You are currently viewing দাজ্জালের আগমনের আগে পৃথিবীর অবস্থা!!

দাজ্জালের আগমনের আগে পৃথিবীর অবস্থা!!

দাজ্জালের আগমনের আগে পৃথিবীর অবস্থা


হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“দাজ্জালের আবির্ভাবের আগের কয়েকটি বছর হবে প্রতারণার বছর।
এসময়টিতে সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী আর
মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী আখ্যায়িত করা হবে।
দুর্নীতিবাজকে আমানতদার আর আমানতদারকে দুর্নীতিবাজ মনে করা হবে। আর মানুষের মধ্যে থেকে ‘রুয়াইবিজা’ রা কথা বলবে”। জিজ্ঞাসা করা হল, ‘রুয়াইবিজা’ কি জিনিস? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “অপরাধপ্রবণ লোকেরা জনসাধারণের বিষয়-আশয় নিয়ে কথা বলবে”।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১৩৩২; মুসনাদে আবী ইয়া’লা, হাদিস নং ৩৭১৫, আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)

হাদিসটি বর্তমান যুগের জন্য কতখানি উপযোগী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তথাকথিত ‘সভ্যজগত’ এর বিবৃত মিথ্যাকে কত ‘শিক্ষিত’ মানুষও সত্য বলে মেনে নিয়েছে। সেই মিথ্যার ফিরিস্তি এতই ব্যাপক ও বিস্তৃত যে, যদি তা কাগজে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাহলে লিপিবদ্ধকারীর জীবন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু মিথ্যার তালিকা শেষ হবে না। আর কত সত্য এমন আছে, যার গায়ে ‘ন্যায়প্রিয়’ পশ্চিমা মিডিয়া ও তাদের তল্পিবাহক অন্যান্য মিডিয়া তাদের প্রতারণার এমন কলঙ্ক লেপে দিয়েছে যে, জীবন ক্ষয় করে পরিষ্কার করলেও বিমোচিত হবে না।

এই হাদিসে একটি আরবি শব্দ আছে ‘খাদাআ’। শব্দটির একটি অর্থ বৃষ্টি বেশি হওয়া। ইবনে মাজার ব্যাখ্যায় এর বিশ্লেষণ করা হয়েছে, ‘এই বছরগুলোতে বৃষ্টি বেশি হবে, কিন্তু ফসলের উৎপাদন কম হবে।
এই বছরগুলোর জন্য এটি হল একটি ধোঁকা’।
উমাইর ইবনে হানী থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “একটি সময় আসবে, যখন মানুষ দুটি তাঁবুতে (দলে) বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি তাবু হবে ঈমানের, যেখানে কোন নিফাক (কপটতা/দ্বিমুখীতা) থাকবে না।
অপর তাঁবুটি হবে নিফাকের, যেখানে কোন ঈমান থাকবে না। যখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে, তখন সেদিন থেকে বা তার পরদিন থেকে দাজ্জালের অপেক্ষা করো”।
(সুনানে আবু দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৯৪; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১৩)

আল্লাহপাকের হেকমত অনেক সূক্ষ্ম।
তিনি যাকে দ্বারা ইচ্ছা হয় কাজ নিয়ে নেন। মুসলমানরা নিজেরা তো এই উভয়
(মুমিনওয়ালা ও মুনাফিকওয়ালা) তাঁবু তৈরি করে নিতে পারে না। তাই আল্লাহ পশ্চিমা এক নেতার মাধ্যমে কাজটির শুভ সূচনা করিয়ে নিয়েছেন। আফগানিস্তানের মতো একটি দরিদ্র দেশকে ৯/১১ এর জন্য দায়ী করে কোন তথ্য প্রমাণের ধার না ধরে আক্রমণ করার সময় ইহুদি মতাদর্শের সেবক সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করেছিল, “ হয় আপনি আমাদের সাথে আর নয় তো আপনি ‘সন্ত্রাসী’ দের সাথে?” বিপুল সংখ্যক মানুষ এই তাঁবুতে ঢুকে পড়েছে। এখনও কিছু অবশিষ্ট আছে। আল্লাহ এই কাজটিও পরিপূর্ণ করে দেবেন এবং অবশ্যই করবেন।
তাতে পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যাবে, কে ঈমানওয়ালা আর কার অন্তরে ঈমানওয়ালাদের তুলনায় আল্লাহর শত্রুদের প্রতি বেশি ভালোবাসা লুকিয়ে রয়েছে। তাই প্রত্যেককে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার যে, আমি কোন তাঁবুতে আছি কিংবা আমার সফর কোন তাঁবুর দিকে। নীরব দর্শনার্থীদের না ইবলিস ও তার দলভুক্তদের প্রয়োজন আছে, না আল্লাহর তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক আছে।
এই যুদ্ধ সিদ্ধান্তমূলক লড়াই। কাজেই প্রত্যেককে কোন না কোন পক্ষ অবলম্বন করতেই হবে। এটি এমন একটি সময়, যখন প্রতিজন ব্যক্তি, প্রতিটি সংগঠন, প্রতিটি দল সেদিকে ঝুঁকে যাবে, যার সঙ্গে তার হৃদ্যতা ও আন্তরিকতা থাকবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেছেনঃ “যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তারা কি ভেবে বসেছে যে, আল্লাহ তাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দেবেন না?” (সূরা মুহাম্মাদঃ২৯)

প্রতিটি দেশ ইহুদীদের দ্বারা পরিচালিত ইহুদী স্বার্থের অনুকূলে একাট্টা হয়ে যাবে এবং বহু সংগঠন একটি অপরটির সাথে মিশে যাবে। যেসব সংগঠনের ‘ব্যাকডোর’ ইহুদীদের হাতে, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে ইহুদী মিশন বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং ইহুদী মতাদর্শের সেবক নেতাদের মুখ থেকে যে আওয়াজ উত্থিত হবে, উক্ত সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও
ব্যক্তিবর্গের মুখ থেকেও একই ধ্বনি উচ্চারিত হবে। বিশেষ করে, বর্তমানে আল্লাহ প্রতিটি মুসলিম অধ্যুষিত ভূখণ্ডে বিভিন্ন নামে ঈমান, আকিদা ও ইসলামী শরীয়তের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এমন সব ইস্যু নিয়ে আসছেন, যে প্রতিটি মুসলিমধারী পুরুষ এবং মহিলা বাধ্য হচ্ছেন ব্যক্তি পর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়ে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ঈমান ও নিফাকের আদলে পৃথক হতে। আর কাফের মুশরিকরাও সেই সব ইস্যুতে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে জোর
গলায়।

ফলে ইমানওয়ালা আর মুনাফিকদের পরিচয় হয়ে উঠছে প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “একদিন আমি হুজায়ফার সঙ্গে হাতিমে ছিলাম। সে সময় তিনি একটি হাদিস বর্ণনা করলেন। পরে বললেন, ইসলামের আংটাগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে আর বহু বিভ্রান্তকারী নেতার আবির্ভাব ঘটবে।
তার পরপরই তিনজন দাজ্জাল আবির্ভূত হবে। আমি বললাম, হে আবু আব্দুল্লাহ, এই কথাগুলো আপনি আল্লাহর রাসুল থেকে শুনেছেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি এই কথাগুলো আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ থেকে শুনেছি। আর আমি তাকে একথাও বলতে শুনেছি যে, দাজ্জাল ইস্পাহানের ইহুদিয়া নামক অঞ্চল থেকে আত্মপ্রকাশ করবে”।
(মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৭৩)
এই বর্ণনাটি অনেক দীর্ঘ, যার অংশ বিশেষ এই – তিনটি আর্তনাদ উত্থিত হবে, যা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমের সবাই শুনতে পারে…..। হে আব্দুল্লাহ, যখন তুমি দাজ্জালের সংবাদ শুনবে, তখন পালিয়ে যেও’। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি হুজায়ফাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা যাদেরকে পিছনে রেখে যাব, তাদের হেফাজত কিভাবে করব? হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বললেন, তাদেরকে আদেশ করে যাবেন, যেন তারা পাহাড়ের চূড়ায় চলে যায়। হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তারা যদি সবকিছু ত্যাগ করে যেতে না পারে? তখন হুজায়ফা (রাঃ) বললেন,
তাদেরকে আদেশ করে যাবেন, যেন তারা সবসময় ঘরেই থাকে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যদি তারা এ- ও করতে না পারে, তাহলে? হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বললেন, হে ইবনে ওমর! সময়টি হবে আতঙ্ক, ফেতনা, অনাচার ও লুটপাটের। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে হুজায়ফা, সেই দুর্যোগ থেকে কোন মুক্তি আছে কি? হযরতহুজায়ফা (রাঃ) বললেন, কেন থাকবে না? এমন কোন ফেতনা নেই, যার থেকে মুক্তি নেই। অপর এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের ব্যাপারে দাজ্জাল ছাড়া আরও যে ফেতনাটির কথা উল্লেখ করেছেন, সেটি হল বিভ্রান্তকারী নেতৃবর্গ। হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের ব্যাপারে আমি যে বিষয়টিকে বেশি ভয় করি, তা হল, বিভ্রান্তকারী নেতৃবর্গ”। দাজ্জালের সময় এই চরিত্রের নেতাদের ছড়াছড়ি থাকবে।
দাজ্জালি শক্তির চাপ কিংবা প্রলোভনে এসে তারা নিজেরাও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং অনুগত অনুসারীদেরও সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কারণ হবে। হযরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ আনসারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমার ঘরে অবস্থানরত ছিলেন।
সে সময় তিনি দাজ্জালের বিষয়ে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, “তার আগে তিনটি বছর অতিবাহিত হবে। প্রথম বছরটিতে আকাশ একতৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি একতৃতীয়াংশ ফসল ধরে রাখবে। দ্বিতীয় বছর আকাশ দুইতৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি দুইতৃতীয়াংশ ফসল ধরে রাখবে। তৃতীয় বছর আকাশ পূর্ণ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি পূর্ণ ফসল ধরে রাখবে। ফলে সব ধরনের গবাদিপশু ধ্বংস হয়ে যাবে”। (আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং ৪০৬; মুসনাদে আহমাদ)
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ “তুমি আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণ করতে দেখবে; অথচ সে বৃষ্টি বর্ষণ করবে না। তুমি জমিনকে ফসল উৎপন্ন করতে দেখবে; অথচ জমি ফসল উৎপন্ন করবে না”।
(মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬৯)
এর অর্থ এও হতে পারে যে, বৃষ্টিও বর্ষিত হবে, ফসলও উৎপন্ন হবে। কিন্তু তথাপি মানুষের কোন উপকার হবে না এবং মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে যাবে।


চলবে ইনশাআল্লাহ……..

Leave a Reply