সুসংবাদ গুরাবাদের জন্য!
এখন সর্বত্রই ফিতনার ছড়াছড়ি। মানুষ তার প্রবৃত্তির অনুসরন করে চলেছে। আল্লার বিধানকে অবজ্ঞা করছে। দ্বীন পালনে শিথিলতা করছে। গুনাহের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। জাহিলিয়াতের আধারে পুরো সমাজ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে।
এই কঠিন পরিস্থিতিতেও একদল মানুষকে আল্লাহ্ তা’য়ালা দ্বীনের উপর অটল অবিচল রেখেছেন। হাজারো ফিতনার মাঝে তাঁরা তাওহীদের ঝন্ডাকে বহন করে চলেছেন। আল্লার দেয়া বিধান গুলিকে ঠিক মত পালন করছেন। আল্লার জমিনে আল্লার দেয়া জিবন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন।
উম্মার কল্যানে হাসিমুখে নিজের জিবন বিলিয়ে দিচ্ছেন, এরাই হল গুরাবা।
এরাই হল সেই সব গুরাবা যাদের কথা হাদীসে এসেছে-
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় পদযাত্রা শুরু করেছে আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সুসংবাদ অপরিচিত ব্যক্তিদের জন্য। সুসংবাদ গুরাবাদের জন্য।
সাহাবায়েকেরাম রাঃ জিজ্ঞাস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ্! গুরাবা কারা? আল্লার রাসূল গুরাবা কারা?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বললেন, মানুষেরা যখন পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে, সমাজ যখন নষ্ট হয়ে যাবে তখন সেই পথভ্রষ্ট মানুষদেরকে যারা হেদায়েতের পথ দেখাবে, সেই নষ্ট সমাজকে যারা সংস্কারের চেষ্টা করবে তারাই গুরাবা।
উল্লেখিত হাদীসের মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম “ইউস্তুহুনা” শব্দ ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ গুরাবারা সমাজকে সংস্কার করবে, সমাজকে পরিশুদ্ধ করবে। শুধমাত্র নিজেরা পরিশুদ্ধ হয়েই ক্ষান্ত হবে না।
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেন, সুসংবাদ গুরাবাদের জন্য।
সাহাবায়েকেরাম রাঃ. জিজ্ঞাস করলেন হে আল্লার রাসূল! গুবারা কারা?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বললেন, অনেক মানুষের ভিড়ে অল্পসংখ্যক ভাল মানুষ। যাদের অনুসারীদের চেয়ে বিরোধীদের সাংখ্যাই বেশী হবে।
আবু হুরায়রা(রা) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলাম শুরু হয়েছিল গুরাবা ( আগন্তুক / অচেনা / আজব ) হিসেবে, এবং এটা আবার ফিরে যাবে গুরাবা হয়ে। সুতরাং গুরাবাদের তুবা ( সুসংবাদ ) দাও। [সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ইমান ২৭০]
আরেকটি বর্ণনায় আছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), গুরাবা কারা?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জবাব দেন, “যারা সৎকর্মশীলতায় দৃঢ় থাকে এমন একটা সময়ে যখন লোকজন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে যায়।” [ তাহাঊঈ, আল মুশকিল ]
আজকে আমাদের সমাজের বাস্তবতার দিকে লক্ষ করুন।আমাদের সমাজে কোন মুসলিম তরুন যদি ইসলাম পালন করে, দ্বীনের উপর চলার চেষ্টা করে তাহলে তাকে নিয়ে উপহাস করা হয়, তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়। সে তিরস্কার ও ভৎসনার পাত্রে পরিনত হয়। পরিস্থিতি আজ এমন হয়েছে, দ্বীন পালনকারী ব্যক্তি তার সাথীদের মাঝে গুরাবা, দ্বীন পালনকারী ব্যক্তি তার আত্মীয়দের কাছে গুরাবা, দ্বীন পালনকারী ব্যক্তি তার পরিবারের মাঝে গুরাবা।
এজন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভবিষ্যতবাণী করছেন,
তোমাদের পরে ধৈর্যের দিন আসছে, তোমাদের পরে ধর্যের দিন আসছে, তখন দ্বীনের উপর অটল থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার ধারন করার মত কষ্টকর হবে। তখন দ্বীনের উপর অটল থাকা প্রজ্জলিত কয়লা হাতে ধারন করার মত কষ্টকর হবে। সে সময় যারা দ্বীনের উপর আমল করবে, সেই সময় যারা দ্বীনের উপস অটল থাকবে তারা পঞ্চাশ জন আমলকারীর সমপরিমান ছোয়াব পাবে।
সাহায়েকেরাম রাঃ. জিজ্ঞাস করলেন, তারা কি তাদের মধ্যেকার পঞ্চাশ জনের সমাপরিমান ছোয়াব পাবে? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জবাব দিলেন, না বরং তোমাদের মধ্যেকার পঞ্চাশ জনের সমপরিমান ছোয়াব পাবে।
সুবহান আল্লাহ্!
উল্লিখিত হাদীস থেকে বঝা যায়, ফিতনার জামানায় যে সকল গুরাবারা দ্বীনের উপর অটল থাকবে, ফিতনার জামানায় যে সকল গুরাবারা দ্বীনের উপর ধর্য ধারন করে থাকবে তারা সাহাবীদের মধ্য থেকে পঞ্চাশ জন সাহাবীর আমলের সমপরিমান সওয়াবের অধিকারী হবে।
সুবহান আল্লাহ্!
এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কি হতে পারে!?
অনেকে গুরাবাদের হতভাগা মনে করে। না। তারা হতভাগা না। তাঁরাই সৌভাগ্যবান। কারন তাঁদের ব্যপারে মুহাম্মাদে আরবী সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সুসংবাদ গুরাবাদের জন্য! সুসংবাদ গুরাবাদের জন্য! সুসংবাদ গুরাবাদের জন্য! -সংগৃহীত