You are currently viewing বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ও দাজ্জাল রহস্য, ১২তম ও শেষ পর্ব।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ও দাজ্জাল রহস্য, ১২তম ও শেষ পর্ব।


বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে কতিপয় দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ।

বারমুডায় গায়েব হওয়া সামুদ্রিক জাহাজ, নৌযান এবং বিমান সমুহের সম্পর্ক অধিকাংশই আমেরিকা এবং ব্রিটেনের সাথে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়- এ দু’দেশের সরকার কোন সময় না বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে, আর না ঐ এলাকার উপর দিয়ে অতিক্রম করতে জাহাজ বা প্লেনগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বরং এ ব্যাপারে যতগুলি গবেষণা টিম গঠন করা হয়েছে একটিরও রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়- পৃথিবীর কোন সরকারেরই এরকম কোন পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা নেই। একারনেই বহু সরকারী গবেষক প্রকাশ্যে জনসমক্ষে অস্বীকার করে বসে যে, এরকম কোন দুর্ঘটনা ঘটার মত এলাকার অস্তিত্ব বর্তমান পৃথিবীতে নেই।

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলে দুর্ঘটনার কারন বিবরণে বহু কিছু লেখা হয়েছে। সুপ্রসিদ্ধ বিশ্ববিজ্ঞানী, দক্ষ ভূমিবিশেষজ্ঞ (Geologists), প্রকৃতিবিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাতারবিশেষজ্ঞ এবং বুদ্ধিজীবি এমনকি ইহুদী-খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় প্রবক্তারাও পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাদের মন্তব্যের বিবরণ দিয়েছে। প্রত্যেকের মন্তব্যেই নিজস্ব ধর্মকর্মের (Point of view) ছাপ স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়েছে। এখানে প্রসিদ্ধ কয়েকটি মন্তব্য উল্লেখ করে তা নিয়ে আলোচনা করব।
যে সকল শক্তি বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল থেকে লোকদের মনযোগ সরাতে চায়, তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়ঃ “প্লেন এবং জাহাজকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সময়ে সময়ে বহু ঘটনাই ঘটে আসছে। সুতরাং বারমুডার ওখানেও যদি এরূপ কোন ঘটনা ঘটে থাকে, তবে আশ্চর্য হওয়ার কোন কিছু নেই । একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থে (লেখক- লেরি কোশে) উল্লেখ করা হয়েছেঃ-

ছবি সংগৃহীত

অর্থাৎ বারমুডায় সংগঠিত দূরঘটনাগুলি এত আশ্চর্য ও বিরল প্রকৃতির ছিলনা; বরং মিডিয়া ও অযৌক্তিক কিছু তথ্যের ভিত্তিতে এটাকে বড় করা হয়েছে।
উল্লেখিত মন্তব্য ছাড়াও যে সকল গবেষক বারমুডার বাস্তবতা মেনে নিয়ে বিভিন্ন মতামত পেশ করেছেন, তা নিম্নরূপঃ-
(১) প্রাচীন যুগপ্রিয় খৃষ্টানদের ধারণা- বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল হচ্ছে জাহান্নামের দরজা।
— এই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে কোন পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

(২) কিছু ব্যক্তি এ কথা বলে বারমুডার গুরুত্ব হ্রাস করার চেষ্টা করে যে, ওখানকার পানির গভীরতা খুব বেশি। সুতরাং জাহাজ বা প্লেন গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা কোন আশ্চর্যের বিষয় না।
— দ্বিতীয় মন্তব্যটি এজন্য গ্রহন করা যায়না যে, সমুদ্রের নিচে পানি যতই গভীরে থাকুক; এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যেখানে যুগে মাছের পেটের মধ্যে পর্যন্ত ছোট ছোট ক্যামেরা ফিট করে সমুদ্রের গভীর এবং তলদেশের সকল যাবতীয় বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে, আর এত বড় বড় জাহাজ, সাবমেরিন আর বিমানগুলো অদৃশ্য হয়ে গেলো। কোন একটিও আজ পর্যন্ত কারো চোখে পড়লনা ???!!! বা তার কোন হদিস আজ পর্যন্ত জানা সম্ভব হলনা ???!!!

(৩) একদলের মন্তব্য- বারমুডার পানির অভ্যন্তরে শক্ত তুফান ও প্রবল পানি সঞ্চালনের সৃষ্টি হয়। ফলে তা জাহাজ ও প্লেনকে অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়।
— এই মন্তব্যও (এখানকার পানিতে প্রবল ঝড় তৈরী হওয়া)- ও যুক্তিসঙ্গত মনে হয়না। কারণ, যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সবগুলি ঘটনার সময় ওখানকার আকাশ ও পানির অবস্থা স্বাভাবিক, স্বচ্ছ ও পরিস্কার ছিল। কোন ঝড়-তুফানের কথা তো আজ পর্যন্ত কেউ রেকর্ড করেনি। দ্বিতীয়ত- এটা আবার কেমন ঝড়-তুফান, যে কখনো শুধু জাহাজকে ডুবিয়ে দেয় আর যাত্রীদেরকে তীরে এনে ছেড়ে দেয় অথবা যাত্রীদের গায়েব করে জাহাজকে তীরে রেখে যায় ???!!!

(৪) বারমুডার পানিতে জলকম্পন সৃষ্টি হয়, ফলে দ্রুতগতিতে অনেক দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়।
— ঠিক আছে মেনে নেয়া যাক এই মন্তব্য! কিন্তু উড়ন্ত প্লেনের ব্যাপারে আপনি কি বলবেন? পানিকম্পন সৃষ্টি হল পানির ভিতরে আর তিন হাজার-চার হাজার মিটার উপরে উড়ন্ত প্লেনও গায়েব করে দিল??!! এটা আবার কেমন ধরনের কম্পন; যা সুদক্ষ ভূমিবিশেষজ্ঞরাও পর্যন্ত কোনসময় রেকর্ড করেনি এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রেও এর কোন সংকেত পাওয়া যায়নি।

(৫) কতিপয় গবেষকদের মন্তব্য- ওখানে (Electric Magnetic Waves) বৈদ্যুতিক শক তৈরী হয়, যার ক্ষমতা আমাদের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ থেকে হাজার গুন বেশি। অসম্ভব ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের গতি জাহাজকে তার নাম-নিশানা পর্যন্ত মিটিয়ে দেয়, আর উড়ন্ত প্লেনকে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। একারনেই কম্পাস (দিক নির্ধারণকারী প্রযুক্তি) ওই স্থানে অকেজো হয়ে যায়। একটি হচ্ছে- বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে শয়তানী সমুদ্র।
কম্পাস অকেজো হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে- ওই দুই এলাকা ছাড়া দুনিয়ার কোথাও কম্পাস ব্যবহার করেন, তার সুঁই উত্তর দিকে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা উত্তর দিকে নয়; বরং ম্যাগনেটিক উত্তর দিকে হয়। কেননা ওই দুই এলাকায় কম্পাসের সুঁই উত্তর দিকে হয়। যার ফলে ওখানে দিক নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। এটিই মার্কিন সামুদ্রিক গবেষণা টিমের মন্তব্যঃ
The US Navy proposed the possibility of electromagnetic and atmospheric disturbances.
— এই মন্তব্যটি মনযোগ সহকারে পড়ুন। এব্যাপারে সামনের কোন পর্বে আলোচনা করবো। কেননা এটাই ওই মন্তব্য যা বারমুডার পানিতে লুকায়িত “গোপন শক্তি” ইবলিস-দাজ্জালের বৈজ্ঞানিক উন্নতি বুঝতে আমাদের সাহায্য করবে।

(৬) অধিকাংশ সাইন্সবীদদের মতে- এটি একটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিষয়ঃ-অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা গুম হওয়ার ঘটনাগুলিকে উত্তাল সমুদ্রের তরঙ্গ, অনুপযোগী ঋতু এবং টেকনিক্যাল ত্রুটি মনে করে। বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের এরিয়ায় ভৌগলিক অবস্থানে কম্পাস উত্তর দিকে হয়। ম্যাগনেটিক উত্তর দিকে নয়। যদ্দুরুন ওখানে দিক নির্ধারণ সমস্যা হয়ে পড়ে এবং দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
— এই মন্তব্যের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ গবেষক গিয়ান কাউসার (১৯৯০ সাল থেকে বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের উপর গবেষণাকারী) বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করে লিখেনঃ-
“বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের রহস্যের বেড়াজাল অত্যাধিক ঘন হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার অথবা এর অস্তিত্ব বৈজ্ঞানিক অধ্যায়ে রাখার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রতিফলিত হয়েছে। ম্যাগনেটিক কম্পাসের পার্থক্য সৃষ্টির ব্যাখ্যাটিও সঠিক নয়; কেননা কম্পাস উঠা-নামা বা কমবেশি হওয়া পৃথিবীর ঘূর্ণায়নের সাথে নড়াচড়া করে। আর এ পার্থক্যটি সর্বদাই ট্রাইএঙ্গেলের ভেতরেই হয়না; যদ্দুরুন দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। মিথেন গ্যাসের যে থিওরী বলা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন। কেননা ট্রাইএঙ্গেলের ভিতরে গ্যাসের কোন ভান্ডার বা খনি নেই।”

(৭) আরেক মতামত- বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের ভেতরে ফ্লাইং সোসার্স আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। ফ্লাইং সোসার্সে আরোহনকারী গোপন শক্তিরই ঠিকানা ওই এলাকা; যারা নিজেদের বিশেষ টার্গেট বাস্তবায়নকল্পে শক্তিশালী জাহাজ, প্লেন ও বিশেষ মানুষদের গুম করে থাকে।
— এই মন্তব্যটাও মনে রাখুন। ফ্লাইং সোসার্স এর সাথে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ও দাজ্জালের যোগসূত্র পড়ে আলোচনা করব।

(৮) বাস্তব কথা যে, ওখানকার পানির গভীরে ছোট ছোট গর্ত দেখা গেছে।
— এ মন্তব্যে বলা হয়েছে যে, ওখানকার পানিতে ছোট ছোট অনেক গর্তের মত কিছু বিষয় লক্ষ করা গেছে। কিন্তু ঐ গর্তগুলোর কোন সাদৃশ্য বা আকার-আকৃতির ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি; নাকি তা বলার অনুমতি নেই? আবার গর্তগুলো এমনিতেই তৈরি না কোন সুসংগঠিত শক্তি এগুলো বানিয়েছে। তবে এতটুকু অবশ্যই ঘটেছে যে, যে-ই এই গর্তগুলোর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করেছে বা কিছু জেনে ফেলেছে, তাকে পানির অভ্যন্তরেই খতম করে দেয়া হয়েছে।

(৮) মিসরীয় প্রখ্যাত মুসলিম গবেষক মুহাম্মদ ঈসা দাউদের মতে- শয়তানী সমুদ্র আর বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল হচ্ছে “কানা দাজ্জালের” মালিকানা। দাজ্জাল ওখানে যথারীতি স্বীয় আস্তানা নির্মাণ করেছে যা ত্রিভূজাকৃতির।
— মুসলিম গবেষক মুহাম্মদ ঈসা দাউদ মিসরীর মন্তব্য সম্পর্কে যতদূর জানা যায়- উনি দাজ্জালের ব্যাপারে সুগভীর গবেষণা করে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন এবং এ ব্যাপারে বহু গ্রন্থ উম্মতে মুসলিমকে উপহার দিয়েছেন। যে সকল স্থানসমুহের সাথে দাজ্জাল বা ইহুদী গোপন সংগঠন “ফ্রিম্যাসন্স” এর সম্পৃক্ততার সংবাদ পেয়েছেন, ওই স্থানসমূহে মুহাম্মদ ঈসা দাউদ নিজে গিয়ে গবেষণা করেছেন। যেমন- মিসর,সুইডেন, ফিলিস্তীন, আমেরিকা, সিরিয়া ও বারমুডা ইত্যাদি। বিশেষত ফিলিস্তীন ও মিসর থেকে কিছু পুরাতন পুস্তকও তিনি হাতে পেয়েছেন। ওখানকার বয়স্ক লোকদের থেকেও উনি এমন কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন যার বর্ণনা আরবদের মধ্যে সীনা-বসীনায় চলে আসছে।

উল্লেখিত সকল মতামত ও তার ব্যাখ্যা জানার পর আমরা এ কথা বলতে পারি যে, বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের ব্যাপারে গবেষণাকারীদের মধ্যে যারা ওই এলাকাকে ভয়ানক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তাদের দলীলগুলোই বেশী ভারী মনে হয়।
আরো একজন গবেষক “পি পর বাথ” তার রচনা (Bermuda Triangle: Energy Filed or Time Warp)-এ অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন ও গবেষণার পর লিখেন-“পরস্পরবিরোধী সব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সত্ত্বেও একটি আশংকাজনক বিষয় বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের ভেতরে আশ্চর্যজনক কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী পর্যায়ের কিছু ব্যাপারের অস্তিত্বের কথা কতিপয় বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করেছেন। তবে এটা কারো জানা নেই যে, কেন এবং কিভাবে ওই এলাকা অসম্ভব শক্তিশালী ব্যাপারসমূহের কেন্দ্র হয়েছে!”

জী হ্যাঁ…! বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের রহস্যময় পানিতে এক শক্তিশালী “গোপন শক্তি”র অস্তিত্বের ব্যাপারে অধিকাংশ গবেষকই একমত। কিন্তু ওই রহস্যময় “গোপন শক্তি” কি??!! কে এটাকে কন্ট্রোল করছে??!!

Leave a Reply