You are currently viewing ভ’য়াবহ দু’র্যোগ,  আবারও আমাদের গ্রাস করার জন্য  ওঁৎ পেতেছে।

ভ’য়াবহ দু’র্যোগ, আবারও আমাদের গ্রাস করার জন্য ওঁৎ পেতেছে।

তাতারীদের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী মোঙ্গল তাতারীদের নি’র্মম অত্যাচারে মুসলিম উম্মাহ নি’ষ্পেষিত হয়েছিল। তাতারদের হাতেই খি’লাফতের রাজধানী বা’গদাদের চুড়ান্ত ধ্বং’স সম্পূর্ণ হয়। সেদিন মুসলিমদের র’ক্তের স্রোত রাস্তায় রাস্তায় আর অলিতে গলিতে প্রবাহিত হয়েছিল। ধ্বং’সযজ্ঞের পর পু’ড়ে ছা’ই করে ফেলা হয় বা’গদাদের অসংখ্য লাইব্রেরী, মসজিদ, মাদ্রাসা, মুসাফিরখানা। নি’ষ্ঠুর ও নি’র্মমভাবে তাতারদের এ অত্যাচারে একের পর এক মুসলিম খি-লাফত, সালতানাত ও রাজ্যসমূহ তছনছ হয়েছিল। তাতারদের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ, যুদ্ধ ক্ষমতা, আর সংখ্যার আধিক্য দেখে তৎকালীন সময়ে কিছু আলেমেদ্বীন তো তাদেরকেই ইয়াজুজ মাজুজ ভেবে বসে। তাতারদের ধ্বং’সলীলা ও ভ’য়াবহতা দেখে ইবনূল আছীর [রাহেমাহুল্লাহ] আক্ষেপ করে বলেছিলেন : ❛হায়! আমার মা যদি আমাকে জন্ম না দিতেন! হায়! আমি যদি এই ঘটনার পূর্বে মৃত্যুবরন করতাম এবং একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম

বিশ্বজেতা আলেকজান্ডারও এত দ্রুত বিশ্ব জয় করতে পারেনি। তিনি বিশ্ব জয় করে প্রায় ১০ বছরে। এতে সে তেমন হ’ত্যাযজ্ঞ করেনি। লোকেরা তার আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছিল। আর তাতাররা পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রকে মাত্র ১ বছরেই দখল করে নেয়। ইবনূল হাদীদ [রাহেমাহুল্লাহ] বলেছিলেন : তাতারদের ব্যপারে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যে ভবিষদ্বানী করেছিলেন আমরা তা স্বচক্ষে দেখছি এবং আমাদের সময়ে তা ঘটেছে। ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই লোকেরা এরুপ পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছিল। অবশেষে এই ভ’য়াবহতা আমাদের যুগে এসে বাস্তবায়িত হয়।

তাতার বাহিনী যে ধ্বং’সলীলা চালিয়েছিল তা মানব ইতিহাসে খুবই বিরল। তারা প্রথমে মুসলিম বিশ্বের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনি। কিন্তু কতিপয় মুসলিম -নেতাদের অতিলোভ ও ভুল সিদ্ধান্তের কারনেই তারা মুসলিম বিশ্বের প্রতি হিং’সাত্মক ও আ’গ্রাসী হয়ে উঠে দ্রুত। তারা পূর্ব চীন সীমান্তের ত্বামগাজা পর্বতমালার পাদদেশে বাস করতো। তাদের ও মুসলিম বিশ্বের মাঝে ছয় মাস পথের দুরত্ব ছিলো। কিন্তু মুসলিম নেতাদের ভুল সিদ্ধান্তে তাতারদের লক্ষ্য বস্তুতে পরিনত হয়ে এতো বিশাল ও মা’রাত্মক পরিনতি ভোগ করতে হয় যা অবর্ণনীয়। তাতারদের ইতিহাস ভ’য়াবহ র’ক্তমাখা! মা’রাত্মক ভ’য়ঙ্কর! এককথায় তৎকালীন সময়ে মোঙ্গল তাতাররা মুসলিম বিশ্বে এক ভ’য়াবহ আ’তঙ্ক হিসেবে বিরাজ করছিলো। আর এর একমাত্র কারণ ছিলো নিজেদের মধ্যকার কোন্দল, পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভ’য়ানক হিং’সা ও বি’দ্বেষ আর অনৈক্য।

সত্যিকার অর্থে কুরআন ও হাদীসের প্রতি মানুষের অনিহা আর ফিকহী মাসআলার প্রতি ছিলো এক অন্ধ অনুরাগ বা মোহ।ইখতিলাফ, দলাদলি, মতবিরোধ, মতপার্থক্য, আন্তকো’ন্দল ও ভ্রাতৃঘা’তী সংঘর্ষ ও পরস্পরে যু’দ্ধ পর্যন্ত হয়েছিল মতবিরোধ ও দলাদলি কেন্দ্র করে। প্রকৃত অর্থে ইসলাম ছিলো অ’বরুদ্ধ। আর এই সব কারনেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মু’সলিম জা’তির প্রতি হয়তো রুষ্ট হয়েছিলেন।পরিনামে মুসলিম জা’তি এ সময় ধ’র্মীয় ও রা’জনৈতিক ক্ষেত্রে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে গিয়ে পৌছেছিল।

খুব সম্ভবত সেই দুর্যোগ, ঘনঘোর অ’ন্ধকার আজ আবার আমাদের গ্রাস করার জন্য যেন ওঁৎ পেতেছে।

সত্যিকারঅর্থে সত্য আজ নিথর হয়ে আছে আর মিথ্যার দাপট সবখানেই বিরাজমান। ন্যায় ও সত্যের অনুসারীরা আজ নীরব দর্শক আর ‘‘ইনসাফ’’ শব্দটি শুধুমাত্র অভিধানের পাতায় তার শেষ অবস্থান গ্রহণ করেছে।

প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যু’লুম, অ’ন্যায়-অ’ত্যাচার ক্রমাগত দারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। না জানি এ জাতির ভাগ্যাকাশে কি লিখা আছে। না জানি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রুষ্ট হয়ে নিমজ্জমান এ জাতি ও সম্প্রদায়ের পরিবর্তে হয়তো আর এক নতুন সম্প্রদায়ের উন্মেষ ঘটাবেন! আজ পৃ’থিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তে এ জা’তির কি দু’র্বিষহ নি’র্মম অসহায় অবস্থা চিন্তা করলেই শিহরিত হতে হয়। আর আজ সেই আতঙ্ক আমাদেরকে যেন ক্রমশ গ্রাস করছে। সি.এন.এন এর একটি রিপোর্ট দেখলাম : ২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত শুধুমাত্র ই’রাকেই ৫ লক্ষ ৬৬,০০০ হাজার মা’নুষ নি’হত হয়। কি অপরাধ ছিলো তাদের!?

মালয়েশিয়ার রূপকার ড. মাহাথির মুহাম্মদ ১১তম ও.আই.সি সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষনে বলেনঃ

পৃ’থিবীর ১৮০টা দেশের মধ্যে ৫৭টি আমরা নি’য়ন্ত্রণ করি। আমাদের ভোটে আ’ন্তর্জাতিক সং’স্থাগুলো ভেঙে যেতে পারে। তবুও জাহেলী যুগে যে সল্প সংখ্যক মানুষ নবী মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে তাদের নবী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন আমরা যেন তাদের চেয়েও অসহায়। কেন?, আল্লাহর ইচ্ছায়, নাকি আমরা আমাদের ধর্মকে ভুলভাবে ব্যখ্যা করছি বলে? নাকি আমাদের ধর্মের সঠিক শিক্ষা মেনে চলতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি বলে? নাকি আমরা অনেক ভুল করেছি বলে? এ বিষয়টি অনুধাবন করার সময় কি এখনো আসেনি।

আজ এখন এ কথা অত্যন্ত পরিস্কার যে, বিংশ শতাব্দীর এ বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় শুধু নিরব দর্শক হয়ে বসে থেকে মুসলিম ও মুসলিম দেশগুলো তাদের স্বকীয় সত্ত্বা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে ফেলেছে। বিশ্বে প্রতি ছয়জনে একজন মুসলিম। অথচ, এক বিলিয়ন মুসলিম মিলে আমরা হতে পারতাম অসীম ক্ষ’মতাধর। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো আজ আমরা ইসলামের মূল ভিত্তি ও চেতনাবোধকে হারিয়ে ফেলেছি — হারিয়ে ফেলেছি ইসলামের সুমহান ভ্রাতৃত্ববন্ধন।

আর যখন মিল্লাতে কু’ফর পরস্পরে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, আর তখন আমরা দিনে দিনে নিজেদেরকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করে দূরে অবস্থান করছি। ফলে শ’ত্রুপক্ষ আজ মিত্রবেশে আমাদের ঘরের দরজায় এসে করাঘাত করছে। আর আমরা অসহায় ও নিরুপায় হয়ে পঙ্গু মানুষের মতো তাদের দিকেই করুনার পাত্র হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে মূল্যায়ন করছি। অথচ, যে জাতি সমগ্র পৃ’থিবীর রা’জত্ব ও রাজ্য পরিচালনায় কর্তৃত্বের অধিকারী হওয়ার কথা, আজ সেখানে এক নগন্য ক্ষুদ্র ই’হু’দী রা’ষ্ট্রের কাছে আমরা বসে বসে অব্যাহত মার খাচ্ছি, নিস্পাপ শিশুদের গ’লাকাটা মুরগির মতো ছটফট করে মৃ’ত্যুর সাক্ষী হচ্ছি।

রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ।

অচিরেই, বিভিন্ন জাতিগুলো তোমাদের বিরুদ্ধে জড়ো হবে ঠিক যেমনিভাবে ক্ষুদার্তরা খাবারের চারপাশে জড়ো হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন : ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটা কি এজন্য হবে যে, আমরা সংখ্যায় খুব কম হবো? তিনি বললেন : নাহ! সেসময় তোমরা সংখ্যায় অগনিত হবে কিন্তু তোমরা হবে সামুদ্রিক ফেনার মতো। আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থে‌কে ভয় ও ত্রাস দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহান’ ঢুকিয়ে দেবেন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন : ইয়া রাসুলুল্লাহ ওয়াহান কি? রাসুলুল্লাহ বললেন : ‘‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা’’ অন্য বর্নণায় আছে ‘জি-হাদ ক্বি-তালকে পরিত্যাগ ও অপছন্দ করা’」

সুনান আবু দাউদ ৪২৭৯, মুসনাদ আহমাদ ০৩/২৮১, সিলসিলা সহিহাহ ৯৫৬।

আজ যেন রাসূলের কথাটি অক্ষরে অক্ষর বাস্তবায়ন হয়েছে।

দয়াময় প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের রক্ষা করুন। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আমাদের এই হতাশার ক্রান্তিকাল থেকে উদ্ধার করুন। রাব্বুল আলামিন শুধু আপনিই একমাত্র সাহায্যকারী আর উত্তম সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠতম হীতাকাঙ্খী হয়ে আমরা আপনার অবাধ্য গোলাম আর ম’জলুম দুর্বলদের প্রতি দয়া করুন।

‘হে আমাদের রব, আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা স্থির রাখুন এবং আমাদেরকে কা’ফের জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য করুন।

This Post Has 2 Comments

  1. hassan

    allah kobul korun

  2. Subahanallah

    ভাই আপনার ফেসবুক আইডির লিংক টা দেন প্লিজ

Leave a Reply