You are currently viewing শয়তানের (Satan) উপাসনা করাও কি একটা ধর্ম?

শয়তানের (Satan) উপাসনা করাও কি একটা ধর্ম?

শয়তানের (Satan) উপাসনা করাও কি একটা ধর্ম? কোন ধর্মে শয়তানের পূজা / আরাধনা করা হয়?

========================================================

হ্যাঁ, আধুনিক মানুষের মধ্যে প্রকৃত ধর্মের আলোচনা না থাকলে তারা এক সময়ে খুব সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং নিকৃষ্ট পর্যায়ে চলে যায়। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে শয়তান খুব খুশী যেহেতু কিছু মানুষ তাকে ঈশ্বর মনে করে সরাসরি উপাসনায় লেগে গেছে, শয়তান এতটা আশা করেনি।

স্যাটানিজম বা শয়তানের উপাসনা একটা মানুষ স্বীকৃত ধর্ম যারা কালো যাদু, নিকৃষ্ট নিষিদ্ধ যৌনাচার, উগ্র মিউজিক, ড্রাগ সহ বিভিন্ন ধরনের খারাপ ক্রিয়াকালাপের চর্চা করে, আমেরিকা সহ কিছু দেশে তাদের মন্দির আছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে স্যাটানিস্ট ধর্মে অনুপ্রাণিত লোকের সংখ্যা ১৫ লক্ষ এবং বেশিরভাগ উপাসনাকারীই রাশিয়া, আমেরিকা ও ম্যাক্সিকোতে বসবাস করে।

আল্লাহর বান্দাদের উপর শয়তানের এমন কোন ক্ষমতা নেই যে সে বান্দাদের খারাপ কাজ করতে বাধ্য করতে পারে। সে কেবল মানুষকে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দিতে পারে। যারা শয়তানের কুমন্ত্রণার অনুসরণ করে, শয়তানের পথে চলে, তারা পথভ্রষ্ট হয়। এ টুকু ক্ষমতাই কেবল শয়তানের আছে। পবিত্র কোরআনে ‘শয়তান’ (এক বচন) শব্দটি ৬৩ বার আর ‘শায়াতিন’ (বহু বচন) শব্দটি ১৮ বার উল্লেখ করা হয়েছে।

পৃথিবীতে শয়তান মুমিনের প্রধান শত্রু। কোরআনের অসংখ্য স্থানে আল্লাহ শয়তান সম্পর্কে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’

(সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৮)

সব মানুষের সঙ্গে শয়তান আছে। মহানবী (সাঃ) বলেন,

“তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে জিন এবং ফেরেশতাদের মধ্য থেকে কাউকে সঙ্গী নিযুক্ত করা হয়নি।’ সাহাবারা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সঙ্গেও কি জিন সঙ্গী নিযুক্ত আছে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, আমার সঙ্গেও আছে। তবে আল্লাহ তাআলা তার ওপর আমাকে বিজয়ী করেছেন, ফলে সে আমার অনুগত হয়ে গেছে। সে আমাকে কল্যাণকর কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজের পরামর্শ দেয় না।”

(সহিহ মুসলিম)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’

(সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৮)

আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের অঙ্গ, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়। সে বলল, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের এ গাছ থেকে নিষেধ করেননি, তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও কিংবা হয়ে যাও এখানে চিরকাল বসবাসকারী। সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বলল, আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী।’

(সুরা আরাফ, আয়াত : ২১-২১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেবো অনন্তকাল জীবিত থাকার গাছের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ১২০)

মন্দ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ : শয়তান মানুষের সামনে অশ্লীল ও খারাপ জিনিসকে আকর্ষণীয় ও উত্তম হিসেবে পেশ করে। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই সে (শয়তান) তোমাদের মন্দ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়। আর যেন তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে এমন কথা বলো যা তোমরা জানো না।’

(সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৯)

মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস ও প্রবঞ্চনা দ্বারা পথভ্রষ্ট করা এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত করা শয়তানের অন্যতম কাজ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা আশ্বাস দেব, তাদের নির্দেশ দেব, যার ফলে তারা পশুর কর্ণ ছেদ করবে এবং তাদের নির্দেশ দেব ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৯)

শয়তান মানুষকে বশীভূত করে নিজেদের দলভুক্ত করে নেয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘শয়তান তাদের বশীভূত করে নিয়েছে। অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত।’

(সুরা মুজাদালা, আয়াত : ১৯)

শয়তান আদম সন্তানের ওপর স্বীয় প্রভাব বিস্তার করে। এতে সে নানাভাবে প্রভাবিত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,

“নিশ্চয়ই আদম সন্তানের ওপর শয়তানের একটি প্রভাব রয়েছে। অনুরূপ ফেরেশতারও একটি প্রভাব রয়েছে। শয়তানের প্রভাব হলো, অকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যকে মিথ্যায় প্রতিপন্ন করা। আর ফেরেশতার প্রভাব হলো, কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা।

সুতরাং যে ব্যক্তি কল্যাণের অবস্থা উপলব্ধি করে সে যেন জেনে রাখে, এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়েছে। কাজেই তার উচিত আল্লাহর প্রশংসা করা। আর যে ব্যক্তি অকল্যাণের অবস্থা উপলব্ধি করে, সে যেন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়াতটি পাঠ করে, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়”।

(সুনানে তিরমিজি)

শয়তান আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ ও চলাফেরা করে আদম সন্তানকে পথহারা করে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে।’

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৮৮)

আল্লাহ যখন শয়তানকে জান্নাত থেকে বের করে দেন তখন সে চারটি বিষয়ের আবেদন করে। তা হলো-

১. আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত জীবন লাভ। আল্লাহ তার এ প্রার্থনা কবুল করেন। আল্লাহর বাণী, ‘ইবলিস বলল, আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত সুযোগ দিন, আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি সুযোগপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫)

২. আমার জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এ আবেদনও কবুল করা হয়।

৩. আমাকে মানুষের দৃষ্টিশক্তির অন্তরাল হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এটিও কবুল করা হয়।

৪. আমি যেন মানবদেহের শিরা-উপশিরায় চলাচল করতে পারি। এ দোয়াও কবুল করা হয়।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান আদমসন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৭৪)

শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার বিভিন্ন ধরনের আমল কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন—

১) আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করাঃঃ

আল্লাহ বলেন, ‘যখন কোরআন পাঠ করো তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো (আউজুবিল্লাহ পাঠ করো)।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৮)

অনুরূপ সুবহানাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ, আল্লাহ আকবার, আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি পাঠের কথাও এসেছে।

২) কাজেকর্মে সতর্কতাঃ মহানবী (সা.) বলেন, ‘সূর্যাস্তের পর আধাঘণ্টা পর্যন্ত ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখবে এবং বাচ্চাদের ঘরের বাইরে যেতে দেবে না। কারণ এ সময় শয়তান চলাচল করে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি)

মুক্তির একমাত্র পথ হিসেবে ইসলাম ধর্মকেই মনোনীত করা হয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন, إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ

অর্থ: ‘আল্লাহর নিকট মনোনিত ধর্ম একমাত্র ইসলাম’। (সূরা আলে ইমরান: ১৯)

(ছবিতে শয়তানের উপাসকেরা শয়তানের বেশ [চলনে, বলনে, কাজে ] ধরেছে, আর আমরা আল্লাহর উপাসক হয়েও আল্লাহর পছন্দনীয় পথে চলতে পারলাম না )

PC — Rooh Ibn Muhammad

Leave a Reply