You are currently viewing বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ও দাজ্জাল রহস্য পর্বঃ১০

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ও দাজ্জাল রহস্য পর্বঃ১০


ফ্লাইট ১৯…… ছয়টি প্লেনের ঐতিহাসিক ভ্রমণ..

সুদক্ষ এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক পাইলট, ৩০০ থেকে ৪০০ ঘন্টা একাধারে প্লেন কন্ট্রোলের অভিজ্ঞতা যার মধ্যে বিদ্যমান। কালের সর্বাধুনিক জঙ্গি বিমান যার মালিকানায়। তাছাড়া আবহাওয়াবস্থা সম্পর্কেও যিনি খুব ভাল জ্ঞাত। এমন এক পাইলট তার প্লেনসহ হঠাৎ বারমুডার আকাশে গায়েব হয়ে যাওয়া। তাও আবার একটি দুটি নয়; পাঁচটি প্লেন একসাথে!!
সময়টা ছিল ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। আনুমানিক দুইটা দশ মিনিটে আমেরিকা শাসিত “ফ্লোরিডা”র ফোর্ট লাডারডেইল (Fort Lauderdale) এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট-১৯ এর পাঁচটি এভেঞ্জার প্লেন উড্ডয়ন করে এবং নির্দিষ্ট এরিয়ায় কয়েকটি রাউন্ড সম্পন্ন করে। এরপর আনুমানিক চারটার সময় এক পাইলটের কাছ থেকে এয়ারপোর্ট অফিসে নিম্নোক্ত বার্তা প্রেরিত হয় (স্কোয়াডার্ন কমান্ডার আহ্বান করছে):-

পাইলটঃ আমরা আশ্চর্য ও বিরল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি…। মনে হচ্ছে- আমরা আমাদের এরিয়া থেকে সরে গেছি…। ভূমি দেখতে পাচ্ছিনা…। আমি ভূমি দেখতে পাচ্ছিনা…।
এয়ারপোর্টঃ আপনি এখন কোন জায়গায় আছেন?
পাইলটঃ জায়গা নির্দিষ্ট করতে পারছিনা…। বুঝতে পারছিনা… আমরা এখন কোথায় আছি…। আমার ধারনা… আকাশেরই কোথাও আমরা হারিয়ে গেছি…।
এয়ারপোর্টঃ পশ্চিম দিকে ফ্লাইং করতে থাকুন…।
পাইলটঃ আমি বুঝতে পারছিনা… পশ্চিম কোন দিকে…! সবকিছুই অচেনা এবং আশ্চর্য ধরনের দেখা যাচ্ছে…। এমনকি আমাদের সামনে সমুদ্রও আশ্চর্য আকৃতিতে দেখা যাচ্ছে…। এটাও আমি চিনতে পারছিনা…

এয়ারপোর্টে কর্মরত সকলেই অবাক ছিল। বুঝে আসছিলনা- এত দক্ষ পাইলট দিক কেন নির্ধারণ করতে পারছেনা?!! কেননা প্লেনের নেভিগেশন সিস্টেম (দিক নির্ধারণের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি) যদি কাজ নাও করে, তবুও সময়টা তো ছিল বিকালবেলা; সূর্যাস্তের সময়। সূর্য দেখে সহজেই পশ্চিম দিক নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু পাইলট বলছে যে, সে দিক নির্ধারণ করতে পারছেনা। তাহলে সে কোথায় চলে গিয়েছিল??!! অতঃপর এয়ারপোর্টের সাথে পাইলটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়াও তখন ওই পাঁচ পাইলট একে অপরের কাছে যে বার্তা প্রেরণ করেছিল; তাও এয়ারপোর্ট অফিস রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছে। যাতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল যে, বাকী চারটি প্লেনও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। কিছুক্ষন পর জর্জ স্টিউর্জ নামক আরেক পাইলটের বিচলিত কন্ঠ শোনা যায়ঃ “আমরা সঠিক বলতে পারছিনা যে, এই মুহূর্তে আমরা কোথায় আছি…। আমার ধারণা যে, আমরা এয়ারপোর্ট থেকে ২২৫ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে ফ্লাই করছি…।” এর কিছুক্ষণ পর সে বলতে লাগলঃ “মনে হচ্ছে আমরা সাদা পানিতে প্রবেশ করছি…। আমরা সম্পূর্ণরূপে দিকভ্রান্ত হয়েছি…।” এরপর ওই প্লেন চিরদিনের জন্য সমুদ্রের পানিতে হারিয়ে যায়।

ওইদিন সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে মার্টিন মেরিনার (Martin Mariner) নামক একটি বিমান এই পাঁচটি প্লেন তালাশের জন্য বের হয়। এটি ছিল হারিয়ে যাওয়া প্লেন তালাশের স্পেশাল বিমান। পানিতে অবতরনের সুবিধাও তাতে বিদ্যমান ছিল। কোন প্লেন যদি সমুদ্রে পড়ে যায়, তা উদ্ধারের জন্য এই বিমান ব্যবহৃত হত। মার্টিন মেরিনার ওই স্থানে গিয়ে এয়ারপোর্টের সাথে যোগাযোগ করল। কিছুক্ষণ পর এরও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। অন্যকে তালাশ করতে গিয়ে নিজেই গায়েব। এরও কোন হদিস পাওয়া যায়নি। তৎক্ষনাৎ ওই ছয় প্লেন খোজার জন্য মার্কিন আকাশপথ ও সমুদ্রপথ টিম কোস্টগার্ড সাথে নিয়ে ওই এলাকার আকাশ ও সমুদ্র পথে বহু খোজাখুজি করল; কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মধ্যরাতে এয়ারপোর্ট অফিসে এক অস্পষ্ট বার্তা পৌছেঃ FT”;;;;;;FT” বার্তা প্রেরণকারীর ভাষা অন্যরকম লাগছিল। এই বার্তা এয়ারপোর্ট অফিসে কর্মরত সকল কর্মীকে আরো পেরেশান করে দিল; কারন এই কোড শুধুমাত্র ফ্লাইট-১৯ এর কর্মীরাই ব্যবহার করে থাকে। তার মানে তখন পর্যন্ত ওই পাইলটদের কেউ না কেউ জীবিত ছিল। কিন্তু কোথায়?? মধ্যরাতে এই বার্তা পাওয়ার পূর্বেও তো ওই এলাকায় তাদের অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল। তাহলে এই বার্তা কোন জায়গা থেকে প্রেরণ করা হয়েছে?? তাহলে কি বারমুডার পানির গভীরে তাদের গুম করা হয়েছে?? অতঃপর কোস্টগার্ডের লোকেরা সারারাত তাদের তালাশে নিয়োজিত থাকে। পরদিন সকালে তিনশত প্লেন, হাজার হাজার স্পীডবোট এবং বেশকিছু সাবমেরিনসহ ওই এলাকায় নিয়োজিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনী পর্যন্ত এদের উদ্ধারের জন্য বের হয়। কিন্তু এতটুকু পর্যন্ত বের করতে সক্ষম হয়নি যে, ওরা কিরূপ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে বা তারা কোথায় চলে গেছে!!
এ ধরনের দুর্ঘটনা দ্বিতীয়বার যাতে আর না ঘটে, সে জন্য গবেষকদের দিয়ে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এ কমিটি তদন্ত তো দূরের কথা; স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা বা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য পর্যন্ত করতে সক্ষম হয়নি। তবে কমিটি প্রধানের পক্ষ থেকে এ ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে যে, “ওই প্লেনগুলি যাত্রী পাইলট ও কর্মচারীদের নিয়ে কোথাও গুম হয়েছে, মনে হচ্ছে বাতাসের সাথে উড়ে তারা অন্য জগতে পাড়ি জমিয়েছে।”

এখন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়- যদি কোন দূর্ঘটনারই সম্মুখীন হয়ে থাকে, তবে তো তাদের প্রত্যেকের কাছেই “লাইফজ্যাকেট” বা প্যারাসুট ছিল। এর দ্বারা ভূমিতে জরুরী অবতরন করতে পারত। তাহলে এতটুকু সুযোগও কি তাদের মেলেনি??
দ্বিতীয় কথা- প্লেনগুলি সন্ধার সময় গায়েব হয়েছে। তৎক্ষনাৎ বহু খোজাখুজি এবং তালাশের পরও তাদের কোন বাতাস পাওয়া যায়নি। তাহলে মধ্যরাতে যে বার্তা প্রেরণ করা হল; যোগাযোগ কোন জায়গা থেকে করা হল??!!
দুর্ঘটনার সময় নিকটবর্তী স্থান হতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনাও কোন রহস্যময় বস্তুর দিকে ইঙ্গিত করেঃ যেমন- তালাশে নিয়োজিত জাহাজের কর্মীরা এই কথাটি নোট করেছে যে, একস্থানে সমুদ্রের উপরিভাগে পানির কিছু অংশ বিশেষ (কোন আকৃতির) পর্যায়ের, অতঃপর তা সাদা রঙে পরিবর্তন হয়ে গেল। স্মরন রাখা দরকার- এরকম বিশেষ আকৃতির ফ্লাইং সোসার্স (প্লেটের মত ফ্লাইং করে এমন বস্তু) বারমুডার পানিতে প্রায়ই প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
DC-3 একটি যাত্রীবাহী বিমান ছিল। যারমধ্যে ত্রিশজন পুরুষ স্বপরিবারে আরোহন করেছিল। তারা সবাই ছুটি কাটিয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছিল। বিমানটি “পোরটোরিকো” থেকে ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে ফ্লাইং করল। ফ্লোরিডা এয়ারপোর্টের কাছে এসে লেনের প্রস্তুতি নিতে নিতে গায়েব হয়ে যায়। পাইলট এয়ারপোর্ট অফিসে লেনের অনুমতিও চেয়েছিল, তাকে অনুমতি দেয়াও হয়েছিল। কিন্তু এ প্লেন অজানা কোন স্থানে লেন করে ফেলে। পরে এদেরও কোন খবর পাওয়া যায়নি। বারমুডার ব্যাপারে গবেষণাকারী কতিপয় লোকদের বক্তব্য হচ্ছে- ঐ এলাকায় গায়েব হওয়া সকল মানুষই জীবিত রয়েছে। কিন্তু অন্য কোন জায়গায়। বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের পানির অভ্যন্তরে অজানা ঐ “গোপন শক্তি” তাদের অন্য কোথাও নিয়ে গেছে। কোন অজানা স্থানে…।
এ সকল দুর্ঘটনার বিবরণ পড়ার পর আপনিও অনুধাবন করতে পারবেন যে, প্লেনগুলিতে কোন যান্ত্রিক গোলযোগ ছিলনা; বরং (গুম হবার সময়) তাদের উপর এক ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাও আবার খুব দ্রুত গতিতে। অতঃপর কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের গায়েব করে দেয়া হয়েছে। চিরদিনের জন্য।
কিন্তু কোথায়?? এ প্রশ্ন সারাবিশ্বের সকল মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চলবে,,,,,,

আচ্ছা আপনারা কিছু বুঝতে পারতেছেন তো?

Leave a Reply