You are currently viewing কিয়ামতের পূর্বে ছোট-বড় উল্লেখযোগ্য আলামতঃ

কিয়ামতের পূর্বে ছোট-বড় উল্লেখযোগ্য আলামতঃ


মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলছেন-

ٱقْتَرَبَتِ ٱلسَّاعَةُ وَٱنشَقَّ ٱلْقَمَرُ
“কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে’’(সুরা কামার :আয়াত ০১)

১. সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে (যেমন-ইন্টারনেটে বসলে সময় কিভাবে এত দ্রুত চলে যায় তার খেয়াল থাকে না।দিন দিন আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় দীর্ঘ দিনের পথ ও কাজ খুব দ্রুত করে দিচ্ছে।)
২.অশ্লীল গান-বাজনা(বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার) ও নর্তকীদের নৃত্য বৃদ্ধি পাবে।
৩. ফিৎনা-ফাসাদ(দাঙ্গা-হাঙ্গামা, পাপাচার) বৃদ্ধি পাবে,
৪. কৃপণতা দেখা দিবে(গরীব-অসহায়দেরকে দান করতে ইতস্তত করবে বা যাকাতকে বোঝা মনে করবে) ,
৫. সর্বত্র সামাজিক দ্বন্দ্ব বিশৃঙ্খলা ও খুনখারাবী
ব্যাপকভাবে দেখা দিবে,
৬. হত্যাকারী বলতে পারবে না, কেন সে হত্যা করল,
৭. নিহত ব্যক্তি জানতে পারবে না, কেন সে নিহত হল,
৮. ইলম(দ্বীনি জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হবে;মানুষ হবে পশু প্রাণীর ন্যায় জ্ঞানহীন,
৯. জ্ঞানহীন মানুষগুলোর নেতা হবে, বোকা জ্ঞানহীন ও ইতর শ্রেণীর মানুষ,
১০. ভালো ও নেককার লোকেরা পর্যায়ক্রমে একের পর এক চলে যাবে।হক্বপন্থী উলামায়ে কেরামদেরকে আল্লাহ উঠিয়ে নিবেন। মানুষ তুচ্ছ ও স্বল্পজ্ঞানীদের নিকট এলেম অন্বেষণ করবে।
১১. আমানত বিনষ্ট হবে (কাজের দায়িত্ব অনুপযুক্ত লোককে দেয়া হবে),
১২. দাসী আপন মণিবকে জন্ম দিবে। তোমরা খালি পা ও নগ্নদেহ গরিব মেষ রাখালদের (অর্থাৎ আরব বেদুঈনদেরকে) সুউচ্চ দালান কোঠা নির্মাণ করতে দেখবে এবং তা নিয়ে গর্ব ও প্রতিযোগিতা করতে দেখবে।
১৩. মানুষ উঁচু উঁচু প্রসাদ অট্টালিকা তৈরী করে পরস্পর অহংকার করবে।
১৪. প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী নিজেকে নবী বলে দাবি করবে,
[মুসাইলামা কায্যাব, গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মত কতজন এইপর্যন্ত দাবি করেছে তা সুস্পষ্টভাবে গননা করা হয়নি]
১৫. ভূমিকম্প বেড়ে যাবে,
১৬. মানুষের অর্থ সম্পদ বেশি হবে,সম্পদ উপার্জনে হালাল হারামের তোয়াক্কা করবে না।
১৭. মুসলিমরা ইয়াহুদীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাথর ও বৃক্ষকূল মুসলমানদের সাহায্য করবে। তারা কথা বলবে। শুধু গারকদ বৃক্ষ কথা বলবে না। কেননা তা ইহুদীদের গাছ।এইক্ষেত্রে কুদস তথা জেরুজালেম পুরাপুরি ইহুদী মুক্ত হবে।
১৮. রোমকদের(ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের) সাথে মুসলিমদের একটি সন্ধি চুক্তি হবে এবং পরবর্তীতে তারা এই চুক্তি ভঙ্গ করবে,
১৯. মদ পান বৃদ্ধি পাবে,মদের নামকে পরিবর্তন করে দিবে। একে হালাল জ্ঞান করবে।
২০. পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে,
২১. নারীর সংখ্যা বেশি হবে (৫০ জন মহিলার পরপরিচালক হবে একজন পুরুষ),
২২. ফোরাত নদীর তলদেশে রক্ষিত স্বর্ণের পাহাড় উন্মুক্ত হবে এবং এই সম্পদ নিয়ে ভয়াবহ লড়াই হবে (শতকরা ৯৯ জন তা নেওয়ার জন্য যুদ্ধ করে নিহত হবে) [মাহদী আত্মপ্রকাশের পূর্বে) যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।] রাসুল্লাহ সাঃ বলেন, মুসলিমরা যেন তা থেকে কিছু না নেয় এবং কাড়াকাড়ি করতে না যায়।
২৩. দুনিয়াবী লোভ – লালসা বৃদ্ধি পাবে,
২৪. শুধুমাত্র পরিচিত ব্যক্তিকে সালাম দিবে,
২৫. মানুষ তার প্রতিবেশী, তার ভাই ও তার পিতাকে হত্যা করবে।কেউ ব্যাখ্যা করেছেন, সন্তান তার পিতা-মাকে চাকরের ন্যায় ব্যবহার করবে তথা বৃদ্ধাশ্রমে দিবে। আবার কেউ ব্যাখ্যা করেছেন, দাসের গর্ভে থেকে রাজকুমার জন্ম নিবে। এইক্ষেত্রে কেউ ব্যাখ্যা করেছেন,সন্তান তার আপনজনদের থেকে দূরে থাকবে। পরকে বা বন্ধুকে আপন করবে।
২৬. গাধার মতো রাস্তায় (খোলা মাঠে) যিনায় লিপ্ত হবে,
২৭. ধোঁয়া ;যা এক নাগাড়ে চল্লিশ দিন পূর্ব হতে পশ্চিম
প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।
সূরা দুখানের ১০ নং আয়াতে আল্লাহ সেদিনের ইংগিত করেছেন।
২৮. ইসা ইবনে মারইয়াম (আ.) আকাশ হতে অবতরণ করবে,(দামেস্কের মসজিদে সাদা মিনারে)
২৯. তিনটি ভূমিধ্বস হবে। একটি আরব উপদ্বীপে, আরেকটি পৃথিবীর পশ্চিমভাগে এবং অপরটি পৃথিবীর পূর্বভাগে। এটা সাধারণ কোন ভূমিকম্প হবে না বরং এটা বড়ধরণের হবে।
৩০. ইয়াজুজ- মাজুজ বের হবে,(ঈসা আঃ এর পরে আসবে)।যুলকারনাইন প্রাচীর পুরোপুরি ভেঙ্গে যাবে। পাহাড় থেকে মানুষরুপী ভয়ানক সম্প্রদায় বের হয়ে আসবে। সুরা কাহাফের ৯৪-৯৮ নং আয়াতে এই সম্পর্কে ইংগিত আছে।
৩১. ইয়ামান এডেন এলাকার গহ্বর হতে এক আগুন বের হয়ে মানুষকে সমবেত করবে হাশরের দিকে নিয়ে যাবে। তখন শামই হবে নিরাপদ স্থান। শাম হল বর্তমান সিরিয়া,ফিলিস্তিন, জর্দান ও ইহুদীদের দখলকৃত বর্তমান জেরুজালেম কেন্দ্রিক ইসরাইল।
৩২. দাজ্জালের আবির্ভাব হবে,তার পূর্বে মসজিদগুলো থেকে দাজ্জালের ফেতনার আলোচনাগুলো উঠে যাবে।
৩৩. পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হবে। ৩৪.দাব্বাতুল আরদ নামক এক অদ্ভুত প্রাণী বের হবে যা মানুষের কপালে চিহ্ন একে দিবে কে মুসলিম এবং কে কাফির।
৩৫.মুসলিমরা তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। যাদের থাকবে ছোট ছোট চোখ, রক্তিম চেহারা, চ্যাপ্টা নাক, স্থূল ঢাল সদৃশ(গোলাকার চেহারা)।তারা পশমের জুতা পরিধানে অভ্যস্ত থাকবে।
বিশেষত,১২০০খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলিম বিশ্বের উপর ভয়ংকর তাতারী চেঙ্গিস-হালাকু খানের ফেতনার দিকেই ইংগিত করে যা বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। তারা ছিল মঙ্গোলিয়ান তুর্কি।
৩৬.তিনটি ভূমিধ্বস হবে। পাশ্চ্য, পাশ্চাত্য ও আরব উপদ্বীপে।
৩৭.মানুষ কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআনের আয়াত তাদের কন্ঠাস্থি অতিক্রম করবে না।(মানে কুরআনের আয়াতের তর্জমা বুঝে পড়বে না ও কুরআন অনুযায়ী চলবে না বা বাস্তব জীবনে তা প্রতিফলিত হবে না।)
৩৮.মায়ের অবাধ্য হয়ে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করবে। পিতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বন্ধু-বান্ধবকে কাছে আনবে। মসজিদের ভিতর উচ্চস্বরে হৈ হুল্লোড় করবে।পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে(মৃত পূর্বসুরীদের সেকেলে বা তারাই সকল অনিষ্টের মূল বলা)গালমন্দ বা অভিশাপ দিবে।
৩৯.পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতি (ইহুদী, খ্রিস্টানদের) সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করা। (অথাৎ, তাদের পোশাক,, কৃষ্টি-কালচার, নির্লজ্জতা ইত্যাদি অনুসরণ)
৪০.কাবা ঘরের দিকে মাহদীকে ধরতে আসা বিশাল সুফিয়ানী বাহিনী বায়দাতে(মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থান) ধ্বসে যাবে।অথাৎ ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ।
৪১.চন্দ্রস্ফীতি হবে। একদিনের চাঁদ দেখে মানুষ দুই দিনের চাঁদ মনে করবে।
৪২.আরবের কুরাইশ বংশের বিলুপ্ত হতে থাকবে। একসময় পুরাপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
৪৩.মসজিদগুলোতে কারুকার্যের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবে। নামাজের গুরুত্ব ও ইসলাম শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ কমে যাবে। লোকেরা মসজিদ নিয়ে(বিঃদ্রঃ চাকচিক্য বা স্থাপত্যকলা বুঝাতে পারে) গর্ব করবে।
৪৪.অত্যাধিক বজ্রপাত ঘটতে থাকবে।
৪৫.জনৈক কুৎসিত হাবশীর হাতে কাবা ঘর ধ্বংস করে তার রক্ষিত রত্ন ভাণ্ডার নিয়ে যাবে।
৪৬.আবেদনময়ী বস্ত্রবাহী নারী সম্প্রদায় প্রকাশ ঘটবে। যাদের মাথাগুলো উটের কুজের মত দেখাবে।সৌদির বিখ্যাত শায়খ আব্দুর রহমান আরিফি উনার লেখা” মহাপ্রলয় ” বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, তারা এমন কাপড় পরিধান করবে যাতে তাদের নগ্নই মনে হবে। বা এমন টাইট ফিট পোশাক পড়বে যাতে দেহের অঙ্গভঙ্গি স্পষ্টত ফুটে উঠে।
৪৭.আরব উপদ্বীপে বৃক্ষলতা তথা বাগিচা ও নদীনালায় ভরে উঠবে। অথবা আরব উপদ্বীপের মরুর বুক শস্য – শ্যামলে ভরে উঠবে।
৪৮.হেজাজ ভূমি থেকে বিশাল অগ্নিকুণ্ড প্রকাশ হবে যার আলোতে সূদূর বছরায় উষ্ট্রীর স্কন্ধ আলোকিত হয়ে উঠবে।
[১২৫৬ সালে ভস্মীভূত মুলাইছা পর্বত] সেই আগুন প্রায় দুমাস পর্যন্ত ছিল এবং মদীনা থেকেও দেখা গিয়েছিল ঐতিহাসিকদের মতে]
৪৯.মক্কা নগরীর মাটি চিড়ে পার্শ্বকূপ নির্মিত হবে এবং মক্কা নগরীর ভবনগুলো পাহাড়সম উচু হবে।
৫০.কেয়ামতের একেবারে শেষের দিকে (বিশেষত, ঈশা আঃ এর মৃত্যুর পর) সর্বশেষ মুমিনদের রূহ কব্জা করতে সুবাতাস প্রেরণ।

পবিত্র কুরআনের কিছু মর্মস্পর্শী আয়াত দিয়ে শেষ করছি-
السَّاعَةَ ءاَتِيَةٌ أَكَادُ أُخْفِيْهَا لِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا تَسْعَى، فَلاَ يَصُدَّنَّكَ عَنْهَا مَنْ لاَ يُؤْمِنُ بِهَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَتَرْدَى-

‘ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই, যাতে প্রত্যেকেই তার কর্ম অনুযায়ী ফল লাভ করে। সুতরাং যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের বিশ্বাস করে না এবং নিজ প্রবৃত্তির(মনের যাচ্ছেতাই )অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তা থেকে নিবৃত্ত(বিরত) না করে। নিবৃত্ত হ’লে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে’ (ত্ব-হা ১৫-১৬)।

فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا ٱلسَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةًۖ فَقَدْ جَآءَ أَشْرَاطُهَاۚ فَأَنَّىٰ لَهُمْ إِذَا جَآءَتْهُمْ ذِكْرَىٰهُمْ

তারা কি শুধু এ অপেক্ষায় আছে যে, ক্বিয়ামত তাদের কাছে অকস্মাৎ এসে পড়ুক? ক্বিয়ামতের লক্ষণগুলো তো এসেই গেছে। কাজেই তা(কেয়ামত) এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?
(সূরা মুহাম্মদ :আয়াত ১৮)

Reference :
১,৩-৫ : বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা: ৫১৫৬/
২.সুনানে ইবনে মাজাহ:৪০২০
৬-৮ :বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা: ৫১৫৭/
৯: ইবনে মাজাহ: ৩৯৫৯/
১০: বুখারী, মিশকাত হা: ৫১৩০/বুখারী :১০০,লি ইবনুল মুবারক :৬১
১১: বুখারী, মমিশকাত হা:
৫২০৫/
১২-১৩: মুসলিম – ১০৬ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা: ২/
১৪-১৬
:বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা: ৫১৭৭/
১৭: মুসলিম, মিশকাত হা:, বুখারী:৩৩৯৮,মুসলিম :৭৫২২
১৮: বুখারী, মিশকাত হা:৫১৮৬/
১৯-২১: বুখারী,মুসলিম, মিশকাত হা: ৫২০৩/
২২: মুসলিম, মিশকাত হা: ৫২০৯/
২৩: সিলসিলা ছহীহা: ২৫২৭/
২৪: সিলসিলা ছহীহা: ৬৪৮/সহীহ বিন খুযাইম :১৩২৬
২৫:সিলসিলা ছহীহা: ৩১৮৫/
২৬: সিলসিলা ছহীহা: ২৭২৪/
২৭-৩০: মুসলিম, মিশকাত: ৫২৩০/
৩১.মুসলিম শরীফ:৭৮৬৮
৩২-৩৩: বুখারী, মুসলিম,
মিশকাত হা: ৫২৩৩)
৩৪.কুরআনের সূরা নমল :৮২,মুসলিম শরীফ:৪১৭
৩৫.বুখারী :৩৩৯৪,মুসলিম :৭৪৯৬
৩৬.মুসলিম শরীফ :৭৮৬৭
৩৭.মুসতাদরেক হাকিম : ৮৪১২
৩৮.তিরমিযী:২২১১
৩৯.বুখারী :৬৮৮৮
৪০.মুসলিম শরীফ :৭৪২১
৪১.তাবরানী শরীফ:৮৭৭
৪২.মুসনাদে আহমদ :৮৪১৮
৪৩.আবু দাউদ:৪৪৯,৪৪৮, সহীহ বুখারী :১/৫৩৯
৪৪.মুসনাদে আহমদ:১১৬৩৮
৪৫.বুখারী :১৫১৮,আবু দাউদ:৪৩১১
৪৬.মুসলিম শরীফ:৭৩৭৩,৫৭০৪
৪৭.মুসলিম শরীফ :২৩৮৬
৪৮.বুখারী :৬০৭১
৪৯.মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৩৭২৩২
৫০.বুখারী – মুসলিম:৭৫৬০

Leave a Reply