রশ্ন,সে আমাকে ভালোবাসেনি,ভালোবেসে থাকলে ব্লক দিতো না, আমি হয়তো ভুল বুঝেছি, অথবা তার হয়তো অন্তর পরিবর্তন হয়ে গেছে। কারণ মানুষের রং বদলায়। পুরো নাজেহাল অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করলাম।
যদি কিছু মানুষের সাথে কখনো দেখা না হতো। হয়তো কিছু লজ্জা থেকে বাঁচা যেত। কিছু মানুষ সত্যিই হৃদয়ের ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরে আদিপ এসে উপস্থিত!এক গাল হেসে জিজ্ঞেস করলো কি হুমাইরার জামাই। কোন সে হুমাইরা যে তোমার দিন রাত এক করে দিল।হৃদয়ের ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ালো।আমি পুরো বিষয়টা আদিপকে খুলে বললাম! আদিপ পজিটিভ সূচক হাসি দিয়ে বললো!আমি তোর মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছি!আমি তোকে একটা সাজেশন দেয়ার চেষ্টা করবো!প্রথমে তোতে যা করতে হবে তা হলো তোর পোস্ট ডিলেইড করে দিতে হবে !আর আমার কিছু কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
আমার কথা শোনার আগে তোকে বুঝতে হবে ভালোবাসা কি!তুই আগে বল সত্যিই কি তুই মেয়েটাকে ভালবাসিস কিনা?আমি দৃঢ়তার সাথে উত্তর দিলাম অবশ্যই ভালোবাসি!ভালোবাসা না থাকলে রাত গুলো এতো বিষাদ ময় হতো না!
আদিপ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করলো। ভালোবাসা আর ভালোলাগাকে আমরা এক করে ফেলি! কিন্তু বেশিরভাগই আমাদের ভালো লাগা, ভালোবাসা নয়।ভালোবাসার অর্থই হচ্ছে সেখানে কল্যাণ আর রহমত থাকবে!কিন্তু এটা কি ভালোবাসার কথা ওরা বলে। যে ভালোবাসায় কোন কল্যাণ নেই!বরং রয়েছে অকল্যাণ এবং তারা একে অপরকে রবের অবাধ্যতার দিকে আহবান করে!যা স্পষ্টই জাহান্নামের পথ।
আসল সত্য হলো তারা একে অপরকে কখনোই ভালোবাসে না!যদি সত্যিই ভালোবাসতো তাহলে তাঁরা একে অপরকে হারাম পন্থায় চাইতোনা!কখনোই জাহান্নামের পথে একে অপরকে আহবান করতো না!!অথবা আল্লাহর উপর ভরশা করতো।আর এদের মনে যেটা আছে সেটা হলো ভালোলাগা আর প্রেম রোগ।ঘোর মাতালগ্রস্ত ব্যক্তি যেমন মাতাল অবস্থায় বুঝতে অক্ষম সে কী করছে, কী বলছে; প্রেমরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিও বুঝতে পারে না, এই রোগ তাকে কীভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এখন আমি বলতেছিনা তুই কাউকে পছন্দ করে ভূল করেছিস।মানুষ মানুষকে পছন্দ হতেই পারে এটা স্বাভাবিক !কিন্তু এটা নিয়ে জোরাজোরি করা অস্বাভাবিক!আলহামদুলিল্লাহ তুই তেমন কিছুই করার পক্ষে না সেজন্য তোকে প্রথমত অভিনন্দন। যেহেতু তুই হারাম রিলেশন ও জোরাজোরিতে নেই সে ক্ষেত্রে তোকে সবর করতে হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে।দোয়া করতে হবে আল্লাহর কাছে,হে আমার রব আপনি তো আমার অন্তরের অবস্থা ভালো জানেন!কোনো কিছুই আপনার অজানা নয়।অজানা নয় আমাদের অনুভুতি গুলো। হে রব যদি এখানে আমার কল্যান থাকে তবে আপনার সন্তুষ্টির জন্য এ বিচ্ছেদের সমাপ্তি ঘটান। আর যদি অকল্যান থাকে তাহলে আপনি আমার অন্তরকে পরিবর্তন করে দিন।ইয়া মুকাল্লিবাল ক্বুলূব! সাব্বিত ক্বলবী ‘আলা দীনিকা
অর্থ-হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অটল রাখুন।
তোকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে রুবাইয়াত! কেন করতে হবে সেটা ও তোর জানা উচিৎ। যদি তোকে এখন কেউ প্রশ্ন করে!তোর মা বাবা কখনো তোর অকল্যাণ চাইতে পারে কিনা?তখন তোর উত্তর হবে অবশ্যই না।যদি মা বাবা সন্তানের জন্য এত ভালোবাসা থেকে থাকে। তাহলে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি কেমন ভালোবাসা থাকতে পারে একবার চিন্তা করে দেখ।উনি এমন আল্লাহ যিনি আমাদের জন্য চিরস্থায়ী প্রশান্তির জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন আমাদের আবাসভূমি হিসেবে। ফরম মমতায় ভালোবাসায় আমাদেরকে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।সেই মহামহীয়ান আল্লাহ কিভাবে আমাদের অকল্যাণ চাইতে পারেন?আমাদের কি উচিৎ নয় আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া!যিনি বান্দার কখনোই অকল্যান চায় না।
আমি শুধু একটা সত্যের দিকে তোর মনােযােগ আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। সত্যটা হলাে, ভালোবাসা গােপন করা যায় না।মানুষের জন্য মানুষের যে ভালােবাসা সেটাই বাঁধভাঙা। উপচেপড়া। হিসেব ছাড়া! তাহলে চিন্তা কর আল্লাহর জন্যে বান্দার যে পবিত্র বিশুদ্ধ ভালোবাসা সেটা কেমন হবে?
কিন্তু যারা মুমিন আল্লাহর সঙ্গে তাদের ভালােবাসা প্রগাঢ়।
সূরা বাকারা, ১৬৫
তাই তোকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে।এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে তাই কল্যাণকর হিসেবে মেনে নিতে হবে।অতএব এমন দুঃখের পোস্ট না দিয়ে লিখতে পারিস।
প্রিয়তমা আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।আমার খুব কষ্ট ও হয় তোমার জন্য। কিন্তু এ জন্য আমি কখনোই হারাম পন্থা অবলম্বন করব না। যদি এ পথে আমার মৃত্যুও এসে যায়।কারন রবের ভালোবাসার ছেয়ে বড়ো ভালোবাসা আর কিছু হতে পারে না।প্রিয়তমা হুমাইরা❤️ বরং তুমি এসো জান্নাতের পরশ নিয়ে!হোক না একটু দেরি, তবুও এসো সম্পূর্ণ হালালভাবে। আর আমাদের শেষ ঠিকানা হোক জান্নাতুল ফেরদাউস অথবা জান্নাতুল যাওয়ায়।আমি না হয় সেখানে তোমাকে হুমাইরা পাখি বলে ডাকবো।
প্রত্যেকের নিজস্ব একটা গল্প থাকুক। আর সেই গল্পে হুমাইরা নামের কেউ একজন থাকুক।আর সে আসুক সম্পূর্ণ হালাল ভাবে।
সাইদুল ইসলাম সজীব
লেখকঃবই-আমার বন্ধু আদিপ