You are currently viewing সিরিয়াযুদ্ধ নেপথ্যে কি কোথায় ভাসবে ফোরাতের স্বর্ণপাহাড়

সিরিয়াযুদ্ধ নেপথ্যে কি কোথায় ভাসবে ফোরাতের স্বর্ণপাহাড়

সিরিয়াযুদ্ধ_নেপথ্যে_কি?
কোথায়_ভাসবে_ফোরাতের_স্বর্ণ_পাহাড়?সুফিয়ানী_প্রকাশের_বাকি_কদিন?

→ সিরিয়া যুদ্ধের কারণ ও উদ্দেশ্যে কি, তা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। সিরিয়া যুদ্ধ ইমাম মাহদী (আঃ) ও শেষ জামানার একটি বড় আলামতের মধ্যে অন্যতম। কারণ বর্তমান সিরিয়া যুদ্ধ যদি রাসূল (সঃ) ভবিষ্যত বাণীর সে চতুর্থ ফেতনা হয় তাহলে এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এছাড়াও আরবের সার্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পৃথিবীর মেয়াদ কাল। হাদীসে বর্ণিত আছে, সিরিয়া ফেতনার মেয়াদকাল হবে ১২ বছর, তারপর সুফিয়ানের প্রকাশ হবে, সে হিসাবে ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে শুরু হয় সিরিয়া ফেতনা ১২ বছর পাড় হলে দাঁড়ায় ২০২৩ সাল, যার বাকি ৩ বছর। বর্তমান বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি ও হাদীসের আলোকে ২০২৩ সালকে ইংগিত করে।

প্রথমে একটি হাদীসটি জেনে নেই, হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, শাম (সিরিয়া) দেশে তিন পতাকা বিশিষ্ট তিনজন লোক আত্মপ্রকাশ করবে। আসহাব , আবকা ও সুফিয়ানী পতাকা। আসহাব প্রকাশ হবে মাশরিক (অর্থাৎ সিরিয়ার পূর্বাঞ্চল ইরাক) থেকে, আবকা প্রকাশ হবে মিশর থেকে এবং সুফিয়ানী প্রকাশ হবে শাম দেশ (সিরিয়া) থেকে। আর সুফিয়ানী তাদের উভয়ের উপর বিজয়ী হবে।
(আল ফিতানঃ হাদীস নং – ৮৪৫)

উপরোক্ত হাদীসের বাস্তবতা বুঝতে হলে আপনাকে হাদীস বর্ণিত আসহাব, আবকা আগে সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।

আসহাব : আসহাব প্রকাশ হবে মাশরিক (অর্থাৎ সিরিয়ার পূর্বাঞ্চল ইরাক) থেকে। আমরা জানি আসহাব জাতি হবে বনি হাশেম বংশের পরবর্তী প্রজন্মের সন্তানেরা। যারা সিরিয়ার পূর্বাংশ অর্থাৎ (দেইর আল জুর, হাসাকা, আবু কামাল, রাক্কা) নিয়ন্ত্রণ করবে। তারা আসবে মাশরিক অঞ্চল অর্থাৎ ইরাক ও খোরাসানের দিক থেকে।

আবকা : প্রকাশ হবে উমাইয়া বংশের খলিফা মারওয়ানের বংশধরদের থেকে। আবকা জাতি আসবে মিশরের দিক থেকে। যারা সিরিয়ার পশ্চিমাংশ (অর্থাৎ হোমস, হামা, লাটাকিয়া দামেস্কাস শহর) নিয়ন্ত্রণ করবে।
সূত্র : হাদীসটি পুরো দিলে লেখা বড় হবে। (নুয়াইম বিন হাম্মাদের আল ফিতানঃ হাদীস নং – ৮২১)

উপরোক্ত তথ্য থেকে আমরা পরিচিত হলাম আসহাব ও আবকা জাতি সম্পর্কে, এবার আসুন জেনে নেই বাস্তবতা থেকে। আশ্চর্যের বিষয় হল, IS (ইসলামিক স্টেট) এর প্রধান আবু বকর আল বাগদাদী কিন্তু বংশগত দিক থেকে কুরাইশ বংশের লোক । আর কুরাইশ বংশ কিন্তু বনি হাশেম গোত্রের একটি শাখা।

আর আমরা সবাই জানি, আবু বকর আল বাগদাদী সিরিয়া যুদ্ধের শুরু থেকেই বাশার আল আসাদের পক্ষে যুদ্ধরত শিয়াদের বিরুদ্ধে মারমুখী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, আর সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও তারা বাবা পূর্ব প্রেসিডেন্ট বনু কাল্ব গোত্রের, যে গোত্র থেকে প্রকাশ পাবে সুফিয়ানী এবং সুফিয়ানী বাহিনীর সমর্থক । সুতরাং আমরা একথা বলতেই পারি যে, ইসলামিক ইস্টেট এর পরবর্তী প্রজন্মের অনুসারীরাই হচ্ছে আসহাব জাতি। কারণ তাদের দলের প্রধান হচ্ছে বনি হাশেম গোত্রের লোক, আর তারা এসেছে মাশরিক অঞ্চল বা, পূর্বাঞ্চল (অর্থাৎ সিরিয়ার পূর্ব দিক) ইরাক থেকে।

আমরা জানি আবু বকর আল বাগদাদী ছিলেন আল কায়দার পরিচালক, পরে তিনি সেটা ভেঙ্গে ১৮-০৪-২০১০ সালে সুন্নী মতাদর্শে আইএসআই নামে একটি সংগঠন তৈরি করে নিজেকে ইসলামিক স্টেটের খলিফা ঘোষনা করে। তার সাথে প্রথম পর্যায়ে সিরিয়ার আরেক সুন্নী মতাদর্শের বিদ্রোহী সংগঠন “হায়াত তাহরির আল সাম” আবু মুহাম্মদ জাওলানী একতাবদ্ধ হয়ে “আইসিস” নামে ইরাক ও সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। আবু বকর আল বাগদাদী ইরাকে তেল উত্তোলন কেন্দ্র দখলসহ আরও ব্যাপক এলাকা দখল করে নেয় এবং ২০১৫ সালের দিকে সিরিয়ার রাক্কাহ দখল করে ইসলামী স্টেট এর রাজধানী ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে বিরোধ হওয়া “হায়াত তাহরির আল সাম” আবু বকর আল বাগদাদীর সাথে বিদ্রোহ করে, যার ফলে তাদের কাছে টেনে নেয় বাশার আল আসাদ, রাশিয়া ও ইরানের মিলিশিয়া। ইসলামী স্টেট এর বিরোধীতা করায় আমেরিকা   “হায়াত তাহরির আল সাম” কে জঙ্গি সংগঠন ঘোষনা দিলেও আবু বকর আল বাগদাদীর বিরোধীতা করায় অনেকটা ছাড় দিয়ে দেয়। আবু বকর আল বাগদাদীকে জঙ্গী সংগঠন ধমন নামে জাতিসংঘ ন্যাটো বাহিনী বাশার আল আসাদের পক্ষে মিত্ররা একত্রিত হয়ে “এ্যাঙ্গার অব দি ইউফ্রেটিস” মিশন শুরু করে। ইরাকের তেল উত্তোলন কেন্দ্র আইএস এর হাতছাড়া হয়ে গেলে অনেকটা আর্থিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে আইএস। মার্কিন সেনাবাহিনীর এক বিশেষ মিশনে ২৭-১০-২০১৯ ইং তারিখে আবু বকর আল বাগদাদীকে ঘিরে ফেললে সে নিজের গাঁয়ে থাকা বোমা বিস্ফোরণ করে আত্মহত্যা করে, মার্কিন সেনারা দাবী করে সাথে তার তিন সন্তানও মারা যায়।

আবু বকর আল বাগদাদীকে হত্যা করলেও পশ্চিমারা মনে করে আইএস বর্তমানে দূর্বল হলেও ভবিষ্যতে তাদের আবার উত্থান হবে, মার্কিন সাংবাদিক তারা এক প্রতিবেদন উল্লেখ্য করে, আইএস শুধুমাত্র ইরাক ও সিরিয়ার মিলিশিয়াদের হাতে প্রাথমিক পরাজয় বরণ করলেও তারা যে কোন সময় আবার দখল করে নিতে পারে সিরিয়া ও ইরাক, হতে পারে আবু বকর আল বাগদাদী এর প্রজন্ম হতে পারে আসহাব জাতি, হাদীসের ইঙ্গিত অনুযায়ী।আপনার বলতে পারেন বাশার আল আসাদ বর্তমানে সিরিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নিয়েছেন,  কবে আসহাব ও আবকা জাতি হোমস আর দামেস্কাস বিজয় করবে? আসল কথা হচ্ছে মিশরের নীল নদ যখন পানির অভাবে শুকিয়ে যাবে এবং মিশরের অর্থনীতি ভেঙ্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে তখনই হলুদ পতাকাবাহী আবকা জাতি এবং তাদের সমর্থনকারী আমরিকান ও ইউরোপের বর্বর জাতি মিশরে এসে হাজির হবে এবং পরবর্তীতে তারা সিরিয়ায় এসে হাজির হবে।

মিশরের নীল নদ শুকিয়ে যাওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করতেছে ইথিওপিয়া  সরকার, তারা ৬.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে নীল নদের উপর Grand Euthiopian Regiment Dam নামে পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম বাধ নির্মাণ করছে। ২০১১ সালে এই বাধ নির্মাণ শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শেষ হওয়ার থাকলেও উইকিপিডিয়ার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী অক্টোবর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭০% শতাংশের মত কাজ শেষ হয়েছে। এই বাধ নির্মাণ সম্পন্ন হলে মিশরে নীল নদের পানি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। কারন নীল নদের পানি আসে আফ্রিকার রুয়ান্ডা নদী থেকে ইথিওপিয়া ও সুদানের উপর দিয়ে মিশরে আসে । বর্তমানে মিশরের অর্থনীতির ৭০%- ৮০% আসে কৃষি খাত থেকে। আর মিশরের কৃষি খাত সম্পূর্ণ রূপে নীল নদের  নির্ভরশীল। তাই আগামী ১০ বছর পর মিশরের ভবিষ্যৎ কি হবে তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন।

এবার জেনে নেই, মুসলমান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র তুরস্ক সিরিয়ার পাশে কেন! এর আগে আমাদের খুব ভাল করে বুঝতে হবে ইরান ও রাশিয়া শিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শিয়া মিলিশিয়াদের সহযোগিতা করছে, সেখানে তুরস্ক কেন সিরিয়া থেকে জঙ্গি নিধনের নামে ন্যাটোতে সৈন্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। এখানে মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে, বাশার নিজের কর্তৃত্ব ও প্রভাব ধরে রাখার জন্য সিরিয়াতে রাশিয়ার নৌ-ঘাটিকে বৃহৎ বিমানঘাঁটিতে রূপান্তর করেছে, আর রাশিয়া পূর্ব বন্ধুত্বে দায় ও ফোরাতের তীরে ভেসে উঠা স্বর্ণ পাহাড় আপোষে দখল করতেই মিত্র হয়েছে এবং তুরস্ক সে স্বর্ণ পাহাড় দখল করতে পূর্ব থেকেই সিরিয়ায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে। এদিকে সিরিয়ার এক এলাকায় বিদ্রোহীদের দমাতে বিমান হামলা করলে তুরস্কের বহু সেনা নিহত হয়ে, এতে এরদোয়ান সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে বার বার হুশিয়ারি দিচ্ছে সিরিয়া ও রুশ সেনা যদি তুরস্কের কোন সেনাদের পরবর্তীতে আহতও করে তবে চরম মূল্য তাদের দিতে হবে। মূলত তুরস্ককে সে খাজানার ভাগ দেয়ার জন্য ও বিদ্রোহীদের এবং জঙ্গিদের দমন করতে সিরিয়াতে আমন্ত্রন জানায়। একটি হাদিসে বলা হয়েছে তুর্কিরা (তুরস্ক) দুইবার বের হয়ে আসবে (একবার তারা ৭০০বছর মুসলিম বিশ্ব শাসন করেছিল) আর দ্বিতীয় বার বের হয়ে আসবে কিরকিসিয়ার ময়দানে। আর কিরকিসিয়ার যুদ্ধের পর তুর্কিদের (তুরস্কের অভ্যন্তরে) নিজেদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হবে।যার কারণে তারা অস্তিত্ব সংকটে পরবে। এরপর আর কোন তুর্কি (তুরস্কের ক্ষমতা) থাকবে না।

খুব সুক্ষ্ম একটা বিষয় বুঝতে হবে, আইএস (কালো পতাকাবাহী) দলের উত্থান মানে ফোরাতের স্বর্ণ পাহাড় ভেসে উঠার আগাম বার্তা। আর ফোরাতের যেখানে স্বর্ণ ভাসবে, যে জায়গাটিতে হাদিসে কিরকিসিয়ার যুদ্ধ বলা হয়েছে সে জায়গাটা আইএস এর দখলে ছিলো যার বর্তমান নাম Deir-Ez-Zur।

বর্তমানে তুরস্ক Autaturk Baraji Dam নামে একটি বাধ নির্মাণ করে এবং সিরিয়া Raqqa Province এ Tabqa Dam নির্মাণ করার কারনে ফোরাত নদীর পানি দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। হয়তো অচীরেই সে সময় চলে আসছে, আল্লাহপাক সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।

ইমাম মাহদীর প্রথম শত্রু সুফিয়ানের আবির্ভাব ও হয়ে গেছে। ফোরাতের পানি তলানীতে নেমে গেছে। আর কতদূর হে বন্ধু!!এখনো কি খবর হয়নি তোমার।

Leave a Reply