You are currently viewing জীবন মানে কি?

জীবন মানে কি?

মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড়ো ব্যর্থতা কি জানেন?আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের যে সুন্দর একটা জীবন দিয়েছেন।এই জীবনের অর্থ আমরা প্রায় মানুষ বুঝিনা।আর তা বুঝতে না পারাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।যাঁ আপনি কখনোই বুঝতে পারেন না।

আপনার কাছে জীবনের সংজ্ঞা কি?অনেক টাকা,সুন্দর ক্যারিয়ার,বড়ো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,সেলিব্রেটি কিংবা দুনিয়ার আদার্স স্বপ্ন পূরণের পিছনে ছুটে চলা?আচ্ছা বলেন তো এগুলো কিছুই কি আসলে জীবনের উদ্দেশ্য?হ্যাঁ তবে জীবন পরিচালনা করতে এগুলো দরকার আছে,তবে তা নিজেকে বিলীন করে দিয়ে নয়।

গতকাল রাতে বসে বসে জীবনের মানে কি বুঝার চেষ্টা করেছি।আমি আমার বাস্তব জীবনের ঘটে যাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা শেয়ার করার চেষ্টা করব।জানি না কথা গুলো কারো হৃদয়ে তা ভেদ করবে কি-না।ব্যাপারটা ছিল!

আমার একবার একটা মেয়ে খুব পছন্দ হয়েছিলো। আলহামদুলিল্লাহ উনি যথেষ্ট দিন মেনটেইন করে চলার চেষ্টা করে।প্রচন্ড মেধাবী ও ছিলো,সত্যিকার অর্থে আমি এরকম কাউকেউ খোঁজ করেছিলাম।আমার কিছু পরিকল্পনা ছিলো,যা একান্তই আমার রবের সন্তুষ্টির জন্য। তার মাঝে আলহামদুলিল্লাহ প্রায় গুন গুলিই বিরাজমান ছিল।যতটুকু জেনেছি উনিও আমাকে পছন্দ করে।

স্বাভাবিক বিষয় হারাম সম্পর্ক তো অবশ্যই না।আমি বিয়ের প্রস্তাব দিবো ভাবছি,তো রিফিউজড করা হয়েছে আমাকে।এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া,রিফিউজ করতেই পারে। আর তা করেছে আমাকে পছন্দ হয়নি এ কারণে নয়।কারণ হচ্ছে মেয়ের বাবা মেয়েকে সার্জন বানাবে,এ জন্য আগামী ৫ বছরেও তাকে বিয়ে দিবে কি-না সন্দেহ আছে।এরুকুম একটা বিষয় সামনে এসেছে।আর এখান থেকেই আমার জীবনের মানে কি,এটা বুঝার বিষয় প্রচন্ড আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

উদাহারন হিসেবে বলি!একটা ছেলে এ দেশের নিয়ম অনুযায়ী তাঁর ক্যারিয়ার কমপ্লিট করতে বয়স দাড়ায় ২৯/৩০,তার পরে সে বিয়ে করে ৩৩/৩৪ বছরে।বিয়ের পরে চলে আসে বাস্তবতা,তার স্ত্রী কে খুশী রাখা,একের পরে এক চাহিদা পূরণ করা।কিছুদিন পরে চলে আসে সন্তান,এর পরে সন্তানের বেড়ে উঠা তার বরন পোষণ,সংসারের দ্বিগুণ খরচ সামাল দিতে তাকে বাড়িয়ে দিতে হয় দিগুণ পরিশ্রম।এর পরে সন্তান যখন মোটামুটি বড়ো হয়,তার যৌবন তখন নিবুনিবু অবস্থায়,এর পরে সন্তান যখন সাবালক হয়ে যায়,তখন সে বৃদ্ধ হয়ে,মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকা।

আচ্ছা এ মানুষটি তাহলে নিজের জন্য করলটা কি?৩০ বছর সুদু পড়াশোনার নাম দিয়ে একাকীত্ব কাটিয়ে দেয়া।পড়াশোনা শেষে অন্যের চাহিদা পূরণ করতে করতে জীবন শেষ করে ফেলা।তার পরে শূন্য হাতেই কবরে চলে যাওয়া!এটাই কি তাহলে জীবনের মানে?

আপসোস সে জীবনের সবচেয়ে রোমান্টিক বয়সটা একা কাটিয়ে দিলো।তার পরে অন্যের চাহিদা পূরণ করতে জীবন বিসর্জন দিল।এটা কখনোই জীবনের মানে হতে পারে না।অথচ জীবন নিয়ে ইসলামের কতো সুন্দর সমাধান ছিলো,আমরা সেখানে সমাধান না খুঁজে দুনিয়ার সফলতার পিছনে ঘুরতে গিয়ে,জীবন তচনচ করে করে ফেলি!যে সুখের আশায়! আসলে কি সে সুখটা দিনশেষে মানুষটি পায়?সত্যিই বলছি একজন মানুষ ও পাবেন না,যে এমন জীবনে আদৌ সে সুখী আছে?আর তা কখনোই সম্ভব না😢

আচ্ছা যদি আপনার কাছে চোখ ধাঁধানো ক্যারিয়ার ও কোটি টাকা থাকে!কিন্তু আপনার কাছে যৌবন নেই,আপনি তখন কোনটা বেছে নিবেন?আপসোস তখন কোটি টাকা দিয়ে ও আপনি চাইলে সে দিন গুলো ফিরে পাবেন না। যে দিনগুলো আপনি নিজে হত্যা করেছেন!আর সেটা বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা দিয়ে ও না।এমন এক করুন ইতিহাস আমার হসপিটালেই আছে,পড়াশোনা শেষ করতে,গাইনোকোলজিস্ট ডিগ্রী কমপ্লিট করতে এক বোনের বয়স দাঁড়িয়েছে ৩৪।এখন আর ভালো কোন সমন্দ না পেয়ে,ব্যক্তি জীবন নিয়ে খুব হতাশায় ভুগতেছেন।আচ্ছা কোন বিবেকবান পুরুষ কি উনাকে বিয়ে করতে রাজি হবে?,কারণ সে জানে তার যৌবন সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ বছর আছে?আহ আমি বুঝি না বিয়ের সাথে ক্যারিয়ারের কি সম্পর্ক?

 

 

প্রিয় বোন ভালোবাসার অর্থ কি আপনি কি তা জানেন?

ভালোবাসার অর্থ এটা নয়!বাবা-মায়ের সব আবদার পূরণ করতে গিয়ে নিজেকে বিলীন করে দেয়া।বরং এটা তো হটকারিতা!আপনি হয়তো বাবা মায়ের আবদার রাখতে গিয়ে উনাদের সাময়িক খুশি রাখতে পারবেন,কিন্তু চিরস্থায়ী ভাবে তাদের আল্লাহর রোষানলে ফেলবেন!তা কি আপনি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন ?

এই যে পড়াশোনার কারণে মাহরাম চাড়া আপনার এতদুর দিনের পরে দিন অবস্থান করা।যা স্পষ্ট শরীয়তের পরিপন্থী!আর একাকিত্ম এতগুলো বছর এ কাটিয়ে দেয়া,এ সময়টুকু কি আপনি আপনার চোখের হেফাজত করতে,নিজের যৌবন হেপাজত করতে পারবেন? তা-ও কি-না এই অপ্রতিরোধ্য ফিতনার জামানায় ?বুকে হাত দিয়ে বলেন পারবেন আপনি?আর যদি না পারেন,আপনার দ্বারায় যতগুলো খেয়ানত হবে,চোখের খেয়ানত,হাতের খেয়ানত,সামষ্টিক খেয়ানত,সব কিছুর গুনাহ সমান পরিমাণে আপনার বাবা-মায়ের আমল নামায় উঠবে এবং অনেক বেশি ।

আর যে বাবা,মা আপনার বিয়ে আঁটকে দিয়েছে পড়াশোনার কথা বলে। তিনি দিনশেষে আপনার সফলতা দেখে যেতে পারবে না।আর যা পাবে তা হলো এমন হটকারিতার কারণে কবরের শাস্তি যন্ত্রনা!

তাহলে এবার বলেন আমার বোন।আপনি আপনার বাবা মায়ের ইসলাম পরিপন্থী আবদার পূরণ করতে গিয়ে, সাময়িক খুশি করতে গিয়ে, আসলেই কি তাদেরকে জাহান্নামের কূপে ঠেলে দিচ্ছেন না ?তবে এটাই কি ভালোবাসার অর্থ?এটাতো ভালোবাসার অর্থ হতে পারে না। আর এটা জীবনের মানে ও হতে পারে না।

দেখেন দিনশেষে তাকে ঠিকই বিয়ে বসতে হয়,আর সেটা সঠিক সময় সঠিক বয়সে কেন নয়?আর বিয়ের সাথে পড়াশোনার ও কি সম্পর্ক।

মুমিন জীবনের প্রতিটি আমল, প্রতিটি কাজ, প্রতিটি চিন্তা-চেতনা, প্রতিটি চেষ্টা, সাধনা, প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসও প্রতিটি চলাফেরার পেছনে আল্লাহপাকের সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাঁর বান্দাহদেরকে কেবলমাত্র তাঁরই এবাদত বন্দেগি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,”আর আমি জ্বিন ও মানুষকে কেবলমাত্র এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত বন্দেগি করবে”।” (সূরা: যারিয়াত, আয়াত – ৫৬)।

আমি জানিনা আমার কথা গুলো কারো হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছাবে কিনা।তবে আল্লাহর কাছে খুব করে চাওয়া দুনিয়ায় চাহিদার জন্য কখনো যেন উনার অবাধ্য হতে না হয়।আল্লাহ আমাদের জীবনের সঠিক মানে বুঝার তৌফিক দিক।

আমার লিখা পড়ে আবার কেউ বলিয়েন না 🫢হুজুর হয়ে হাসেন কেন?হুজুর ও হাসতে পারে, তবে সীমালংঘন করে নয়।

সাইদুল ইসলাম সজীব
হুমাইরার খোঁজে এক ক্লান্ত পথিক
১৩.০২.২০২৩

Leave a Reply