You are currently viewing নিকটবর্তী তৃতীয় বিশ্বযু’দ্ধ, মানসিক গো’লামীতে নিমজ্জিত উম্মাহ!

নিকটবর্তী তৃতীয় বিশ্বযু’দ্ধ, মানসিক গো’লামীতে নিমজ্জিত উম্মাহ!

পৃ’থিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বারবারই ঘটেছে যে, অঞ্চল দখলের মাধ্যমে সমকালীন সবল জাতিগুলো দূর্বল জাতিগুলোকে জয় করে নিজেদের গো’লামে পরিনত করে নিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বি’শ্বযু’দ্ধ যার চাক্ষুষ প্রধান। কিন্তু যখনই বিজয়ীদের শক্তির সূর্য অস্তমিত হতে শুরু করেছে, তখনই গো’লামীর জিঞ্জিরও ভাঙতে শুরু করেছে। কিন্তু বর্তমানের আধুনিক যুগে শক্তিমান জাতিগুলো দূর্বল জাতিগুলোকে অঞ্চল জয় করা ব্যতিরেকেই গো’লাম বানিয়ে নিচ্ছে।

এই গো’লামী এতোটাই ঘৃ’ণ্য জ’ঘন্য যে, বিজয়ী জাতির প’তনের পরও যেমনটি তেমনই রয়ে যায়। দৈহিক গো’লামী অতটা ক্ষতিকর ও নিন্দনীয় নয়, যতটা নিন্দনীয় ও জ’ঘন্য মানসিক গো’লামী।

কারণ, একটি জাতির চিন্তাচেতনা যদি স্বাধীন হয়, তাহলে তারা কখনোই পরাজয় মেনে নেয় না এবং সুযোগ পেলেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। অপরদিকে কোন জাতি যদি মানসিক গো’লামির শিকার হয়ে পড়ে, তা হলে ভেতর থেকে তাদের নিজেদের মতো করে চিন্তা করার যোগ্যতা হারিয়ে যায়। মানসিক গো’লামির শিকার জাতি আপন মস্কিস্কে চিন্তা করে না। পরিস্থিতিকে তারা নিজেদের চোখে দেখে না। প্রভুরা যেদিকে খুশি তাদের চিন্তাচেতনার গতিকে সেদিকেই ঘুরিয়ে দেয়। সবচেয়ে বড়ো জটিল ব্যপারটা হলো, এরা নিজেদের গোলামই মনে করে না। ভাবে, আমরা তো স্বাধীনই আছি। মানসিক গো’লামির সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হলো, মানসিকভাবে গো’লাম জাতি ভালোকে মন্দ আর মন্দকে ভালো, ক্ষতিকে উপকার আর উপকারকে ক্ষতি, শত্রুকে বন্ধু আর বন্ধুকে শত্রু, সঠিক পথের দিশারীকে দস্যু আর দস্যুকে দিশারী মনে করে।

খি’লাফতের পতনের পর থেকে, গত ১৩৪২ হিজরী থেকে এখন ১৪৪৩ তথা ১০১ বৎসর যাবৎ আজ অবধি মুসলিম উম্মাহ এই মা’নসিক গো’লামির শিকার। এই গোলামির বিষক্রিয়া মুসলমানদের মস্তিষ্কে এই ধারনাটি বদ্ধমুল করে দিয়েছে যে, এ যুগে ইসলামী খি’লাফাহের কোনো প্রয়োজন নেই, সময় এখন গনতন্ত্রের (!) এভাবে মানসিক গো’লামির ফলে মুসলমান গনতন্ত্রকে ইসলামি খি’লাফতের উত্তম বিকল্প ঠিক করে নিয়েছে। এই মানসিক গোলামী মুসলমানদের মধ্যে থেকে কুরআন হাদীস অনুসারে চিন্তা করার যোগ্যতা ও অনুভূতি বের করে দিয়েছে। ফলে এখন মুসলমান কোন একটি বিষয়কে কুরআন হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা করে না। এখন তারা সবকিছু পর্যালোচনা করে পা’শ্চাত্য মি’ডিয়ায় মাথায়। প’শ্চিমারা এক‌টি বিষয়কে যেভাবে মূল্যায়ন করে, মুসলমান বিষয়টিকে সেভাবেই ভাবতে শুরু করে। আমাদের শাসক, লিখক, বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা ও কলম সেই পথেই চলে, যেই পথের দিকে ই’সলামের চিরাচরিত শ’ত্রুরা অঙ্গুলিনির্দেশ করে। অবশেষে যখন গন্তব্যে পৌছায় তখন দেখা যায়, এটা তো সেই জায়গা যা, প’শ্চিমা চিন্তাবিদরা আগেই ঠিক করে রেখেছে। অথচ তারা মনে করে আমরা বিরাট কিছু অর্জন করে ফেলেছি। আমরা অনেক বড় কাজ করে ফেলেছি।

রা’শিয়ার আ’ফগানি’স্তানে অনুপ্রবেশ, আফগান জি’হা’দ ও বিজয়, তা’ লে বা নে র ইসলামী শাসন, আ’ফগানি’স্তানের উপর আ’ম্রিকার আগ্রাসন, উপসাগরীয় অঞ্চলে আ’মে’রিকার আগমন, আ’মে’রিকার ই’রাক দখল, ফি’লি’স্তিনিদের উপর ই’সরাই’লের নিপিড়ন, আ’মে’রিকার উপর মু-জা’হি’দীনদের ৯/১১ আ’ক্রমণ এবং এজাতীয় অন্যান্য কিন্তু ঘটনাবলীকে এখানে দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করতে পারি। এই বিষয়গুলিকে তথাকথিত মুসলমান লিখক-বুদ্ধিজিবীদের মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা মুসলমানদের মনে সাহস যোগানোর পরিবর্তে মনোবল হারানোর কাজ করেছে। তাদের মূল্যায়ন মুসলমান সমাজের উপর বিরুপ ও ভুল পতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যুগের বীর মু’জা’হিদ ও নায়কদের বানিয়ে দিয়েছে জ’ঙ্গি স’ন্ত্রাসী। মানসিকভাবে গোলাম হওয়ার কারনে তারা আল্লাহর শক্তিকে প’রাশক্তি প্রমান করার স্থলে কু’ফরী শক্তি ও কা’ফে’র রা’ষ্টগুলোকে সু’পার পা’ওয়ার সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছে যে, যা কিছুই ঘটে, সবই কু’ফ’ফারদে মর্জি অনুসারেই ঘটে — ওরা যা চায়, তাই হয়। কাজেই তোমরাও আমাদের মতো কু’ফ’ফারদের মানসিক গো’লাম হয়ে যাও (!)

কেন এই পরিবর্তন (?) এর একমাত্র কারণ, মুসলমান বর্তমান পরিস্থিতিকে কুরআন হাদীসের আলোকে বুঝবার চেষ্টা করে না! তারা তাকিয়ে থাকে প’শ্চিমা মিডিয়া গুলোর দিকে। তারপর ওরা যা বোঝায়, বিনা বিচারে তা—ই বুঝে নেয়। এই সত্যটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, আজ আমাদের অধিকাংশ তথাকথিত শিক্ষিতজনই প’শ্চিমাদের মানসিক গো’লামির শিকার। কিন্তু ! অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে! হারানো ঐতিহ্যে পূনরুদ্ধার করতে হলে! ঈমানী কর্তব্য পালন করতে হলে, আমাদেরকে এই মানসিক গো’লামীর জিঞ্জির ছিন্ন করে বেরিয়ে আসতেই হবে। আমাদেরকে কুরআন হাদীসের আলোকে কর্মনীতি প্রস্তুত করতে হবে। বি’শ্বপরিস্থিতিকে কুরআন হাদীসের চোখে দেখার ও মূল্যায়ন করার অভ্যাস ও যোগ্যতা গড়ে তুলতেই হবে জরুরী ভিত্তিতে। অন্যথায় আজীবনই আমরা পরিস্থিতিকে সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থই হবো আর এই অবস্থাতেই কেয়ামত এসে পড়বে। তখন না অতীতের আয়না আমাদের সঠিক চিত্র দেখাবে, না আমরা ভবিষ্যতের নির্ভুল ছবি দেখতে সক্ষম হবো, না ই’উরোপের পুনরুত্থান রহস্যে উন্মোচনে সফল হবো, না আমরা দ্বিতীয় বি’শ্বযু’দ্ধের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবো, না আ’মেরি’কা ও সো’ভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার শীতল যু”দ্ধের নাটক বুঝতে পারবো। অনুরূপ না আ’মে’রিকা-চীন কিংবা ভা’রত ও চী’নের মধ্যকার শ’ত্রুতার রহস্য আমাদের সম্মুখে উন্মোচিত হবে।

আপনি পরিস্থিতিকে না বুঝলে সঠিক কর্মপরিকল্পনা ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারবেন না। কারণ, রোগনির্ণয় সঠিক না হলে, ব্যাবস্থাপত্র নির্ভূল হয় না। যথোপযুক্ত মনোযোগ, আন্তরিকতা, গুরুত্ব ও মূল্যায়ন করতে পারলে আমরা রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের] হাদিসের আলোকে পরিস্থিতিকে বুঝতে পারি। তারপর আমরা সঠিকভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে পারি। আল্লাহর রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ভবিষ্যতে ঘটবে এমন অসংখ্য ঘটনাবলী স্থান, কাল, ব্যক্তি সহ স্পষ্ট ও খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন। যাতে মুসলমানেরা তার আলোকে নির্ভুলভাবে পরিকল্পনা ও কর্মপ্রক্রিয়া প্রস্তুত করতে পারে। ভবিষ্যতের জন্য নিজেদেরকে আগেথেকেই তৈরী করে নিতে পারে, এবং শত্রুর মোকাবেলায় নিজেদেরকে যথাসময়ে প্রস্তুত করে রাখতে পারে।

অসংখ্য ঘটনা খুব দ্রুততার সাথে ঘটে যাচ্ছে এবং পৃ’থিবী একটা মা’রাত্মক বি’শ্বযু’দ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পৃ’থিবীর সমস্ত কো’ণাতেই তারই প্রস্তুতি চলছে। যু’দ্ধের দামামা বাজছে। আমরা দেখছি দক্ষিণ চী’ন সাগরে উত্তর কো’রিয়ার প’রমাণু হু’মকি এবং তার প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কো’রিয়া ও জা’পানে যু’ক্তরা’স্ট্রের ব্যা’লিস্টিক মি’সাইল ডি’ফেন্ড সিস্টেম চালু। তার প্রতিক্রিয়ায় কু’রিল আ’ইল্যান্ডে রা’শিয়ার ব্যা’লিস্টিক মি’সাইল স্থাপন। তার প্রতিক্রিয়ায় প্র’শান্ত মহাসা’গরীয় দে’শসমূহ ও আ’সিয়ানভুক্ত দে’শসমূহের সাথে যু’ক্তরা’স্ট্রের চী’নবিরোধী মি’ত্রচুক্তি। আমরা দেখছি পূর্ব ই’উরোপে রা’শিয়ার সীমান্তে ন্যা’টোর সৈ’ন্যবৃদ্ধি, ও’য়ার গে’ইমস ও মি’লিটারি ড্রিল। পাল্টা জবাবে রা’শিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ সী’মান্তে সৈ’ন্য সরঞ্জাম বৃদ্ধি। আমরা দেখছি, কৃ’ষ্ণসাগরে তু’রস্ক ও ই’উক্রেনের যৌথ মি’লিটারি ড্রিল। পাল্টা জবাবে ক্রি’মিয়ার মাধ্যমে কৃ’ষ্ণসাগরে রা’শিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিট স্থাপন। আমরা দেখছি, নাগারো কারাবাখ নিয়ে আ’র্মেনিয়া ও আ’জারবাইজানের দ্বন্দ্ব যু’দ্ধ। আমরা দেখছি, তু’রস্কের প্রধানম’ন্ত্রীর পদত্যাগ, প্রে’সিডেন্ট এ’রদোয়ানের প্রভাব বৃদ্ধি, পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে বি’রোধী দলের ক্ষ’মতা হ্রা’সকরণ। আমরা দেখছি, আ’লেপ্পো সি’রিয়ার স’রকারি দল ও রা’শিয়ার ক্ষমতাধীন হওয়া, পাল্টা জবাবে ৬০০০ নতুন মি’লিশিয়া নিয়ে নতুন জ’ঙ্গী দল আ’লেপ্পোয় প্রেরণ। আমরা দেখছি, ই’রাকের শি’য়া স’রকারের সহায়তায় ফ’ল্লুজাহ শহর ই’রানের হাতে যাওয়া। আমরা দেখছি, রাকা অ’ফেন্সিভ। আমরা দেখছি, এ’জিয়ান সাগর ও ভূ’মধ্যসাগরে ন্যা’টোর মি’লিটারি ড্রিল। তাদের দ্বারা মি’শরের বিমান ধ্বস। ন্যা’টোর লি’বিয়া অ’ভিযানের প্রস্তুতি। আমরা দেখছি, আ’র্কটিক অঞ্চলে স্ক্যা’ন্ডিনেভীয় দেশগুলোর সােথ যু’ক্তরা’স্ট্রের কথিত রা’শিয়ান এ’গ্রেসনের বিরুদ্ধে মি’লিটারি ড্রিল। আমরা দেখছি, বাল্টিক সাগরে ও প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে যু’ক্তরা’স্ট্র তার স্পাই প্ল্যান রা’শিয়ার ভেতর পাঠাচ্ছে। আমরা দেখেছি, তা’লে,বান লিডারের মৃত্যুতে পাকিস্তানের সাথে যু’ক্তরা’স্ট্রের সম্পর্কের আরো অবনতি হচ্ছে। অন্যদিকে শাবাহার বন্দর নিয়ে ই’রান ও ভা’রতের সম্পর্কের অগ্রগতি। ভা’রতের সামরিক বেসগুলো যু’ক্তরা’স্ট্রের মি’লিটারি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। ভা’রতের সাথে ই’জ’রা’য়েলের সম্পর্ক আরো উন্নত হচ্ছে। আমরা দেখছি, ব্রা’জিল, ভে’নেজুয়েলা, আ’রজেন্টিনাসহ ল্যাটিন আ’মে’রিকার বিভিন্ন দেশে আ’রব বসন্তের মত স’রকারবিরোধী বি’দ্রোহ সৃষ্টি করে প’শ্চি’মাপন্থী পুতুলস’রকার ক্ষ’মতায় নিয়ে আসার পাঁ’য়তারা চলছে। আমরা দেখেছি, পবিত্র রমজান মাসে ই’উরোপ আ’মেরি’কার বিভিন্ন দেশে জ’ঙ্গি আ’ক্রমণ তথা বড় ধরণের ফলস ফ্ল্যা’গ হা’মলার পরিকল্পনা চলছে। এ সবগুলো ঘটনা ইন্ডিকেট করছে যে, আমরা খুব দ্রুত প’রমাণু বি’শ্বযু’দ্ধের দিকে এগোচ্ছি। যা প্রতিটি সুস্থ মস্তিষ্কের বিবেকবান মানুষ অবশ্যই উপলব্ধি করবেন।

প্রিয় মুসলিম ভাই! আপনার ভুমিকা কি? আগামীর অনিবার্য বি’পর্যয়ের দিনে কি আপনার কর্মপরিকল্পনা।

কিইবা আপনার মিশন রিজন? কি উদ্দ্যেশের পেছনে ছুটছেন? কি করা আপনার উচিত? কি করছেন? নিজের করনীয় এবং উম্মাহর প্রতি আপনার দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে আপনি কতটুকু সচেতন? আদৌ কি আপনি স্বাধীন নাকি মানসিক গো’লাম?

যে পূর্বসুরীদের অগনিত ত্যাগ ও বিরামহীন পরিশ্রমের বিনিময়ে আপনার কাছে দ্বীন ইসলাম পৌছালো তাদের ঋনের কতটুকু পরিশোধ করেছেন? প্রশ্নগুলো অবজ্ঞার নয়! নিজের অবস্থান যাচাইয়ের জন্য নিজেকেই করুন। আল্লাহ দুনিয়ামুখিতা, চেতনাহীনতা, অসচেতনতা, অসতর্কতা, গাফলতি থেকে হেফাজত করুন।

আগামীর দিনের যথার্থ কর্মপরিকল্পনা ও যথোপযুক্ত ভুমিকা রাখার তৌফিক দিন।

Leave a Reply