You are currently viewing ডলার ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পতন নাকি বিশ্বযুদ্ধ?

ডলার ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পতন নাকি বিশ্বযুদ্ধ?

প্রতিটি জিনিসের শুরু এবং শেষ আছে। আছে উত্থান এবং পতন।কেউ শূন্য থেকে কোটিপতি আবার কেউবা কোটিপতি থেকে হয়ে যায় রাস্তার ভিখারি। এমন অনেক জাতি ছিল দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে চলে বেড়াতো।অনেক নেতা ছিল উচ্চ বিলাসী। কিন্তু কাল পরিক্রমায় তারাও হারিয়ে গেছে। শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায় তাদের আশ্রয় হয়েছে।এদের কাউকে স্মরণ করা হয় ভালোবাসা নিংড়ানো দোয়া দিয়ে। আবার কাউকে স্মরণ করা হয় চরম ঘৃণা নিয়ে।আদ, সামুদ, কওমে লুত,বর্বর মঙ্গলরা সহো এমন অনেক জাতি ছিল যারা ছিল সম্রাজ্যবাদী। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেসব জাতিকে ধ্বংস করে সভ্যতা কে নতুন করে গড়েছেন।ইতিহাসের পাতায় এখনো মানুষ তাদের ঘৃণা ভরে স্মরণ করে।বাস্তবিক ভাবে এ মানুষগুলো এবং জাতিগুলো ধ্বংসের জন্য তারা নিজেরাই দায়ী।মাত্রাতিরিক্ত জুলুম-অত্যাচারের কারণে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছি।

নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো জুলুম করেন না, মানুষই নিজেদের প্রতি জুলুম করে থাকে। (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৪৪)

প্রিয় ভাই ও বোনেরা কথা হচ্ছিল সম্রাজ্যবাদীদের কে নিয়ে।আজ আমারা কথা বলবো আমাদের শতাব্দীর অন্যতম এক মোড়ল রাষ্ট্র ডলার ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জনক আমেরিকাকে নিয়ে।আর এ আমেরিকাকে সাম্রাজ্যবাদী হিসেবে তৈরি করতে সবচেয়ে বড় অবদান কিন্তু ডলার ভিত্তিক অর্থনিতির।

দ্বিতীয় বি* শ্ব*যু দ্ধে সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যাদের তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। তারা বরং সব দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ তখন তাদের কাছেই ছিল। তার উপর ভিত্তি করে ডলারের মূল্য নির্ধারণ হয়। সে সময় ৪৪টি দেশ ডলারকে বৈদেশিক বাণিজ্যের মুদ্রা হিসেবে ব্যবহারে সম্মত হয়। সেটাই ছিল মুদ্রাবাজারে ডলারের আধিপত্যের শুরু।
পরবর্তিতে ডলারের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ও চাহিদা বাড়াতে ১৯৭১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ঘোষণা করেন যে, স্বর্ণের উপর ভিত্তি করে আর ডলারের মূল্য নির্ধারণ হবে না। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে এক চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, সৌদিআরব আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারে তেল বিক্রি করবে, প্রতিদানে মার্কিনিরা তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। ১৯৭৫ সালে তেল উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশও একই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এভাবেই ডলার বিশ্বে তার একক আধিপত্য তৈরি করে। যে কর্তৃত্ব আজও অব্যাহত।

বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিনিদের একক আধিপত্যের অন্যতম বড় অস্ত্র হচ্ছে, ইউএস ডলার । মারণাস্ত্রের চেয়ে এটি কোনও অংশেই কম নয়। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে তা আবার প্রমাণ হলো। পুতিনের মতে, সর্বাত্মক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা একপ্রকার যুদ্ধই। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এ অস্ত্র মার্কিনিরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে।এর আগে অসংখ্যবার আমেরিকা অনেক গুলো দেশের সাথে এ অস্ত্র ব্যবহার করেছে।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো। ইরান, ইরাক,আফগানিস্তান,নিকট সময়ে রাশিয়া। ২০১৯ সালে ইরানি রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানি মন্তব্য করেন যে, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধে’র কারণে বিগত দুই বছরে ইরানের ২০০ বিলিয়ন (বা ২০,০০০ কোটি) মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আপনারা জানেন অর্থনীতি ইশু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যার মাধ্যমে বিশ্ব শাসন করা যায়।যার বাস্তব প্রমাণ আমেরিকা ডলার ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণেই আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদীদের কাতারে একদম প্রথমে আছে!!তার উপর ভিত্তি করে আমেরিকার মতের অমিল হলেই! লো লেভেলের কান্ট্রি থেকে শুরু করে তাদের সমমনা রাষ্ট্রগুলোকে অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে অনেক নাকানি-চুবানি দিয়েছে।

ডলার ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পতন একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ।

আমেরিকার এমন নজিরবিহীন কাজের পর তখন থেকেই ডলার ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিকল্প অর্থনীতি অনেকগুলো রাষ্ট্রই তৈরি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে!! বিশেষ করে ইউক্রেনে ইশু নিয়ে আমেরিকা যখন রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ দেয় তখন বিষয়টা আরও ঘোলাটে হয়ে গেছে। রাশিয়া অলরেডি ডলারের বিকল্প অর্থনৈতিক সিস্টেম চালু করে দিয়েছে!সাথে আছে চায়নার মতো শক্তি সালি রাষ্ট!!

রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ ও ইউক্রেইনকে সহযোগিতার করার কারণে রুশ প্রশাসন একটি অবন্ধু দেশের তালিকা প্রকাশ করে। সে সময় তারা ঘোষণা করে যে, রাশিয়ার কাছ থেকে যে সব তেল-গ্যাস কিনবে তাদেরকে অবশ্যই রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তাদের এ ঘোষণা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য ছিল কল্পনাতীত। অবরোধের শুরুতে রুবলের মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে গেলেও- রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তের ফলে রুবলের মান পূর্বের স্থানে চলে আসে। ফলে রুবল ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং বর্তমানে তা উর্দ্ধমুখী। রাশিয়া প্রতিমাসে পশ্চিমা দেশগুলোতে ৩০ বিলিয়ন ইউরোর জ্বালানি বিক্রি করে। তাদের শর্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ইউরোপকে এ অর্থ রুবলে পরিশোধ করতে হবে। ইতোমধ্যে জার্মানিসহ ইউরোপের ৪টি দেশ রুবলেই তাদেরকে দাম পরিশোধের ঘোষণা দিয়েছে। রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধও করে দিয়েছে রাশিয়া।

চীন-রাশিয়া কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি বৈশ্বিকমুদ্রা চালুর কথা বলছে। চীন-সৌদি আরব ইউয়ান ব্যবহার নিয়ে অনেকদিন ধরে আলাপ চালিয়ে আসছে। সেটা না হলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে রুবল, ইউয়ান প্রবেশ করছে। কেননা আইএমএফ ইতিমধ্যে ইউয়ানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এগুলো নিশ্চয়ই ডলারের জন্য সুখবর নয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে ইউএস ডলার একক মুদ্রা হিসেবে যে আধিপত্য ছিল তা ক্রমশ খর্ব হতে চলেছে। বলা হয়ে থাকে, ১৯২০ সালে ব্রিটিশ পাউন্ড বিশ্বে তার একক আধিপত্য হারানোর পূর্বে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বর্তমানেও অনেকটা সে অবস্থা বিরাজ করছে। মার্কিনিরা যুগযুগ ধরে দুর্বল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়ে যে ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়েছেন, এখন কি পারবেন এই বৃহৎ পরাশক্তিদের অবজ্ঞা করতে?

এই যুদ্ধ সহসাই শেষ হচ্ছে না বলেই ইতোমধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ন্যাটো মহাসচিবসহ অনেকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য এ যুদ্ধ আরও কয়েক বছর দীর্ঘ হতে পারে। সেটা হলে বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠবে। তারমধ্যে একটি ডলারের বিকল্প মুদ্রার প্রচলন। কারণ রাশিয়া তার বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তার নিজস্ব মুদ্রা নিয়ে অগ্রসর হবে এবং রুবল সহসাই ডলারের বিকল্প না হয়ে উঠতে পারলেও- বিশ্ববাণিজ্যে স্থান করতে পারলে তাতেই বা কম কি?

ধরুন একবার যদি ডলারের বিকল্প অর্থনিতি প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে পারমাণবিক যুদ্ধ একেবারে সুনিশ্চিত!কারণ ডলার ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পতন হয়ে গেলে আমেরিকার পতন কেউ ঠেকাতে পারবেনা এবং বিপরীতে আমেরিকা কর্তৃক পারমাণবিক হামলা ও কেউ বন্ধ করতে পারবে না!!যদি একবার পারমাণবিক হামলা হয় তার পরের ঘটনা সবার জানা!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ডলারের পতন কি সম্ভব। হ্যাঁ অবশ্যই সম্ভব হলো আগামী পর্বে!!ততক্ষণ পর্যন্ত ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন সাবস্ক্রাইব করুন Akhirujjaman ইউটিউব চ্যানেল

Leave a Reply