You are currently viewing দাব্বাতুল আরদ: কেয়ামতের অন্যতম বড় আলামত।পর্বঃ০১

দাব্বাতুল আরদ: কেয়ামতের অন্যতম বড় আলামত।পর্বঃ০১

এই আখেরী জামানায় কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে জমিন থেকে দাব্বাতুল আরদ নামক এক অদ্ভুত জন্তু বের হবে। জন্তুটি মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এটি হবে কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম সর্বশেষ ভয়াবহ আলামত।
পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে এটি বের হবে। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায় যে, পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পরই জমিন থেকে এই অদ্ভুত জানোয়ারটি বের হবে। তাওবার দরজা যে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে- এ কথাটিকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করার জন্য সে মুমিনদেরকে কাফির থেকে নির্দিষ্ট চিন্হের মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। মু‘মিনের কপালে লিখে দেবে ‘মুমিন’ এবং কাফিরের কপালে লিখে দেবে ‘কাফির’। এ ব্যাপারে কোরআন থেকে যা জানা যায়-

পবিত্র কোরআনুল কারিমে সূরা আন নামলের ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

‘যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না।’ (সূরা: নামল, আয়াত: ৮২)।

প্রাণীটির কাজ কি হবে এবং কি বিষয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে-এ ব্যাপারে আল্লামা আলূসী বলেন, আয়াতে উল্লেখিত কোরআনের বাণীটিই হবে তার কথা।

এই বাক্যটি সে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শুনাবে। মর্ম এই যে, আজকের পূর্বে অনেক মানুষই মহান আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করেনি। বিশেষ করে কেয়ামতের আলামত ও তা সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে এমনকি আমার আগমনের বিষয়েও অনেক মানুষ বিশ্বাসকরত না। এখন সে সময় এস গেছে এবং আমিও বের হয়ে এসেছি।

দাব্বাতুলআরদেরপরিচয়ঃ

আরবিতে ‘দাব্বাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে জন্তু বা প্রাণী, যা জমিনে পা ফেলে চলাচল করে। আর ‘আরদ’ অর্থ হচ্ছে ভূমি, ভূপৃষ্ঠ বা ভূগর্ভ। কেয়ামতের আগে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে অদ্ভুত ধরনের একটি প্রাণী বের হবে এবং পুরো পৃথিবীতে বিচরণ করবে। এটিকে কেয়ামতের বড় আলামতের একটি গণ্য করা হয়। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই সময় আসার আগ পর্যন্ত কেয়ামত কায়েম হবে না, যতদিন না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের ঘটনা সংঘটিত হবে। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের ঘটনা ঘটার পর মানুষ দাব্বাতুল আরদ দেখতে পাবে।’ (বুখারি : ৪৬৩৬; মুসলিম : ১৫৭)।

‘দাব্বাতুল আরদ’ প্রাণীটির নাম নয় বরং অদ্ভুত প্রাণীটির প্রসঙ্গে কোরআনে ব্যবহৃত শব্দ, যার অর্থ ‘ভূগর্ভস্থ প্রাণী’। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি প্রাণী বের করব। সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে।’ (সুরা নামল : ৮২)

ইবনু কাসীর বলেন, আখেরী জামানায় মানুষ যখন নানা পাপাচারে লিপ্ত হবে, মহান আল্লাহর আদেশ পালন বর্জন করবে এবং দ্বীনকে পরিবর্তন করবে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের সামনে এই জন্তুটি বের করবেন।’ (তাফসীরে ইবনু কাসীর-৩/৩৫১)।

ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জন্তুটি মানুষের মতই কথা বলবে।’(পূর্বোক্ত উৎস)।

দাব্বাতুলআরদেরআকৃতিঃ

‘দাব্বাতুল আরদ’ বা অদ্ভুত প্রাণীটির আকৃতি প্রসঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন হাদিসে আলোচনা এসেছে। সেসব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর ভেতর অনেক প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকবে। অদ্ভুত এই প্রাণী কিছুটা উটের মতো হবে। পা হবে চারটি। মাথা হবে ষাঁড়ের মতো। চোখ হবে শূকরের মতো। কান হবে হাতির মতো। নাক হবে উটপাখির মতো। বুক হবে সিংহের মতো। রঙ হবে নেকড়ের মতো। কপাল হবে ভেড়ার মতো। ঘন পশমবিশিষ্ট হবে। মানুষের মতো চেহারা হবে। (ফাতহুল কাদির: ৪/১৫২; আদ-দুররুল মানসুর : ৬/৩৭৮)। সে পুরো পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করবে এবং সব মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তাদের ওপর নির্দেশ পতিত হবে (পূর্ব দিক থেকে সূর্য না উঠে পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া) তখন আমি তাদের জন্য দাব্বাতুল আরদ বের করব। সে সবার সঙ্গে কথা বলবে। সে সবার কাছে গিয়ে বলবে, ‘লোকেরা আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না।’ (সুরা নামল : ৮২)।
আরও বিভিন্ন হাদিসে এসেছে, সে মানুষকে তাকওয়া, তাওয়াক্কুল, আল্লাহর ভয় প্রভৃতি বিভিন্ন সদুপদেশ দিতে থাকবে।

চলবে”

Leave a Reply