You are currently viewing দাব্বাতুল আরদ: কেয়ামতের অন্যতম বড় আলামত।২য় ও শেষ পর্ব।

দাব্বাতুল আরদ: কেয়ামতের অন্যতম বড় আলামত।২য় ও শেষ পর্ব।

দাব্বাতুলআরদবেরহওয়ারসময়কালঃ

কেয়ামতের বড় বড় কয়েকটি আলামত ঘটে যাওয়ার পর এক বছর জিলহজ মাসের কোরবানির ঈদের দিবাগত রাত এত দীর্ঘ হতে থাকবে যে, সফররত ব্যক্তিরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়বে, শিশু-বাচ্চারা ঘুমাতে ঘুমাতে ক্লান্ত হয়ে জেগে উঠবে, গবাদি পশুরা চরণভূমিতে বের হতে ছটফট শুরু করবে, লোকেরা ভয়ে ও আতঙ্কে চিৎকার করে কান্নাকাটি ও দোয়া-তওবা করতে থাকবে। এভাবে তিন-চার দিন সময় পরিমাণ দীর্ঘ রাতের অবসান ঘটিয়ে চন্দ্রগ্রহণের মতো টিমটিমে আলো নিয়ে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে। এই নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার পর পৃথিবীর সব মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করবে এবং তাওবা করবে। কিন্তু তখন ঈমান ও তওবা আর কবুল করা হবে না। (ফাতহুল বারি : ১১/৩৫৩)। আকাশে আলো ফোটার পর মানুষ যখন বাইরে বের হবে তখন দুপুরের দিকে কাবা গৃহের পূর্ব দিকে অবস্থিত সাফা পাহাড় ভূমিকম্পে ফেটে যাবে। তখন সেখানকার জমিনের ভেতর থেকে দাব্বাতুল আরদ বের হবে। (মুসলিম : ২৯৪১)

দাব্বাতুলআরদসম্পর্কেহাদিসহতেকিছুকথাঃ

(১) সহিহ মুসলিম- এ হুযাইফাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,

একদা রাসূল (সা.) আমাদের নিকট আগমন করলেন। আমরা তখন কিছু আলোচনা করছিলাম, তখন রাসূল (সা.) বলল, তোমরা কি বিষয়ে আলোচনা করছ? তারা বলল, আমরা কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, যতদিন তোমরা দশটি আলামত না দেখবে ততদিন কেয়ামত হবে না।

(১ ) ধোঁয়া, (২) দাজ্জালের আগমন, (৩) ভূগর্ত থেকে নিগর্ত দাব্বাতুল/দাব্বাতুল আরদ নামক অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমন,(৪) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, (৫)‘ঈসা ইবনু মারইয়ামের আগমন,(৬) ইয়াজুয-মা‘জুযের আবর্ভাব, (৭) পূর্বে ভূমিধ্বস, (৮) পশ্চিমে ভূমিধ্বস, (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস, (১০) সর্বশেষে ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে সিরিয়ার দিকে হাঁকিয়ে নেবে।

(২) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

‘দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ নামক একটি প্রাণী বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দেবে। অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে জীবন-যাপন করবে। প্রাণীটি সব মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে দেবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছ? সে বলবে, আমি এটি নাকে দাগওয়ালা একজন ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয় করেছি।’ (মুসনাদে আহমাদ। সিলসিলায়ে সগিহ-হা: ৩২২)।

(৩) নবী (সা.) আরো বলেন,

‘দাব্বাতুল আরদ বের হবে। তার সঙ্গে থাকবে মূসা (আ.) এর লাঠি এবং সুলায়মান (আ.) এর আংটি। কাফিরের নাকে সুলায়মান (আ.) এর আংটি দিয়ে দাগ লাগাবে এবং মূসা (আ.) এর লাঠি দিয়ে মুমিনের চেহারাকে উজ্জল করে দেবে। লোকেরা খানার টেবিল ও দস্তরখানায় বসেও একে অপরকে বলবে, হে মুমিন! হে কাফির! (আহমাদ-আহমাদ শাকের সহিহ বলেছেন, হা: ৭৯২৪)।

দাব্বাতুলআরদেরপরের_অবস্থাঃ

দাব্বাতুল আরদের অন্তর্ধানের পর আল্লাহ তায়ালা ইয়েমেনের দিক থেকে রেশমের মতো মোলায়েম একটি বাতাস প্রবাহিত করবেন। যার অন্তরে সামান্য পরিমাণও ঈমান থাকবে তার শরীরে এই বাতাস স্পর্শ করবে। ফলে সব ঈমানদার ব্যক্তির ইন্তেকাল হয়ে যাবে। তারপর পৃথিবীতে কেবল নিকৃষ্ট লোকেরা থাকবে। তাদের ওপর কেয়ামত কায়েম হবে। (মুসলিম : ১১৭, ১৯২৪)।

অন্য হাদিসে এসেছে, পৃথিবীতে তখন শুধু নিকৃষ্ট আর পাপাচারী লোকেরা থাকবে। তাদের জীবনযাত্রা অত্যান্ত সুখময় হবে। পাখির মতো ক্ষিপ্রতা থাকবে তাদের। পশু-পাখির মতো স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে। কোনো কল্যাণকর কাজ তারা করবে না। কেউ কোনো মন্দ কাজ করলে বারণ করবে না। তখন শয়তান তাদের সামনে মানুষের আকৃতিতে এসে বলবে আমি তোমাদেরকে যা করতে বলব তোমরা কি তা করবে না? লোকেরা বলবে, তুমি আমাদেরকে কী করতে বল? তখন শয়তান তাদেরকে মূর্তিপূজার আদেশ করবে। সে যুগে মানুষের প্রাচুর্য ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অনেক বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর শিঙ্গায় ফুক দেওয়া হবে। (মুসলিম : ২৯৪০)।

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ও দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাবের পর পৃথিবী আর একশ বিশ বছর অবশিষ্ট থাকবে।’ (ফাতহুল বারি : ৩৬১)।

আবার কোনো হাদিসে এসেছে, ‘পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ও দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাবের পর একশ বছর পর কেয়ামত হবে।’
অর্থাৎ মোট কথা, পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ও দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাবের পর একশ বা একশ বিশ বছর পর কেয়ামত হবে।

(ছবির প্রানীটি হাদিস হতে পাওয়া দাব্বাতুল আরদের আকৃতি ও গঠন এর মত করে অংকিত কাল্পনিক দাব্বাতুল আরদ। তাই ছবির কাল্পনিক প্রাণীটির সাথে আসল দাব্বাতুল আরদের তুলনা করবেন না। আসল দাব্বাতুল আরদ দেখতে সম্পুর্ন অদ্ভুত হবে!)দাব্বাতুল আরদ: কেয়ামতের অন্যতম বড় আলামত

এই আখেরী জামানায় কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে জমিন থেকে দাব্বাতুল আরদ নামক এক অদ্ভুত জন্তু বের হবে। জন্তুটি মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এটি হবে কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম সর্বশেষ ভয়াবহ আলামত।
পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে এটি বের হবে। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায় যে, পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পরই জমিন থেকে এই অদ্ভুত জানোয়ারটি বের হবে। তাওবার দরজা যে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে- এ কথাটিকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করার জন্য সে মুমিনদেরকে কাফির থেকে নির্দিষ্ট চিন্হের মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। মু‘মিনের কপালে লিখে দেবে ‘মুমিন’ এবং কাফিরের কপালে লিখে দেবে ‘কাফির’। এ ব্যাপারে কোরআন থেকে যা জানা যায়-

পবিত্র কোরআনুল কারিমে সূরা আন নামলের ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

‘যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না।’ (সূরা: নামল, আয়াত: ৮২)।

প্রাণীটির কাজ কি হবে এবং কি বিষয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে-এ ব্যাপারে আল্লামা আলূসী বলেন, আয়াতে উল্লেখিত কোরআনের বাণীটিই হবে তার কথা।

অর্থাৎ-

এই বাক্যটি সে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শুনাবে। মর্ম এই যে, আজকের পূর্বে অনেক মানুষই মহান আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করেনি। বিশেষ করে কেয়ামতের আলামত ও তা সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে এমনকি আমার আগমনের বিষয়েও অনেক মানুষ বিশ্বাসকরত না। এখন সে সময় এস গেছে এবং আমিও বের হয়ে এসেছি।

দাব্বাতুলআরদেরপরিচয়ঃ

আরবিতে ‘দাব্বাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে জন্তু বা প্রাণী, যা জমিনে পা ফেলে চলাচল করে। আর ‘আরদ’ অর্থ হচ্ছে ভূমি, ভূপৃষ্ঠ বা ভূগর্ভ। কেয়ামতের আগে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে অদ্ভুত ধরনের একটি প্রাণী বের হবে এবং পুরো পৃথিবীতে বিচরণ করবে। এটিকে কেয়ামতের বড় আলামতের একটি গণ্য করা হয়। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই সময় আসার আগ পর্যন্ত কেয়ামত কায়েম হবে না, যতদিন না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের ঘটনা সংঘটিত হবে। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের ঘটনা ঘটার পর মানুষ দাব্বাতুল আরদ দেখতে পাবে।’ (বুখারি : ৪৬৩৬; মুসলিম : ১৫৭)।

‘দাব্বাতুল আরদ’ প্রাণীটির নাম নয় বরং অদ্ভুত প্রাণীটির প্রসঙ্গে কোরআনে ব্যবহৃত শব্দ, যার অর্থ ‘ভূগর্ভস্থ প্রাণী’। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি প্রাণী বের করব। সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে।’ (সুরা নামল : ৮২)

ইবনু কাসীর বলেন, আখেরী জামানায় মানুষ যখন নানা পাপাচারে লিপ্ত হবে, মহান আল্লাহর আদেশ পালন বর্জন করবে এবং দ্বীনকে পরিবর্তন করবে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের সামনে এই জন্তুটি বের করবেন।’ (তাফসীরে ইবনু কাসীর-৩/৩৫১)।

ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জন্তুটি মানুষের মতই কথা বলবে।’(পূর্বোক্ত উৎস)।

দাব্বাতুলআরদেরআকৃতিঃ

‘দাব্বাতুল আরদ’ বা অদ্ভুত প্রাণীটির আকৃতি প্রসঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন হাদিসে আলোচনা এসেছে। সেসব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর ভেতর অনেক প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকবে। অদ্ভুত এই প্রাণী কিছুটা উটের মতো হবে। পা হবে চারটি। মাথা হবে ষাঁড়ের মতো। চোখ হবে শূকরের মতো। কান হবে হাতির মতো। নাক হবে উটপাখির মতো। বুক হবে সিংহের মতো। রঙ হবে নেকড়ের মতো। কপাল হবে ভেড়ার মতো। ঘন পশমবিশিষ্ট হবে। মানুষের মতো চেহারা হবে। (ফাতহুল কাদির: ৪/১৫২; আদ-দুররুল মানসুর : ৬/৩৭৮)। সে পুরো পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করবে এবং সব মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তাদের ওপর নির্দেশ পতিত হবে (পূর্ব দিক থেকে সূর্য না উঠে পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া) তখন আমি তাদের জন্য দাব্বাতুল আরদ বের করব। সে সবার সঙ্গে কথা বলবে। সে সবার কাছে গিয়ে বলবে, ‘লোকেরা আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না।’ (সুরা নামল : ৮২)।
আরও বিভিন্ন হাদিসে এসেছে, সে মানুষকে তাকওয়া, তাওয়াক্কুল, আল্লাহর ভয় প্রভৃতি বিভিন্ন সদুপদেশ দিতে থাকবে।

দাব্বাতুলআরদেরকাজঃ

সূর্য পশ্চিমে উদিত হওয়ার পর ঈমান আনয়ন ও তাওবা কবুলের দরজা যে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে, এ বিষয়টি চূড়ান্ত করতে সে মুমিনদেরকে কাফের থেকে নির্দিষ্ট চিহ্নের মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দাব্বাতুল আরদ‌ বের হবে। তার সঙ্গে থাকবে মুসা (আ.)-এর লাঠি এবং সুলায়মান (আ.)-এর আংটি। ঈমানদারদের কপালে মুসা (আ.)-এর লাঠি দিয়ে নুরানি দাগ টেনে দিবে। ফলে তাদের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আর কাফেরদের নাকে সুলায়মান (আ.)-এর আংটি দিয়ে দাগ লাগাবে। ফলে তাদের চেহারা অনুজ্জ্বল হয়ে পড়বে। তখন অবস্থা এমন হবে যে, কোনো খাবারের টেবিল ও দস্তরখানায় কয়েকজন মানুষ বসলে প্রত্যেকেই একে অপরের ঈমান ও কুফুরির বিষয়টি স্পষ্ট দেখতে পাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৭৯২৪)। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দাব্বাতুল আরদ বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দিবে। তারপরও মানুষ পৃথিবীতে জীবনযাপন করবে। প্রাণীটি সকল মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে দিবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছ? সে বলবে, ‘আমি এটি নাকে দাগ লাগানো অমুক ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রয় করেছি।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৩২২)।
দাব্বাতুল আরদের কাজ শেষ হওয়ার পর অদৃশ্য হয়ে যাবে।

দাব্বাতুলআরদবেরহওয়ারসময়কালঃ

কেয়ামতের বড় বড় কয়েকটি আলামত ঘটে যাওয়ার পর এক বছর জিলহজ মাসের কোরবানির ঈদের দিবাগত রাত এত দীর্ঘ হতে থাকবে যে, সফররত ব্যক্তিরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়বে, শিশু-বাচ্চারা ঘুমাতে ঘুমাতে ক্লান্ত হয়ে জেগে উঠবে, গবাদি পশুরা চরণভূমিতে বের হতে ছটফট শুরু করবে, লোকেরা ভয়ে ও আতঙ্কে চিৎকার করে কান্নাকাটি ও দোয়া-তওবা করতে থাকবে। এভাবে তিন-চার দিন সময় পরিমাণ দীর্ঘ রাতের অবসান ঘটিয়ে চন্দ্রগ্রহণের মতো টিমটিমে আলো নিয়ে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে। এই নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার পর পৃথিবীর সব মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করবে এবং তাওবা করবে। কিন্তু তখন ঈমান ও তওবা আর কবুল করা হবে না। (ফাতহুল বারি : ১১/৩৫৩)। আকাশে আলো ফোটার পর মানুষ যখন বাইরে বের হবে তখন দুপুরের দিকে কাবা গৃহের পূর্ব দিকে অবস্থিত সাফা পাহাড় ভূমিকম্পে ফেটে যাবে। তখন সেখানকার জমিনের ভেতর থেকে দাব্বাতুল আরদ বের হবে। (মুসলিম : ২৯৪১)

দাব্বাতুলআরদসম্পর্কেহাদিসহতেকিছুকথাঃ

(১) সহিহ মুসলিম- এ হুযাইফাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,

একদা রাসূল (সা.) আমাদের নিকট আগমন করলেন। আমরা তখন কিছু আলোচনা করছিলাম, তখন রাসূল (সা.) বলল, তোমরা কি বিষয়ে আলোচনা করছ? তারা বলল, আমরা কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, যতদিন তোমরা দশটি আলামত না দেখবে ততদিন কেয়ামত হবে না।

(১ ) ধোঁয়া, (২) দাজ্জালের আগমন, (৩) ভূগর্ত থেকে নিগর্ত দাব্বাতুল/দাব্বাতুল আরদ নামক অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমন,(৪) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, (৫)‘ঈসা ইবনু মারইয়ামের আগমন,(৬) ইয়াজুয-মা‘জুযের আবর্ভাব, (৭) পূর্বে ভূমিধ্বস, (৮) পশ্চিমে ভূমিধ্বস, (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস, (১০) সর্বশেষে ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে সিরিয়ার দিকে হাঁকিয়ে নেবে।

(২) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

‘দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ নামক একটি প্রাণী বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দেবে। অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে জীবন-যাপন করবে। প্রাণীটি সব মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে দেবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছ? সে বলবে, আমি এটি নাকে দাগওয়ালা একজন ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয় করেছি।’ (মুসনাদে আহমাদ। সিলসিলায়ে সগিহ-হা: ৩২২)।

(৩) নবী (সা.) আরো বলেন,

‘দাব্বাতুল আরদ বের হবে। তার সঙ্গে থাকবে মূসা (আ.) এর লাঠি এবং সুলায়মান (আ.) এর আংটি। কাফিরের নাকে সুলায়মান (আ.) এর আংটি দিয়ে দাগ লাগাবে এবং মূসা (আ.) এর লাঠি দিয়ে মুমিনের চেহারাকে উজ্জল করে দেবে। লোকেরা খানার টেবিল ও দস্তরখানায় বসেও একে অপরকে বলবে, হে মুমিন! হে কাফির! (আহমাদ-আহমাদ শাকের সহিহ বলেছেন, হা: ৭৯২৪)।

দাব্বাতুলআরদেরপরের_অবস্থাঃ

দাব্বাতুল আরদের অন্তর্ধানের পর আল্লাহ তায়ালা ইয়েমেনের দিক থেকে রেশমের মতো মোলায়েম একটি বাতাস প্রবাহিত করবেন। যার অন্তরে সামান্য পরিমাণও ঈমান থাকবে তার শরীরে এই বাতাস স্পর্শ করবে। ফলে সব ঈমানদার ব্যক্তির ইন্তেকাল হয়ে যাবে। তারপর পৃথিবীতে কেবল নিকৃষ্ট লোকেরা থাকবে। তাদের ওপর কেয়ামত কায়েম হবে। (মুসলিম : ১১৭, ১৯২৪)।

অন্য হাদিসে এসেছে, পৃথিবীতে তখন শুধু নিকৃষ্ট আর পাপাচারী লোকেরা থাকবে। তাদের জীবনযাত্রা অত্যান্ত সুখময় হবে। পাখির মতো ক্ষিপ্রতা থাকবে তাদের। পশু-পাখির মতো স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে। কোনো কল্যাণকর কাজ তারা করবে না। কেউ কোনো মন্দ কাজ করলে বারণ করবে না। তখন শয়তান তাদের সামনে মানুষের আকৃতিতে এসে বলবে আমি তোমাদেরকে যা করতে বলব তোমরা কি তা করবে না? লোকেরা বলবে, তুমি আমাদেরকে কী করতে বল? তখন শয়তান তাদেরকে মূর্তিপূজার আদেশ করবে। সে যুগে মানুষের প্রাচুর্য ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অনেক বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর শিঙ্গায় ফুক দেওয়া হবে। (মুসলিম : ২৯৪০)।

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ও দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাবের পর পৃথিবী আর একশ বিশ বছর অবশিষ্ট থাকবে।’ (ফাতহুল বারি : ৩৬১)।

আবার কোনো হাদিসে এসেছে, ‘পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ও দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাবের পর একশ বছর পর কেয়ামত হবে।’
অর্থাৎ মোট কথা, পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ও দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাবের পর একশ বা একশ বিশ বছর পর কেয়ামত হবে।

(ছবির প্রানীটি হাদিস হতে পাওয়া দাব্বাতুল আরদের আকৃতি ও গঠন এর মত করে অংকিত কাল্পনিক দাব্বাতুল আরদ। তাই ছবির কাল্পনিক প্রাণীটির সাথে আসল দাব্বাতুল আরদের তুলনা করবেন না। আসল দাব্বাতুল আরদ দেখতে সম্পুর্ন অদ্ভুত হবে!)

Leave a Reply