You are currently viewing শেষ যুগে ইসলাম সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে এমন ইঙ্গিত কোর’আনেও আছে, হাদীসেও আছে।

শেষ যুগে ইসলাম সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে এমন ইঙ্গিত কোর’আনেও আছে, হাদীসেও আছে।

শেষ যুগে ইসলাম সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে এমন ইঙ্গিত কোর’আনেও আছে, হাদীসেও আছে। হাদীসে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মধ্যে গাজওয়ায়ে হিন্দ বা হিন্দের যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও চিত্তাকর্ষক বিষয়। ভারত উপমহাদেশে ইসলামের উত্থানকামী প্রতিটি আন্দোলনই এই যুদ্ধের মহিমা সম্পর্কে সচেতন। আল্লাহর রসুল গাজওয়ায়ে হিন্দের শহীদদেরকে বদর যুদ্ধের শহীদদের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং তাঁর প্রিয় সাহাবি আবু হোরায়রা আকুল আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য। আমাদের প্রত্যেকেরই এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার মানসিকতা রাখা জরুরি। “

গাজওয়াতুল হিন্দ” সম্পর্কে ৫টি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি।

(১) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘আল্লাহর রসুল (সা.) আমাদের থেকে গাজওয়াতুল হিন্দ (হিন্দুস্তানের যুদ্ধ) করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কাজেই আমি যদি সেই যুদ্ধের নাগাল পেয়ে যাই, তাহলে আমি তাতে আমার জীবন ও সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে ফেলব। যদি নিহত হই, তাহলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হব। আর যদি ফিরে আসি, তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব”। (সুনানে নাসায়ী, খ- ৬, পৃষ্ঠা ৪২)

(২) সাওবান (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের দুটি দল এমন আছে, আল্লাহ যাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন। একটি হল তারা, যারা গাজওয়াতুল হিন্দ (হিন্দুস্তানের যুদ্ধ) করবে, আরেক দল তারা যারা ঈসা ইবনে মারিয়ামের সঙ্গী হবে। (সুনানে নাসায়ী, খ- ৬, পৃষ্ঠা ৪২)

(৩) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ (সা.) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, অবশ্যই আমাদের একটি দল গাজওয়াতুল হিন্দ (হিন্দুস্তানের যুদ্ধ) করবে, আল্লাহ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন, আর তারা রাজাদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে। এবং আল্লাহ সেই যোদ্ধাদের গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) কে শাম দেশে (বর্তমান সিরিয়ায়) পাবে”।

(৪) আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, “আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন ও পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম । যখন আল্লাহ আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম, তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম; যে কিনা সিরিয়ায় হযরত ঈসা (আ.) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত। ও মুহাম্মাদ (সা.)! সেটা আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আ.) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম, আমি তাকে বলতে পারতাম যে আমি মুহাম্মাদ (সা.) এর একজন সাহাবী”। বর্ণনাকারী বলেন যে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ ‘খুব কঠিন, খুব কঠিন’। (আল ফিতান, খ- ১, পৃষ্ঠা ৪০৯)
কা’ব (রা.) বর্ণিত, রসুলাল্লাহ (সা.) বলেন: “জেরুসালেমের [বর্তমান ফিলিস্তিন] একজন রাজা তার একটি সৈন্যদল হিন্দুস্তানের দিকে পাঠাবেন, যোদ্ধারা হিন্দের ভূমি ধ্বংস করে দিবে, এর অর্থ-ভা-ার ভোগদখল করবে, তারপর রাজা এসব ধনদৌলত দিয়ে জেরুসালেম সজ্জিত করবে, দলটি হিন্দের রাজাদের জেরুসালেমের রাজার দরবারে উপস্থিত করবে, তার সৈন্যসামন্ত তার নির্দেশে পূর্ব থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল এলাকা বিজয় করবে, এবং হিন্দুস্তানে ততক্ষণ অবস্থান করবে যতক্ষণ না দাজ্জালের ঘটনাটি ঘটে”। (ইমাম বুখারী (র.) এর উস্তাদ নাঈম বিন হাম্মাদ (র.) এই হাদিসটি বর্ণনা করেন তার ‘আল ফিতান’ গ্রন্থে। এতে, সেই উদ্ধৃতিকারীর নাম উল্লেখ নাই যে কা’ব (রা.) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছে)

(৫) সাফওয়ান বিন উমরু (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, “আমার উম্মাহর একদল লোক হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তাদের সফলতা দান করবেন, এমনকি তারা হিন্দুস্তানের রাজাদেরকে শিকলবদ্ধ অবস্থায় পাবে। আল্লাহ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন। যখন তারা সিরিয়া ফিরে যাবে, তখন তারা ঈসা ইবনে মারিয়ামকে (আ.) এর সাক্ষাত লাভ করবে”। (আল ফিতান, খ- ১, পৃষ্ঠা ৪১০)
এখানে রাসুল (সা.) এর বর্ণিত তৎকালীন হিন্দুস্তানের সীমারেখা বর্তমান ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।

গাজওয়াতুল হিন্দ হল রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক ভবিষ্যৎ বাণীতে বর্ণিত ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে ভবিষ্যৎ এর চূড়ান্ত যুদ্ধ। যাতে মুসলিমরা চুড়ান্ত ভাবে জয় লাভ করবে।
গাযওয়াতুল হিন্দ বা হিন্দুস্তানের চূড়ান্ত যুদ্ধের শহীদরা বদর অথবা ওহুদের যুদ্ধের শহীদদের মত মর্যাদা পাবে।এই যুদ্ধে মোট মুসলিমদের এক তৃতীয়াংশই শহীদ হবে, আরেক অংশ পালিয়ে যাবে আর শেষ অংশ জিহাদ চালিয়ে যাবে। মুসলমানদের জয় হবে কিন্তু এটা এতোটাই ভয়াবহ যে হয়তো অল্প কিছু সংখ্যক মুসলিমই বেঁচে থাকবেন, বিজয়ের খোশ আমদ করার জন্য।“গাযওয়াতুল হিন্দ” বলতে ইমাম মাহদি(আঃ) এবং ঈসা(আঃ) এর আগমনের কিছুকাল
আগে অথবা সমসাময়িক সময়ে এই পাক-ভারত-
বাংলাদেশে মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যকার সংগঠিত যুদ্ধকে বুঝায়।

“গাযওয়া” অর্থ যুদ্ধ, আর “হিন্দ” বলতে এই
উপমহাদেশ তথা পাক-ভারত-বাংলাদেশসহ
শ্রীলঙ্কা,নেপাল,ভুটানকে বুঝায় এবং বর্তমানে এই অঞ্চলের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আমাদেরকে সেই গন্তব্যের
দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহু আ’লাম। একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত আরতা হলো রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর প্রতিটি কথা সত্য এবং গত ১৪০০ বছরের ইতিহাস সেই সাক্ষী বহন
করে চলেছে।

রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর কথা অনুযায়ী খোরাসান (বর্তমান আফগানিস্থান) থেকে কালিমাখচিত কালোপতাকাধারীদের উত্থান এবং তাদের কাশ্মীর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া, পূর্ব
প্রস্তুতি হিসেবে ভারতের কাশ্মীর সীমান্তে ৭ লক্ষ সেনা মোতায়েন, পাক-ভারত-বাংলাদেশের হকপন্থী ইসলামী দলগুলোর আলোচনায় উঠে আসা, পানি নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং মুসলিমদের নির্যাতন নিয়ে ভারতের ভেতরে মুসলিমদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ, সেভেন সিস্টারস তথা ভারতের ৭ টি অঙ্গরাজ্যের স্বাধীনতার দাবি নিঃসন্দেহে ভারত বিভক্তির ইঙ্গিত বহন করে।

সে সময় অবশ্যই পাক-ভারত-বাংলাদেশের মুসলিম নামধারী মুনাফিকরা আলাদা হয়ে যাবে।তারা হইতো কাফিরদের পক্ষে যোগ দিবে অথবা পালিয়ে বেড়াবে। এবং এই ভয়ঙ্করযুদ্ধে মুসলিমরা জয়ী হবে এবং তারা বায়তুল মুকাদ্দাস(বর্তমান ফিলিস্তিন) এ গিয়ে ঈসা(আঃ) এর সাথে মিলিত হবে এবং খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করবে।

মহান আল্লাহ্ বলেন,
“হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন
জিহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন
দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শর
মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের
মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার
কাফিরের উপর থেকে তার কারণ
ওরা জ্ঞানহীন।” (আল আনফালঃ৬৫)

প্রকৃত সময় এবং অবস্থা একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানু তায়ালাই জানেন। আমরা কেবলমাত্র হাদিসের আলোকে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ঘটনা সম্পর্কে নিজেদেরকে সচেতন এবং প্রস্তুত করতে পারি। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে সহিহ বুঝ দান করুন,ক্ষমা করুন,মুনাফিকি থেকে হিফাজত করুন এবং তার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

This Post Has One Comment

  1. আলহামদুলিল্লাহ

    যাজাকাল্লাহু খাইরান , অনেক সুন্দর করে ব্লগটি উপস্তাপন করলেন । আল্লাহ যেনো আমাদের সবাইকে অংশ গ্রহন করার তাওফিক দান করেন আমিন ।

Leave a Reply