You are currently viewing কাজিন সম্পর্কিত ভাগ্নি ও ভাতিজি  বিয়ে!!

কাজিন সম্পর্কিত ভাগ্নি ও ভাতিজি বিয়ে!!

প্রিয় মুসলিম উম্মার সম্মানিত অভিভাবক বাবা, মা, ভাই ও বোনেরা। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ নিয়ে আপনাদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা।

আজকে আপনাদের উদ্দেশ্যে এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করব, যা হয়তো আপনাদের অনেকেরই জানা নেই। বর্তমান সময় প্রয়োজন বোধ মনে করতেছি তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করতেছি।

ইসলামের বিধান অনুযায়ী, চাচাতো ভাই, চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে, চাচাতো বোন, চাচাতো বোনের মেয়ে। খালাতো ভাই, খালাতো বোনের মেয়ে। ফুফাতো ভাই ফুফাতো বোনের মেয়ে,। আল কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী উভয় কে বিয়ে করা যায়। এবং শরীয়তে সম্পূর্ণ বৈধ একটা বিষয়। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে। আমাদের সমাজের কিছু ইসলাম বিমুখ ইসলাম জ্ঞানহীন মানুষ। তারা এই বিধান কে নেগেটিভ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে তাদের ভিতরে ইসলামী জ্ঞান নেই।

ইদানিং পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলে লক্ষ করা যায়। চাচা ভাতিজিকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। মামা ভাগ্নিকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে।কিন্তু আসলেই কি তাই?তার পিছনে রয়েছে অন্য ঘটনা।

প্রিয় ভাই ও-বোনেরা, এবার আসি মূল বিষয়। সূরা নিসায় বর্ণিত,আল্লাহর কাদের বিবাহ করা হারাম ঘোষণা করেছেন একটু দেখে নিন।

প্রশ্ন : মাহরাম কাকে বলে?
উত্তর : মাহরাম বলা হয় ঐ সকল পুরুষ অথবা নারীকে যাদেরকে স্থায়ীভাবে বিবাহ করা হারাম চাই তা নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে হোক অথবা দুগ্ধপান করার কারণে হোক অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হোক।

পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে মাহরাম কারা ?

পুরুষের ক্ষেত্রে মাহরাম: নারীর ক্ষেত্রে মাহরাম:
১. মা ১. বাবা
২. মেয়ে ২. ছেলে
৩. আপন বোন ৩. আপন ভাই
৪. আপন নানী ৪. আপন নানা
৫. দুধ মা ৫. দুধ ভাই
৬. আপন খালা ৬. আপন মামা
৭. আপন ভাতিজী ৭. আপন ভাতিজা
৮. আপন ভাগ্নি ৮. আপন ভাগিনা
৯. আপন ফুপু ৯. আপন চাচা
১০. সৎ মেয়ে ১০. আপন দাদা
১১. আপন দাদী ১১. আপন শ্বশুর
১২. আপন শাশুড়ি ১২. সৎ ছেলে
১৩. দুধ মেয়ে ১৩. দুধ ছেলে
১৪. আপন ছেলের স্ত্রী ১৪. আপন মেয়ের জামাই।
এই ১৪ জন ছাড়া বাকি কারো সাথে দেখা করা হারাম বা কবীরা গুনাহ।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা এবার আসি মূল বিষয়। গত কিছুদিন আগে এক ভাই আমাকে বলল। ভাই অমুক গ্রামের অমুকের ছেলে। ভাগ্নিকে নিয়ে পালিয়ে গেল। কি দিনকাল পড়ছে তাই না?
বিষয়টা প্রথমে আমার কাছে ডাউট লাগলেও তারপরও মনে শঙ্কা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। আপন ভাগ্নি নাকি?

পরে ওই ভাই বলল না খালাতো বোনের মেয়ে। কথাটা শুনার পর আমার কেমন জানি একটা রাগ হল। কারণ ব্যক্তি জীবনে আমি এমন একটি ঘটনা স্বীকার হয়েছি। তাই সমস্ত শক্তি নিয়ে প্রতিবাদ করে বললাম। চি চি মাসুম ভাই আপনি তো তাহলে নিজের বোনকে বিবাহ করেছেন।এটা আপনি কি করে করতে পারলেন।

মাসুম ভাই চোখ রাঙিয়ে আমাকে বলল কি বলতেছ এসব, আমি আমার ফুফাতো বোনকে বিয়ে করেছি। আমি আস্তে করে বললাম কুলডাউন ভাই। ফুফাতো বোন আপনার বোন কিন্তু আপন না। আপনার ফুফাতো বোনের মেয়ে আপনার ভাগ্নি কিন্তু আপন না।যদি আপনি ফুফাতো বোনকে বিয়ে করতে পারেন। তাহলে তার মেয়েকে কেন বিয়ে করতে পারবেন না। আপনি সূরা নিসা টা ভালো করে পড়ে নিন।

খালাতো বোনের মেয়েকে বিবাহ করা কি ইসলামে অবৈধ? শরীয়তে জায়েজ একটা বিষয়কে। আপনি নাজায়েজ বলতেছেন কেন। আপনি কি জানেন না। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন রাসুল সাঃ এর আপন চাচাতো ভাই। কিন্তু নিজের মেয়ে ফাতেমাকে চাচতো ভাইয়ের কাছে বিয়ে দিছিলেন।তারা তো দুইজন সম্পর্কে চাচা ভাতিজি হয়।

আপনাদের মত মানুষ বেঁচে থাকলে হয়তো তখন আপনারা বলতেন। নাউজুবিল্লাহ চাচা ভাতিজিকে বিয়ে করেছে সমাজ থেকে এদের বের করে দাও।হায় আফসোস আপনাদের জন্য। আপনারা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে পছন্দ করেননি।
পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম ওই ভাইয়ের সাথে মেয়ের পরিবার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, হৃদয়টাকে নরম করে করে একবার চিন্তা করুন। চোখ বন্ধ করে ভাবুন। যে আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আপনাকে সৌন্দর্য দিয়েছেন। সে আল্লাহ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, চাচাতো বোন খালাতো বোন খালাতো ভাই, এবং তাদের মেয়ে ছেলেকে বিবাহ করা বৈধ। এবং আল্লাহর কাছে তা পছন্দনিয়।কিন্তু আপনার কাছে তা অপছন্দনিয়।

আপনি বলতেছেন সমাজ কি বলবে, অমুক কি বলবে তোমুক কি বলবে। হে আমার ভাই, আল্লাহর সিদ্ধান্ত আল্লাহর পছন্দ। কিন্তু আপনার কাছে অপছন্দনীয়। এটা কি ঈমানের সাংঘর্ষিক ব্যাপার নয়।একবার ভাবুন আপনার ঈমান আছে কিনা।

প্রিয় ভাই বোনেরা, ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হচ্ছে। আজকে যদি কেউ চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে বা খালাতো বোনের মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। দেখা যায় তাদের অভিভাবকগণ প্রস্তাবকৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে।কিন্তু নিজের অজান্তেই তারা বিরাট একটি ভুল করে বসে। বিশ্বনবী রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন। যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করল। সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার। আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, তাই আসুন। আপনাদেরকে যদি কেউ এমন প্রস্তাব দেয়। এটি তার অপরাধ নয়। যদি আপনার ভালো না লাগে। সুন্দর এবং মার্জিত ভাষায় তাকে না করে দিন। আত্মীয়তা ছিন্ন করার মত মহা পাপ কখনো করবেন না।

আমার প্রিয় ভাইয়েরা, আপনার চারপাশের যদি এমন ঘটনা কখনো ঘটে থাকে। কোরআন হাদিস দিয়ে সুষ্ঠু সমাধান দিন। তাদেরকে সমাজ থেকে বের করে দেয়ার মত জঘন্য পাপ কাজ করবেন না। কোরআন এবং হাদিস দিয়ে সুষ্ঠু সমাধান দেয়ার চেষ্টা করুন।কারণ এটি রাসূলের অর্ধমৃত সুন্নত। এবং খুব বরকত পূর্ণ ইবাদাত।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআন এবং হাদিস বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুক আমিন।

Leave a Reply